<p>দিন দিন সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাড়ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় দেশজুড়ে নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে উঠছে। ভবন নির্মাণে ইটের চাহিদাও বাড়ছে। এই সুযোগে সারা দেশে যত্রতত্র অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠছে। সারা দেশে এখন আট হাজারের মতো ইটভাটা রয়েছে, যার বেশির ভাগই অবৈধ। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ৫৮ শতাংশ দায়ী করা হয় ইটভাটাকে। অবৈধ ইটভাটার কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গ্রামীণ সড়কসহ বিভিন্ন নির্মাণকাজে ইটের পরিবর্তে ব্লকের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। সরকারি কাজে ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ ব্লক ব্যবহার করতে চায় সরকার। বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব ব্লকের ব্যবহার কতটা সম্ভাবনাময়, ইটের বিকল্প কী হওয়া উচিত—এসব বিষয় নিয়ে কনকর্ড গ্রুপের সহযোগিতায় গত ২৫ জানুয়ারি এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে কালের কণ্ঠ। কালের কণ্ঠ মিলনায়তনে আয়োজিত ওই গোলটেবিল বৈঠকে সরকারি কাজে ব্লক ব্যবহারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও ব্লক ব্যবহার বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে। তবে পরিবেশদূষণ কমিয়ে আনতে মানুষের সচেতনতার বিকল্প নেই বলেও মত পরিবেশবিদদের। ‘টেকসই উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী’ নিয়ে দুই পৃষ্ঠার আয়োজন <strong>গ্রন্থনা করেছেন</strong> আরিফুর রহমান, শাখাওয়াত হোসাইন ও তানজিদ বসুনিয়া। <strong>ছবি তুলেছেন</strong> মঞ্জুরুল করিম</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-01.jpg" style="float:left; height:283px; margin:8px; width:250px" />ব্লক তৈরি করলে মিলবে সহজ শর্তে ঋণ</strong></p> <p><strong>মো. শাহাব উদ্দিন</strong></p> <p>পোড়ানো ইট যে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, বিষয়টি সর্বজনস্বীকৃত। পোড়ানো ইট থেকে উন্নত দেশগুলো অনেক আগেই সরে এসেছে। ভারত, চীন, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার কিছু দেশে বর্তমানে পোড়ানো ইটের ব্যবহার হচ্ছে, কিন্তু তারাও সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে। আমরা শুধু ঢাকার কথা না ভেবে সারা দেশের পরিবেশের মান উন্নয়নের জন্য, বায়ুর মান উন্নয়নের চিন্তার জায়গা থেকেই ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ’ আইনটি সংশোধন করেছি। প্রাথমিকভাবে সরকারি স্থাপনাগুলোর ক্ষেত্রে পোড়ানো ইটের ব্যবহার কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে সরকারি স্থাপনাগুলোতে ইটের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনব আমরা। এর মধ্যে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি কাজে ১০ শতাংশ ব্লক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। পরে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩০ শতাংশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬০ শতাংশ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি কাজে শতভাগ ব্লক ব্যবহার করা হবে। বিদ্যমান আইনে বেসরকারি স্থাপনাগুলোর জন্য ব্লক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বলা হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করব বেসরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলে তাদেরও ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে। অবশ্য এটি তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য যার যার জায়গা থেকে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে হবে। একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। এরই মধ্যে আমার কাছে অনেকেই এসেছেন, অনেকেই যোগাযোগ করছেন ব্লক তৈরি করার জন্য। ইটভাটার মালিকদের অনুরোধ করব, আপনারাও ধীরে ধীরে পোড়ানো ইট পরিহার করে ব্লক উৎপাদনে চলে আসুন। সে জন্য আপনাদের সহযোগিতায় আমরা পাশে থাকব। এ জন্য আপনাদের আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টি নিয়েও ভাবা হচ্ছে। আমাদের ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ’ আইনটি সংশোধন করে যে রাতারাতি পাস হয়েছে তা নয়। দীর্ঘদিনের আলাপ-আলোচনার পরই এই আইন পাস করা হয়েছে। ইটভাটা কতটা ক্ষতিকর, যে জমি থেকে ইটভাটার জন্য মাটি নেওয়া হচ্ছে সেই জমিতে পরবর্তী পাঁচ বছর কোনো ফসল উৎপাদন হয় না। পাঁচ বছর পর হয়তো কিছু ফসল পাওয়া যায়। আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা শব্দদূষণ রোধেও উদ্যোগ নিয়েছি।