<p>দেশের জাতীয় রপ্তানিতে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে টানা তৃতীয়বারের মতো স্বর্ণপদক পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ইপিজেডে অবস্থিত প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপ। এর আগের দুবার স্বর্ণ ও রোপ্যপদক পেলেও এবার প্রথমবারের মতো ইপিজেড ক্যাটাগরিতে স্বর্ণ, রোপ্য এবং ব্রোঞ্জ তিনটি পদকই পেয়েছে জিন্স রপ্তানিতে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্ এই কম্পানিটি। নতুন বছরের প্রথম দিন ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ট্রফি প্রদান করবেন।</p> <p>রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র জানায়, ইপিজেড ক্যাটাগরিতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জাতীয় রপ্তানিতে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল জিন্স লিমিটেড। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানেও আছে যথাক্রমে একই গ্রুপের জিন্স ২০০০ লিমিটেড এবং প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড। ইউনিভার্সাল জিন্স লিমিটেড এর আগে গত ২৮ আগস্ট জাতীয় রপ্তানিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ২০১১-২০১২ এবং ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের জন্য স্বর্ণপদক ট্রফি গ্রহণ করেছিল। এ সময় এই গ্রুপের জিন্স ২০০০ লিমিটেড এবং প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড রৌপ্যপদক অর্জন করে।</p> <p>জাতীয় স্বীকৃতি পাওয়া প্রসঙ্গে প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটা অবশ্যই একটা বড় অনুপ্রেরণা। কারণ এ ধরনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আপনার পরিশ্রমকে মূল্যায়ন করে, তখন অবশ্যই আপনি আরো সম্মানিত বোধ করবেন এবং আরো বেশি কাজ করার উত্সাহ পাবেন। আর বেপজা কর্তৃপক্ষের অবিরত সাপোর্ট ছাড়া এই অর্জন কখনো সম্ভব হতো না।’</p> <p>রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির কারণে ২০১৩ এবং ২০১৪ সাল বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতির জন্য একটি কালো অধ্যায়। কিন্তু এর মধ্যেও ব্যতিক্রম ছিল প্যাসিফিক জিন্স। বিরুদ্ধ পরিস্থিতি জয় করে এই সময়ে রপ্তানিতে ইপিজেড ক্যাটাগরিতে সব ট্রফি নিজেদের দখলে নিয়েছে বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি। কিভাবে সম্ভব হলো জানতে চাইলে সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর আরো বলেন, ‘আমরা বিদেশি বায়ারদের বলেছি, এটা আমাদের দেশের নিজেদের সমস্যা। দেশের সমস্যাকে কখনোই অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করিনি। দেশের সুনাম কিংবা ভাবমূর্তি ব্যাহত হয় এমন কোনো কিছু আমরা তাদের সামনে তুলে ধরিনি। উত্পাদন কিংবা শিপমেন্ট নিয়েও কোনো ধরনের অজুহাতের সুযোগ দিইনি।’</p> <p>প্যাসিফিক জিন্স সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত এই গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জাতীয় রপ্তানিতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ছয়টি স্বর্ণপদক, ছয়টি রৌপ্যপদক এবং দুটি ব্রোঞ্জপদক অর্জন করেছে।</p> <p>প্যাসিফিক জিনসের যাত্রা ১৯৮৪ সালে শুরু হলেও ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম ইপিজেডে প্যাসিফিক জিন্স নামে দেড় হাজার শ্রমিক নিয়ে কারখানা স্থাপন করে। এখন শুধু চট্টগ্রাম ইপিজেডেই এই গ্রুপের পাঁচটি কারখানা। বেপজা নিয়ন্ত্রিত দেশের আটটি ইপিজেডের মধ্যে দেশি-বিদেশি মালিকানায় চালু এবং অপেক্ষমাণ মোট ৫৮২টি কারখানার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক ইয়াংওয়ান গ্রুপের পরেই প্যাসিফিকের অবস্থান। আর শুধু চট্টগ্রাম ইপিজেডের মধ্যে প্যাসিফিকই বৃহত্তম। প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেডে এখন ৩০ হাজার মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান। বিগত ১৫ বছর ধরে এই গ্রুপের বার্ষিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ১২ থেকে ১৫ শতাংশ।</p> <p>বিজিএমইএ সূত্র জানায়, ডেনিম পোশাক রপ্তানির সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের প্রায় ৫০০ কারখানা থেকে প্রতিবছর ৪০০ মিলিয়ন পিস পোশাক রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। এর মধ্যে এককভাবে ৩৬ মিলিয়ন পিস জিন্স প্যান্ট ইউরোপ, আমেরিকা, জাপানসহ ৫০টির বেশি দেশে রপ্তানি হচ্ছে প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড থেকে। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে জিনসের মোট রপ্তানি মূল্যের ১২ শতাংশই প্যাসিফিক জিনসের মাধ্যমে হচ্ছে বলে জানালেন পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর।</p>