<p>কাগজের নোটে করোনার ঝুঁকি রয়েছে। তাই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এখন তাদের গ্রাহকদের এটিএম ও ডিজিটাল লেনদেনে উৎসাহিত করছে। বেশির ভাগ ব্যাংকই গ্রাহকদের মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তথা স্মাট অ্যাপ, এটিএম এবং ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করার অনুরোধ করেছে। ডিজিটাল লেনদেনে গ্রাহকদের উৎসাহিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে করোনার কারণে ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার ক্ষেত্রে কার্ডভিত্তিক লেনদেনে কোনো ধরনের চার্জ না কাটার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে গ্রাহকরাও কার্ডভিত্তিক লেনদেনে আগ্রহী হচ্ছেন।</p> <p>সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি ট্রানজেকশনে দোকানদারের কাছ থেকে একটা চার্জ কাটা হয়, যাকে মার্চেন্ট ডিসকাউন্ট রেট (এমডিআর) বলা হয়। এটা মার্চেন্ট সার্ভিস চার্জ (এমএসএফ) নামেও পরিচিত। পস মেশিন সরবরাহকারী ব্যাংকে এই চার্জ দিতে হয়।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/03.March/25-03-2020/kalerkantho-ib-1a.jpg" style="float:left; height:153px; margin:12px; width:300px" />অন্যদিকে প্রতিটি ট্রানজেকশন থেকে কার্ড ইস্যুয়িং ব্যাংকেও একটা চার্জ দিতে হয়, যা ইন্টারচেঞ্জ রিইমবার্সমেন্ট ফি (আইআরএফ) নামে পরিচিত। এই চার্জটা পস মেশিন সরবরাহকারী ব্যাংক থেকে কার্ড ইস্যুয়িং ব্যাংক পেয়ে থাকে। অর্থাৎ এটা কাস্টমারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নয়।</p> <p>তার পরও কাস্টমারের কাছ থেকে দোকানিরা এই চার্জ আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন অবস্থায় করোনার কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের এক সার্কুলারে এমডিআর ও আইআরএফ চার্জ না কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়।</p> <p>ওই সার্কুলারে বলা হয়, দেশের অভ্যন্তরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং ওষুধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা এবং মাসিক সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার লেনদেনের ক্ষেত্রে সীমা প্রযোজ্য হবে না। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর দাবি, কেবল জুয়েলারির মোবাইল এবং ইলেকট্রনিকস আইটেম পণ্যের ক্ষেত্রে দোকানিরা এমডিআর চার্জটা কাস্টমার থেকে আদায় করে। আর ওষুধের দোকান বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্টোরে কেনাকাটায় কাস্টমার থেকে এমডিআর নামে কোনো চার্জ কাটা হয় না।</p> <p>সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের প্রধান মো, শফিউল আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে এমডিআর কাস্টমার থেকে নেওয়ার কোনো প্রচলনই নেই। তার পরও করোনার সময়ে এটা কোনো না কোনো দোকানদার করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সার্কুলারটা ইস্যু করেছে, যাতে ব্যাংকগুলো মার্চেন্ট থেকে এই চার্জটা না নেয়। ফলে দোকানদারও গ্রাহক থেকে এই চার্জ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপ অবশ্যই সময়োপযোগী। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।</p> <p>সাউথইস্ট ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের প্রধান আব্দুস সবুর খান কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সার্কুলারের ফলে গ্রাহকের মধ্যে চার্জ কেটে নেওয়ার শঙ্কা আর থাকবে না। কারণ ব্যাংকগুলো দোকানি থেকে আপাতত এই চার্জ নেবে না। ফলে দোকানিরও এই চার্জ কাটার প্রয়োজন হবে না। এটা অবশ্যই ভালো পদক্ষেপ।</p> <p>ইউসিবি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী মো. ইসমাইল কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই সার্কুলারের কথা আমি শুনেছি। এটা অবশ্যই ভালো পদক্ষেপ। এর ফলে কার্ডভিত্তিক লেনদেনে উৎসাহিত হবে। তবে এটা শুধু নির্দেশনার মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে, সেটাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিশ্চিত করতে হবে।</p> <p>এদিকে করোনার ঝুঁকি এড়াতে এনএফসি সুবিধাযুক্ত কার্ডের লেনদেন সীমা তিন হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধ বিক্রয়কারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ ব্যক্তিগত হিসাব, এসএফএস হিসাব, এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাব ও পিএসপি হিসাবকে ব্যাবসায়িক লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা যাবে। এনএফসি সুবিধাযুক্ত কার্ডের বৈশিষ্ট্য হলো—এটা পস মেশিনে ঢোকানোর প্রয়োজন হবে না, পস মেশিনের সামনে নির্দিষ্ট দূরত্বে রেখেই পেমেন্ট করা যায়। এরই মধ্যেই ইবিএল, সিটি ব্যাংক, ইউসিবি, মিউচুয়াল ট্রাস্টসহ আরো কিছু ব্যাংক এই প্রযুক্তির কার্ডসেবা চালু করেছে।</p>