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-02.jpg" style="float:left; height:283px; margin:8px; width:250px" />গলা ফাটিয়ে কিছুই হবে না দরকার মানুষের সচেতনতা</strong></p> <p><strong>ইমদাদুল হক মিলন</strong></p> <p>শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীই পরিবেশ দুর্যোগে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বলি আর বায়ুদূষণের কথাই বলি, সব দিক থেকেই বাংলাদেশের অবস্থান সবার ওপরে। ঢাকার ৫৮ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী ইটভাটা। বাংলাদেশে এখন আট হাজারের মতো ইটভাটা রয়েছে। ইটভাটার কারণে প্রতিবছর ১ শতাংশ হারে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। চীন ও ভারত সনাতন ইটভাটার ক্ষতিকর দিক উপলব্ধি করে ইটভাটা থেকে সরে আসছে। চীন ও ভারত ইটের পরিবর্তে ব্লক নির্মাণের দিকে এগোচ্ছে। দেরিতে হলেও বাংলাদেশে সরকারি কাজে ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে সরকারি কাজে পুরোপুরি ব্লক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আপনি-আমি গলা ফাটিয়ে লিখে বলে কিছু করতে পারব না, যতক্ষণ না মানুষ সচেতন হবে। একটা উদাহরণ দিই, একসময় কলেরা বা ডায়রিয়ায় দেশে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। তখন মানুষ স্যালাইন ব্যবহারের কথা জানত না। একটিমাত্র স্যালাইন মানুষকে অন্য রকম জীবনের দিকে নিয়ে গেছে। এটার জন্য প্রচারণা বড় ভূমিকা রেখেছিল। একসময় বলা হতো, ‘যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই।’ এখন যক্ষ্মাকে রোগ হিসেবেই গণ্য করা হয় না। শব্দদূষণও এখন পরিবেশদূষণের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ঢাকা শহরে ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ থাকার কথা, সেই শহরে আড়াই কোটি মানুষ বসবাস করছে। এ কারণে পরিবেশদূষণ বাড়ছে। এই মানুষ নিয়ে আমাদের বাঁচতে হবে। পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। চীন-ভারতের মতো বাংলাদেশের মানুষকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে।  সরকার এরই মধ্যে সচিবালয় এলাকা শব্দদূষণমুক্ত ঘোষণা দিয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকা শহরকে শব্দদূষণমুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। একটু সচেতন হলেই আমরা পরিবেশের দূষণ অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারি। সেই লক্ষ্যে শ্রমিক, জনগণ এবং অন্যান্য অংশীজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত আমাদের।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-03.jpg" style="float:left; margin:8px" />রাস্তা নির্মাণের সময় পানি ছিটানো হয় না</strong></p> <p><strong>মোস্তফা কামাল</strong></p> <p>জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের দেশে পড়তে শুরু করেছে। কিছুদিন পর পর দেখি ঢাকা শহর বায়ুদূষণে শীর্ষে চলে আসছে। বায়ুদূষণের কারণে নানা রকম রোগ হচ্ছে। শিশুরা নানা ধরনের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। মায়েরাও আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু পানি ছিটানো হয় না। ফলে ধুলাবালি উড়ছে। কেউ পানি ছিটানোর কথা বললে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। পরিবেশদূষণ নিয়ে সারা বিশ্বই উদ্বিগ্ন। আমাদের দেশে বায়ুদূষণ নিয়ে সচেতনতা তৈরির বিকল্প নেই। মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। ইটভাটার ক্ষতিকর দিক নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। ইটের ব্যবহার পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। ইটভাটার মালিকরা মনে করতে পারেন যে তাঁদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। কিন্তু এটাই বাস্তবতা। আমাদের পরিবেশবিদরাও বলে আসছেন, ইটভাটা পরিবেশের ক্ষতি করছে। পরিবেশদূষণ নিয়ে একসময় কয়েকজন পরিবেশবিদ মিলে যখন রাস্তায় দাঁড়াতেন, ব্যানার টানিয়ে মানববন্ধন করতেন, তখন অনেকে তাঁদের তিরস্কার করত। কিন্তু এখন পরিবেশদূষণ বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পোড়া ইট আসলেই পরিবেশের ক্ষতি করছে। ঢাকা শহরের ৮০ শতাংশেরও বেশি কংক্রিটযুক্ত এলাকা। সবুজায়ন আছে মাত্র ৫-৭ শতাংশ এলাকা। আমরা এখন ঢাকায় কোনো সবুজ দেখতে পাই না। এই শহরকে বাঁচাতে হলে এমন কিছু উদ্যোগ নিতে হবে, যা পৃথিবীতে কেউ নেয়নি। সবার বাইরে গিয়ে অভিনব কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। এসব দেখার কেউ নেই। যখন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। এর আগে কেউ খবর রাখে না, না হলে এতগুলো ইটভাটা কিভাবে এলো? রাতারাতি তো এসব ইটভাটা অবৈধভাবে গড়ে ওঠেনি। প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়েই গড়ে উঠেছে। এই শহরকে বাঁচানোর জন্য আমাদের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। রাজধানীতে কী পরিমাণ বা কী ধরনের স্থাপনা আমরা করতে পারি কিংবা পারি না, সেই বিষয়গুলো নিয়ে সরকারকে এখন থেকেই ভেবে দেখতে হবে।