<p>সরকারি খাতের ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জুলাই মাসে। ২৫ হাজার শ্রমিককে অবসরে পাঠানো হয়েছে। এখন সরকার আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণে কাজ করছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকল ও সম্পত্তির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন নীতিনির্ধারণী কমিটি গঠন করে এ কাজ করা হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলোর জমি কোনোভাবেই যেন বিক্রি না করা হয় সে জন্য পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বস্ত্র ও পাট এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।</p> <p>এ ব্যাপারে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ‘বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকল সম্পর্কে আমরা প্রেস রিলিজ দেব। তখন জানতে পারবেন সব বিষয়।’</p> <p>২৫ পাটকল চালু রেখে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিলে ভালো হতো কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।</p> <p>বিজেএমএর সভাপতি এবং সরকার গঠিত নীতিনির্ধারণী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পাটকলগুলোর সম্পত্তি নিয়ে এখনো কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। তবে পাটকলগুলো চালু রেখে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করা যেত না। কারণ প্রাইভেট-পাবলিক প্রতিযোগিতা আছে। আর পাটকলগুলো প্রতিবছর লোকসান দিচ্ছে। তাই এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। দায়-দেনামুক্ত করেই পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে দিতে হবে।’</p> <p>সূত্র মতে, গত ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫ পাটকলের উত্পাদন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাটগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে বিদায় করা হয়। এতে বেকার হয়ে যায় ২৫ হাজার শ্রমিক। ২৫ পাটকল বন্ধ করে এবার সরকার আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখতে নজর দিয়েছে। এ জন্য সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে।</p> <p>নীতিনির্ধারণী কমিটি মোট সাতটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছে। এগুলো হলো কমিটি বহুমুখী পাটপণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখতে পাট সুতা ও কাপড়ের মতো কাঁচামাল অভ্যন্তরীণভাবে তৈরির উপযোগী দীর্ঘমেয়াদি নীতি-কৌশল নির্ধারণ করবে। বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫ পাটকলের মধ্যে যেগুলো চালু করা সম্ভব সেগুলো চিহ্নিত করবে। সরকারি মালিকানা ও স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে চিহ্নিত পাটকলগুলো চালু করার উদ্যোগ ও পদ্ধতি নির্ধারণ করবে কমিটি। এ ক্ষেত্রে পিপিপি বা যৌথ উদ্যোগ (জি টু জি কিংবা ভাড়াভিত্তিক লিজ) দেওয়া হতে পারে।</p> <p>কমিটি বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকল এবং বিজেএমসির অব্যবহৃত জমি ও অনুরূপ সম্পত্তির যথোপযুক্ত উত্পাদনশীল খাতে ব্যবহারে সুপারিশ করবে। বর্তমান সরকারের আমলে উদ্ঘাটিত পাটের জিনোম সিকোয়েন্সের কার্যকর প্রায়োগিক ব্যবহারের মাধ্যমে পাটবীজ ও কাঁচা পাটের মানোন্নয়নে সুপারিশ করবে সরকার গঠিত কমিটি।</p> <p>বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলোর সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিলের যন্ত্রপাতি যাতে নষ্ট না হয় এবং মিলগুলো দ্রুত চালুর তাগিদ দিয়েছেন। পাশাপাশি মিলগুলো দ্রুত উত্পাদনে ফিরিয়ে আনতে ভাড়াভিত্তিক লিজ কার্যক্রমে প্রধানমন্ত্রী সায় দিয়েছেন।</p> <p>গত মাসের শেষের দিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সভাপতিত্বে অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের তিন সচিবসহ এফবিসিসিআই সভাপতি, বিজেএমএ, বিটিএমসিকে নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ‘কোনো অবস্থাতেই মিলের জমি বিক্রি করা যাবে না। ভাড়াভিত্তিক ইজারার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণের সুবিধার্থে মেয়াদ যথাসম্ভব বাড়াতে হবে। মিলগুলোতে থাকা কাঁচামাল, তৈরি পণ্য, যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সম্পত্তির দ্রুত ইনভেন্টরি সম্পন্ন করতে হবে।’</p>