<p>ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। তাই রাজস্ব বাজেট থেকে ভর্তুকি দিয়ে সুদের হার নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এ ছাড়া করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমিয়ে আনা, করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ টাকা করাসহ ভ্যাট আইনের ক্ষেত্রে ১০টি প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই।</p> <p>গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির বৈঠকে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। এনবিআর এবং এফবিসিসিআই যৌথ উদ্যোগে এ বৈঠকের আয়োজন করে।</p> <p>এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতের শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর এসডিজিবিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ ও এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ ব্যবসায়ী নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>বাজেট প্রস্তাবে সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ আরো জোরদার করতে হবে। বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় করতে ব্যবসা খরচ কমিয়ে আনা জরুরি। এ জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগ সুরক্ষা, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যাংকঋণের সুদের হার কমানো, পরিবহন খরচ কমানো ও বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে বিশেষ নজর দিতে হবে।</p> <p>বড় আকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া, বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় তিনি এনবিআরে বাজেটনীতি সমন্বয় নামে একটি সেল ও একজন সদস্যকে প্রধান করে বাজেটনীতি সমন্বয় নামে একটি পৃথক অনুবিভাগ চালুর প্রস্তাব করেন। পাশাপাশি এনবিআরে শুল্ক ও কর যৌক্তিকীকরণ কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ট্যাক্স, ট্যারিফ এবং ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন নামক একটি পৃথক উইং স্থাপনের সুপারিশ করেন।</p> <p>সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আমানত এবং ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি ও দক্ষতার মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ প্রদান বন্ধ করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যদিকে ঋণের উচ্চ সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। প্রয়োজনে রাজস্ব বাজেট থেকে ভর্তুকি দিয়ে সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বর্তমানে তারল্য ঘাটতির কারণে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ অনুমোদন হওয়া সত্ত্বেও টাকা দিতে পারছে না। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।</p> <p>ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ পুনর্গঠণের সুবিধা চেয়েছে এফবিসিসিআই। সফিউল ইসলাম বলেন, ‘যারা বেশি ঋণ নিয়েছিল তাদের ব্যাংক ৫ শতাংশ ফিক্সড করে ২০ বছরে ঋণ পুনর্গঠণের সুবিধা দিয়েছে। যাদের এক লাখ, পাঁচ লাখ বা ১০ কোটি টাকা আছে তাদের কেন এ সুবিধা দেওয়া হবে না? ক্ষুদ্র, মাঝারি ও সব স্তরের ব্যবসায়ীদের কাছে এ সুবিধা পৌঁছাক তা আমরা চাই।’</p> <p>ঋণখেলাপি কমিয়ে আনতে তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পায়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে দক্ষ সঞ্চালন, বিতরণ ও সাবস্টেশন ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকতে হবে। যাতে ব্যবসায়ীরা তাদের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে। এতে ঋণখেলাপির পরিমাণ কমবে।</p> <p>সব রপ্তানি পণ্যে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই। সফিউল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে প্রদত্ত প্রণোদনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের আনুষ্ঠানিকতার কারণে ব্যবসায়ীরা এর সুফল ভোগ করতে পারছে না। প্রণোদনার মাধ্যমে টেক্সটাইল, ফার্নিচার ও ওষধশিল্প যেভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছেছে, সব রপ্তানি পণ্যে একইভাবে উন্নয়ন করতে হলে সহজীকরণ করতে হবে।</p> <p>এফবিসিসিআইয়ের এ দাবি মেনে নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, সব রপ্তানি পণ্যেই কিছু না কিছু প্রণোদনা দেওয়া হবে। মন্ত্রীর বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও প্রায় একই কথা বলেন।</p> <p>নতুন ভ্যাট আইনে ১০টি প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই। ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা নির্ধারণ, সব ধরনের কম্পানির করপোরেট ট্যাক্স আড়াই শতাংশ হ্রাস, সারচার্জ বা সম্পদ করের সীমা সোয়া দুই কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন কোটি নির্ধারণ, আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার, শুল্কস্তর পরিবর্তন, টার্নওভার ট্যাক্সের সীমা বাড়িয়ে করহার আগের মতো ৩ শতাংশ বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে। আগামীতে ভ্যাট আইনে ট্যারিফ ভ্যালুর পরিবর্তে ভ্যাটের হার নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়।</p> <p>প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমান সরকার নিজেরা ব্যবসায় আগ্রহী নয়। সরকারি এবং বেসরকারি খাতের সম্মিলিত উদ্যোগেই তিনি শক্তিশালী একটি অর্থনীতি গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আগামী বাজেটে আরো সংস্কার ও ইতিবাচক দিকনির্দেশনা থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।</p>