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-04.jpg" style="float:left; margin:8px" />গত ২০ বছরে কনকর্ডের কোনো প্রকল্পে পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হয়নি</strong></p> <p><strong>শাহরিয়ার কামাল</strong></p> <p>বাংলাদেশের উন্নয়নটা হচ্ছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। তবে এটা মনে রাখতে হবে, উন্নয়ন তখনই টেকসই হবে, যখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং নির্মাণশিল্পের কারণে প্রতিবছর ইটের চাহিদা বাড়ছে। এতে ঢাকাসহ সারা দেশেই অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গড়ে উঠছে ইটভাটা। ফলে দেশে বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে। বর্তমানে সারা দেশে আট হাজার ইটভাটা আছে। এর মধ্যে আড়াই হাজার ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই। সনাতন ইটভাটার মাটির জোগান দিতে গিয়ে প্রতিবছর ১ শতাংশ হারে কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় এক নম্বরে উঠে আসছে। এই পরিবেশদূষণের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে ক্রমান্বয়ে সনাতন ইটভাটার পরিবর্তে পরিবেশসম্মত ইটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সেই বিষয় চিন্তা করে ২০২৪ সালের মধ্যে সনাতন ইটভাটা বন্ধে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা খুব সময়োপযোগী। আমার বিশ্বাস, এর ফলে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে এ খাতে। কনকর্ড ১৯৯৮ সাল থেকে ব্লক উৎপাদন করে আসছে। গত ২০ বছরে কনকর্ডের কোনো প্রকল্পে পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হয়নি। আমাদের দেখাদেখি এই শিল্পে এখন ৫০ থেকে ৬০টি কম্পানি ব্লক উৎপাদন করছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালের মধ্যে সরকারি কাজে ইটের ব্যবহার বন্ধ করে একই বছর শতভাগ ব্লক নির্মাণের যে যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে এই শিল্পে খুব তাড়াতাড়ি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। জাতিসংঘঘোষিত ১৫ বছর মেয়াদি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য পরিবেশদূষণ সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আর পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী জনপ্রিয় করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি যারা শিল্প উদ্যোক্তা, তাঁদের উৎসাহ দিতে হবে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে হবে। যাঁরা ইটভাটার ব্যবসা করছেন, সরকার তাঁদের সহযোগিতা করতে পারে। পরিবেশবান্ধব ব্লক ব্যবহার করতে জনগণের মধ্যে নির্মাণশিল্পের সঙ্গে জড়িত পেশাজীবীদের, ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা, সহজ শর্তে ঋণ, আমদানিতে শুল্কছাড় সুবিধা দিলে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন। সরকারের ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত প্রশংসনীয়। মানুষ যখন উপলব্ধি করতে পারবে ব্লক ভালো, তখন বাজার নিজের গতিতেই চলবে। ইটের ব্যবহার থেকে সরে আসতে হলে সেই ধরনের আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব পণ্য নিয়ে আসতে হবে। প্রতি বছর দেশে প্রায় আড়াই হাজার কোটি ইট তৈরি হয়। এতে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টন মাটি ব্যবহার করা হয়। যার ফলে প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। ইট পোড়াতে পঞ্চাশ লাখ টন কয়লা ও ত্রিশ লাখ টন কাঠ ব্যবহার করা হয়। এতে প্রায় দেড় কোটি টন কার্বন নিঃসরণ হয়। বায়ু দূষণজনিত মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পঞ্চম। এ কারণে ২০১৭ সালে দেশে বায়ু দুষণের কারণে মারা গেছে ১ লাখ ২৩ হাজার মানুষ। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় বায়ু দুষণের কারণে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় দেশের গরীব মানুষদের।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-05.jpg" style="float:left; margin:8px" />পরিবেশের গুরুত্ব মানুষের মনের মধ্যে ঢোকাতে হবে</strong></p> <p><strong>ড. মো. শামীম জেড বসুনিয়া</strong></p> <p>ইটের প্রয়োজনীয়তা আছে। ইটের অসুবিধা আছে, সুবিধাও আছে। সরকারি কাজে ব্লক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে ইটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। হঠাৎ করে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কঠিন হবে। যদিও ৫৮ শতাংশ বায়ুদূষণ হয় ইটভাটা থেকে। আমি মনে করি, একেবারেই ইটের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। ‘ঢাকা শহরে বায়ুদূষণ’, এটা নিয়ে একটি বিষয় হওয়া উচিত। ঢাকায় ২০১৩ সালে যে গাড়ি ছিল, এখন ১১ গুণ বেড়েছে। একসময় রাস্তায় পানি ছিটাত। এখন আর তা দেখা যায় না। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ধুলাবালি পরিষ্কার করে রাস্তার এক পাশে রাখে। বর্জ্য এক জায়গায় রাখে, পরিবেশের জন্য যা মারাত্মক ক্ষতিকর। ঢাকা শহরে দুই কোটি মানুষ আছে বলে বলা হয়। আমি মনে করি, ঢাকায় লোকসংখ্যা আরো অনেক বেশি। জনশুমারি করার সময় আমাদের বাসায় লোক  আসেনি। পরিবেশের গুরুত্ব কতটুকু তা মানুষের মনের মধ্যে ঢোকাতে হবে। দেশে এখন গোলপাতার বাড়ি দেখা যায় না। এখন ভবন দেখা যাচ্ছে। তার মানে উন্নয়ন হচ্ছে। তবে শুধু বাড়িঘর দিয়ে উন্নয়নকে নির্ণয় করা ঠিক হবে না। মানুষ নিজেই অনেক পরিবেশ দূষণ করছে। তাই সর্বক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়াতে হবে।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-06.jpg" style="float:left; margin:8px" />বায়ুদূষণ রাতারাতি বন্ধের উপায় নেই</strong></p> <p><strong>মোহাম্মদ শামীম আখতার</strong></p> <p>পরিবেশ মন্ত্রণালয় ইটের ব্যবহার বন্ধে যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি অত্যন্ত জরুরি। ইটভাটাগুলো যে উল্লেখযোগ্য হারে পরিবেশের ক্ষতি করছে সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ইট পরিবেশের ক্ষতি করছে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতার জন্য আমরা অনেক পেছনে পড়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে বিশাল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, সেটি মাথায় নিয়ে এখন আমাদের কাজ করতে হবে। বায়ুদূষণ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, কিন্তু বায়ুদূষণ রাতারাতি বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। দূষণ রোধে আমরা যে পদক্ষেপগুলো নেব, তার ফলাফল হয়তো ১০ বছর পর পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন থেকেই সব পদক্ষেপ নিতে হবে। ইট এবং ইটের বিকল্প হিসেবে আর কী আসতে পারে, সেটি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা যাক। ইট সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় রাস্তার কাজে। ইট থেকে যদি আমরা বের হতে চাই তাহলে ইট যেসব জায়গায় ব্যবহৃত হচ্ছে সেসব নিয়ে সমন্বিত চিন্তা করতে হবে।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-07.jpg" style="float:left; margin:8px" />সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় হলে বায়ুদূষণ অনেকাংশে কমে আসবে</strong></p> <p><strong>মেজর (অব.) প্রকৌশলী সামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী</strong></p> <p>পরিবেশ নিয়ে আলোচনা সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। আমি যখন পুরান ঢাকা থেকে রিকশায় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে যাই, তখন বুঝতে পারি, পরিবেশটা যেন অন্য রকম। মোহাম্মদপুর থেকে হেঁটে যখন চন্দ্রিমা উদ্যানে যাই, তখন পরিবেশের ভিন্নতা টের পাই এবং যখন গাড়িতে করে ঢাকা সেনানিবাস এলাকার ভেতর দিয়ে যেতে থাকি, তখনও পরিবশের বিচিত্রতা দেখতে পাই। এর কারণ এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে গাছপালা, রয়েছে পরিবেশের ভারসাম্য। এই জায়গা থেকে রাজউক কী করছে সেটি নিয়ে কিছু বলা প্রয়োজন। রাজউক মূলত পরিকল্পনা করে, নিজে উন্নয়ন করে এবং অনুমোদনহীন উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করে। রাজউক নিজে  যখন উন্নয়ন করে, তখন  কাজ শেষ করে সেটি সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। গুলশান, বনানী, উত্তরা, নিকুঞ্জ এর উদাহরণ। আপনারা যদি পূর্বাচলের দিকে তাকান তাহলে দেখতে পাবেন যে এই প্রকল্পের মোট জমির মাত্র ৪০ শতাংশ প্লটের জন্য রাখা হয়েছে। ছয় হাজার ২২৭ একরের এই প্রকল্পের বাকি ৬০ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ রাখা হয়েছে রাস্তা, লেক, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানের জন্য। এই প্রকল্পে রয়েছে ৪৮ কিলোমিটার লেক। এই প্রকল্পের জন্য আমরা পেয়েছি এশিয়ান টাউনস্কেপ জুরিস অ্যাওয়ার্ড ২০১৯। পূর্বাচলের কাজ শেষ হলে এই প্রকল্পটি আমরা সিটি করপোরেশনের কাছে তুলে দেব। উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প আমাদের তৈরি, যেখানে রয়েছে ছয় হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাট। ৮৭ একরের এই প্রকল্পে মাত্র ৪০ শতাংশ স্থান ব্যবহার করেছি ভবন নির্মাণে আর ৬০ শতাংশ রেখেছি রাস্তা, পার্ক, খেলার মাঠের জন্য উন্মুক্ত। এটা একটা সবুজ প্রকল্প। আমরা রাজউক হিসেবে আমাদের কাজগুলো শতভাগ পরিবেশসম্মতভাবে শেষ করে আসছি। অন্য সংস্থাগুলো যদি একটু সচতন হয় তাহলে পরিবশবান্ধব নগরী হিসেবে ঢাকা পাওয়ার পথে আমরা অনেকটা এগিয়ে যাব।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-08.jpg" style="float:left; margin:8px" />প্রকল্প নয়, আইন বাস্তবায়নের দিকে নজর দিতে হবে</strong></p> <p><strong>আবু নাসের খান</strong></p> <p>আমাদের কারো টাকা-পয়সা হলেই বাড়ি বানাতে চাই। এটার কারণেই পরিবেশের মারাত্মক দূষণ হচ্ছে। বাড়ি বানানোর কারণে নির্মাণসামগ্রীর ব্যবহার বাড়ছে। অর্থাৎ পরিবেশদূষণের জন্য কমবেশি আমরা সবাই দায়ী। পরিবেশের ক্ষতির প্রভাব থেকে বের হয়ে আসার জন্য এই মুহূর্তে বেশ কয়েকটি বিষয় আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আগের তুলনায় এখন পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। কিন্তু যে মাত্রায় সচেতনতা বাড়ানো উচিত তা কিন্তু বাড়ছে না। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলছে, লেক বা জলাশয় দখল করে ফেলছে। উন্নয়নের প্রাথমিক ধাপে এ ধরনের সমস্যা হয়। পরিবেশ উন্নয়নের জন্য অনেক চেষ্টা হচ্ছে, কিন্তু কিছু হচ্ছে না। আজ থেকে ২০ বছর পর এই শহরে মানুষ থাকতে চাইবে না। এখনই অনেকে থাকতে চায় না। পরিবেশদূষণের জন্য আমরা সবাই দায়ী। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে মাপের গবেষণা দরকার, সে মাত্রায় গবেষণা তারা করছে না। পরিবেশদূষণ কমাতে শুধু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে এসব প্রকল্পে; কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি। এসব প্রকল্প না নিয়ে পরিবেশ আইনটা বাস্তবায়ন করলে আরো বেশি কাজ হতো। পরিবেশ রক্ষায় আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন এবং পরিবেশবান্ধব পণ্যগুলোর ব্যবহার উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেওয়া উচিত সরকারের। এ ছাড়া গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উচিত অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও অফিসগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা। এগুলো না করে শুধু প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে মূল কাজ কিছু হবে না। শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উচিত পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করা।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-09.jpg" style="float:left; margin:8px" />গবেষণা না করে কিছু বন্ধ করা ঠিক হবে না</strong></p> <p><strong>ড.  মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন</strong></p> <p>ইটভাটা বন্ধের বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে আমার মত হলো, গবেষণা না করে চট করে কারো ওপর দোষ দিয়ে আইনের প্রয়োগ করা ঠিক হবে না। আবার কয়েক দিন পর আগের জায়গায় ফিরে যেতে হতে পারে। তাই ইটভাটা বন্ধের আগে একটি বিস্তারিত গবেষণার দরকার। ঢাকার চারপাশে চারটি নদীর দিকে তাকালেই দেখি দূষিত। গাজীপুরে আমরা চিত্তবিনোদনের জন্য যাই। কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারি না। সেখানে প্রচুর শিল্পকারখানা হয়েছে। ওই সব শিল্পকারখানা থেকে নদীতে বর্জ্য পড়ছে। প্রতিটি শিল্পকারখানা যখন নির্মিত হয়, তখন যদি বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা করত, তাহলে নদীতে বর্জ্য পড়ত না। নদীদূষণও হতো না। তার মানে সেখানে পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ নেই। আমরা একটি গবেষণা করে দেখেছি গাছের ওপর দূষণের প্রভাব কিভাবে হচ্ছে। আমরা দেখেছি, বায়ুদূষণ চড়া। কী পরিমাণ ধুলাবালি পাতার ওপর জমা পড়ছে। এটা কি ইটের ভাটা থেকে আসছে? না। ওয়াসা, ডেসকোসহ যারা রাস্তা কাটে, মাটি খুঁড়ে পাইপলাইন নেয়, তাদের কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফুলার রোড, নীলক্ষেতে গাছের ওপর তাকালে দেখা যায়, পাতায় ধুলার আস্তরণ পড়ে আছে। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা বিশাল। এক সংস্থা মাটি কাটে, খোঁড়াখুঁড়ি করে। সেটা এভাবেই পড়ে থাকে। সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে পারলে দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনা যেত।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-10.jpg" style="float:left; margin:8px" />এইচবিআরআই কার্যক্রমের সঙ্গে মানুষের পরিচিত না হওয়া দুঃখজনক</strong></p> <p><strong>সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান</strong></p> <p>জনবহুল এই দেশে যেকোনো মূল্যেই হোক, কৃষিজমি রক্ষা করতে হবে। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে যে হারে কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৭০ সাল নাগাদ কোনো কৃষিজমিই থাকবে না। বর্তমান বিশ্বে খুব কম দেশই আছে, যারা পোড়ামাটি দিয়ে ইট তৈরি করে। বায়ুদূষণ থেকে রক্ষা পেতে, কৃষিজমিকে সুরক্ষা দিতে এবং ফসলের উৎপাদন বাড়াতে ওই সব দেশ ইট পোড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যখন ইটের পরিবর্তে ব্লকের দিকে যাচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে দিন দিন ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের সময় নষ্ট করা উচিত হবে না। এখনই পোড়া ইটের ব্যবহার থেকে সরে আসতে হবে। একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব ব্লকের দিকে হাঁটতে হবে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে স্বাধীনতার পর এতটা বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের দেশের মানুষ এখনো হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিউিটের (এইচবিআরআই) কার্যক্রমের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেনি।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-11.jpg" style="float:left; margin:8px" />একটা শিল্প বন্ধ না করে টেকসই করা যায় কি না দেখা উচিত</strong></p> <p><strong>মামনুন মুর্শেদ চৌধুরী</strong></p> <p>উন্নয়ন শব্দটাই একটা প্যারাডক্স। পাহাড়ের চূড়া কেটে যখন আমরা গুহা তৈরি করলাম, তখনই প্রকৃতির ওপর আঘান হানা শুরু করলাম। এরপর গাছ কেটে বাড়িঘর নির্মাণ করলাম, রান্নাঘরে ব্যবহার করলাম, তখন থেকেই প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধটা শুরু করলাম। পরে কৃষি বিপ্লবের পর জমিগুলোকে উৎপাদনমুখী করলাম, পানি দিলাম, বিক্রয়যোগ্য সম্পদে পরিণত করলাম। সেই প্রতিটি জিনিস উন্নয়নের সঙ্গে বৈপরীত্য। এ জন্য সম্ভবত উন্নয়নের সঙ্গে টেকসই শব্দটা যুক্ত হয়েছে। এক ব্যাপার হচ্ছে বাড়িঘর তৈরি বন্ধ করে দিয়ে উন্নয়ন স্তিমিত করে দেওয়াটাও সম্ভব নয়। কোনো নির্মাণপণ্য যদি পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয় তাহলে এটাকে আমরা পরিবেশবান্ধব বলতে পারব। আরেকটি বিষয় হলো, আমি যে পণ্য ব্যবহার করছি তা দেশেই তৈরি করছি, নাকি আমদানি করতে হচ্ছে। যদি এই দেশেই হয় তাহলে এর উৎপাদন আমরা বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে পারি। কারণ এটাকে আমদানি করতে হচ্ছে জাহাজে। আর জাহাজ চলে ফসিল জ্বালানির মাধ্যমে। আমাদের দেশে যেহেতু সিমেন্ট তৈরি হচ্ছে, আমরা বলতে পারি এটা আমাদের জন্য টেকসই। কিন্তু এই সিমেন্টের জন্য ক্লিংকার যখন বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে, তখন এটার টেকসই কমে যাবে। পরিবেশের বিবেচনায় ইউপিভিসি পাইপ টেকসই কিন্তু ক্ষতিকর, অনেকটা পলিথিনে মতো। ইট, কংক্রিট, গ্লাস আমরা বেশি ব্যবহার করি। ইট স্থপতিদের সবচেয়ে প্রিয় একটি নির্মাণপণ্য। স্থাপত্যের ইতিহাসও লাল ইটের সঙ্গে সম্পর্কিত।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-12.jpg" style="float:left; margin:8px" />রাস্তা নির্মাণে আমরা পাথরের দিকে যাচ্ছি</strong></p> <p><strong>আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান মুন্না</strong></p> <p>ইট তৈরি হয় মাটি থেকে। ইটের মধ্যে পাঁচটি ক্লে (খনিজ) থাকে, যা পানিকে ধরে রাখে। কিন্তু ইট পোড়ানোর ফলে ক্লেগুলো একেবারে কাচের মতো হয়ে যায়। ইট শুধু বাতাস নয়, আমাদের যে ক্লেগুলো পানি ধরে রাখে, যেখানে আমরা চাষাবাদ করি, তা নষ্ট করে দেয়। এটা খুব অ্যালার্মিং। যে জিনিসটা রিসাইকল করা যায়, তা পরিবেশবান্ধব। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের যে ছোট বাড়ি বা স্থাপনাগুলো রয়েছে, তা রিসাইকল করা যায়। আমাদের দেশে গাড়ি ও গাড়ির ওজন বেড়েছে। তাই ইট রাস্তাঘাটে ব্যবহার করলে তা ভেঙে যেতে পারে। এ জন্য আমরা পুরোপুরি পাথর ব্যবহারের দিকে চলে গেছি। ইট রোডস অ্যান্ড হাইওয়েতে এখনো ব্যবহার করা হয়। তবে আমরা তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। পাথর আমাদের দেশে হয় না, আমদানি করতে হয়। এখন অনেক স্থানে আমরা কংক্রিট ব্যবহার করছি। এভাবে আমরা চেষ্টা করছি ইটের ব্যবহার বন্ধ করতে। পেভিং ব্লক পরিচিত করতে চেষ্টা করছি আমরা। এ ছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকায় ব্লক সিটি রোডগুলোতে ব্যবহার করা হয়। যেহেতু সিটির রোড আমাদের আওতার বাইরে। ব্লক খুবই ব্যবহার উপযোগী। ব্লকে একটু নয়েজ হয়। কিন্তু ব্লক রিসাইকল করা যায় এবং একটি ব্লক খুলে কোনো কাজও করা যায়।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-13.jpg" style="float:left; margin:8px" />সরকারি কাজে ব্লক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত অনেক ভেবেচিন্তেই</strong></p> <p><strong>মো. জিয়াউল হক</strong></p> <p>আমরা সাধারণত কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সেটি নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা ও পর্যালোচনা করি। পরে মন্ত্রণালয় সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি কাজে ইটের ব্যবহার বন্ধ করে ব্লক ব্যবহারের সিদ্ধান্তের আগে অনেক গবেষণা ও পর্যালোচনা করা হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে প্রকাশিত সরকারের প্রজ্ঞাপনটি দেখলেই সেটি স্পষ্ট হবে। ইট তৈরির পেছনে যে পরিমাণ মাটির ব্যবহার হয় সেটি কমানোর জন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকার পাশের জেলাগুলোতে গত দুই মাসে পাঁচ শর বেশি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ইটভাটা মালিকদের সাত কোটি ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি দেশে এখন ইটভাটা চলছে। বেশির ভাগ দেশেই ইটভাটা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আমাদের ইটভাটা বন্ধ করতে সময় লাগবে। ভবিষ্যতে স্কুল-কলেজসহ সরকারি স্থাপনাগুলোতে ব্লকের ব্যবহার করা হবে, যা সবার আগ্রহ বাড়াবে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, প্রতিবছর সারা দেশে আড়াই হাজার কোটির বেশি ইট তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ ইট ব্যবহার করা হয় সরকারি কাজে। সে জায়গা থেকে সরে এসে সরকারি কাজে ইটের ব্যবহার যদি বন্ধ করতে পারি তাহলে সরকারি কাজে বছরে এক হাজার ১০০ কোটি ইটের ব্যবহার বন্ধ হবে। তবে আমরা এটিও দেখছি, যে ব্লকগুলো ব্যবহার করা হবে সেটি পরিবেশসম্মত কি না।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-14.jpg" style="float:left; margin:8px" />ইটভাটা থেকে বছরে ৯ হাজার টন ব্ল্যাক কার্বন উৎপন্ন হয়</strong></p> <p><strong>ড. তানভীর আহমেদ</strong></p> <p>আমাদের দেশে ইটভাটা এতটা খারাপ অবস্থানে যেত না, যদি সঠিক নিয়ম-কানুন মানা হতো। ইটভাটার জন্য গাছপালা কাটা না হলে পরিবেশের এত বিপজ্জনক অবস্থা হতো না। আমরা বুয়েটে কিছু সমীক্ষা করে দেখেছি, ইটভাটা থেকে বছরে ৯ হাজার টন ব্ল্যাক কার্বন উৎপন্ন হয়। এই ব্ল্যাক কার্বন আবার পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫-এর অংশ, যা স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়তেও সহায়তা করছে এই ব্ল্যাক কার্বন। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে, আমরা ইটভাটার বিকল্প হিসেবে যে কংক্রিটের ব্লকের কথা ভাবছি, সেটাও পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব নয়। ইটভাটা আমাদের সরাসরি ক্ষতি করছি। কংক্রিটের ব্লক নির্মাণ করতে হলে সিমেন্ট প্রয়োজন হয়। এই সিমেন্ট তৈরির জন্য বিদেশ থেকে ক্লিংকার আমদানি করছি। সেখান থেকে সিমেন্ট উৎপাদন করছি। ক্লিংকারও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে এটা ঠিক, ক্লিংকারের চেয়ে ইটভাটা এখন বেশি ক্ষতি করছে। আমাদের দেশে প্রচুর অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে। এর ফলে পুরনো অবকাঠামো ভাঙতে হচ্ছে।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-15.jpg" style="float:left; margin:8px" />শুধু ইটভাটা নয়, ধুলাবালি, কালো ধোঁয়া, বর্জ্য পোড়ানোও বায়ুদূষণের জন্য দায়ী</strong></p> <p><strong>ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার</strong></p> <p>পৃথিবীর বসবাস-অযোগ্য শহরের মধ্যে কয়েক বছর ধরে ঢাকা দ্বিতীয় বা তৃতীয় অবস্থানে থাকে। এ বছরও সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত দামেস্ক শহরের পরই ঢাকার অবস্থান। ঢাকা অযোগ্য শহর হওয়ার কারণ হিসেবে যে পাঁচটি সূচক ব্যবহার করা হয়েছে তার তিনটিই বায়ু সম্পর্কিত। আমাদের দেশে ঘরে-বাইরে এবং শিল্পকারখানায়—সবখানেই বায়ু দূষিত। কয়েক বছর আগে বিশ্বব্যাংকের একটি গবেষণা পরিচালিত হয় ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে এবং বলা হয়, ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ৫৮ শতাংশ দায়ী ইটভাটা। ১৯৫৩ সালে যখন ঢাকায় অটোমোবাইল আনা হয় এবং রমনায় পেট্রল পাম্প স্থাপন করা হয় তখন বায়ুদূষণের বিষয়টি অনেকেই বুঝত না। এমনকি ১৯৯৫ সালের দিকেও বায়ুদূষণ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হতো না। ১৯৯৫ সালে শেয়ারবাজারের উল্লম্ফনের পর যার হাতে টাকা এসেছে, সেই একটি গাড়ি বা একটি বহুতল বাড়ি বানানোর দিকে ধাবিত হয়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পরিবেশদূষণের মাত্রা এত বাড়ে যে একটি শার্ট এক দিনের বেশি পরা যেত না; কালো হয়ে যেত। আমি ইটভাটার পক্ষে নই, কিন্তু আরো অনেক বিষয় আছে, যেগুলো বায়ুদূষণের জন্য দায়ী, সেগুলোও শনাক্ত করতে হবে। যানবাহন, যত্রতত্র রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়নকাজ—সেগুলোও কোনোভাবে কম দায়ী নয় বায়ুদূষণের জন্য।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-16.jpg" style="float:left; margin:8px" />ইটভাটা রাতারাতি গড়ে ওঠেনি</strong></p> <p><strong>ড. আদিল মুহাম্মদ খান</strong></p> <p>আমাদের নির্মাণসামগ্রীগুলো কোথায় উৎপাদিত হচ্ছে, যারা উৎপাদন করছে তারা বিধিসম্মতভাবে করছে কি না কিংবা এর ফলে পরিবেশদূষণ হচ্ছে কি না—এসব বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন। যেসব স্থানে ইটভাটা করার অনুমতি নেই সেখানেও ইটভাটা করা হয়েছে। অনুমোদনহীন ও অপরিকল্পিতভাবে এসব ইটভাটা গড়ে ওঠায় তখন স্বাভাবিকভাবেই ওই এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। শিল্পকারখানা তৈরিতে যে নির্মাণসামগ্রী ব্যবহৃত হয় সেটি পরিবেশবান্ধব কি না তা খতিয়ে দেখার বিকল্প নেই। ওই ইটভাটাগুলোতে উৎপাদনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁরাও সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, যা তাঁদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ঢাকার বাইরে গ্রামীণ এলাকাগুলোতে ইটভাটার ফলে সেখানকার মানুষজন টিকতে পারছে না। শাকসবজি হচ্ছে না। ফসল কমে যাচ্ছে। নারকেল-সুপারি হচ্ছে না।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-17.jpg" style="float:left; margin:8px" />বেসরকারি খাতেও ইটের ব্যবহার কমিয়ে আনব</strong></p> <p><strong>শাহাদাত হোসেন</strong></p> <p>বাংলাদেশে যেসব অবৈধ ইটভাটা আছে তার কারণে আমাদের পরিবেশ ভীষণ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যেমন—জ্বালানি হিসেবে সবুজ বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। গাছকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ইটভাটায়। শুধু তা-ই নয়, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে মানুষের স্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে, এমনকি আমাদের কৃষিসমৃদ্ধ দেশটির এই অবৈধ ইটভাটার কারণে ফসলি জমি যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি ফসল উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। সব দিক বিবেচনা করে আমরা যদি ব্লক ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমাদের পরিবেশগত উন্নতি, এমনকি আমাদের স্বাস্থ্যগত উন্নত জীবন গড়া এবং আমাদের কৃষি খাতের ফলনও বেড়ে যাবে। আরো দেখা যাবে, ভবিষ্যতে আমরা উন্নত মানের ইটশিল্প গড়ে তুলতে পারব। আমরা আমাদের পাশের দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই যে তারা ইটের ব্যবহার দিন দিন কমিয়ে আনছে, বিপরীতভাবে কংক্রিট ব্যবহার জ্যামিতিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সরকার ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ইটের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনতে বদ্ধকরিকর। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-18.jpg" style="float:left; margin:8px" />গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণে ব্লকে জোর দিচ্ছে এলজিইডি</strong></p> <p><strong>মীর তানভীর হোসাইন</strong></p> <p>টেকসই উন্নয়নের কথা বলতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই টেকসই অবকাঠামোর বিষয়টি চলে আসে। শুধু অবকাঠামো নয়, অবকাঠামো হতে হবে পরিকল্পিত, সুচিন্তিত ও পর্যাপ্ত। তখন আমরা উন্নয়নের কথা চিন্তা করতে পারব। অবকাঠামো নির্মাণ করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। প্রধানতম নির্মাণসামগ্রী, যেমন—ইট, সিমেন্ট, পাথর ও বালু সরাসরি পরিবেশ দূষণ করছে না। কিন্তু এসব নির্মাণপণ্য উৎপাদনকালে বা ব্যবহার করার সময় আমরা কোনো না কোনো কাজের ফলে পরিবেশের ক্ষতি করে থাকি। ইটের ক্ষতিকর বিষয়টি আমরা সবাই জানি এবং তা ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসছে। পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী নিয়ে কথা হলেও সবাই ইটের ক্ষতিকর বিষয় নিয়েই আলোচনা করছেন। কিন্তু প্রতিটি নির্মাণসামগ্রীর ক্ষেত্রেই পরিবেশের বিষয়টা জড়িত। যেমন—সিমেন্টের কাঁচামাল বিদেশ থেকে এনে সচেতনভাবে ব্যবহার না করায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। মেঘনার পারে এখন তা দৃশ্যমান।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-19.jpg" style="float:left; margin:8px" />এইচবিআরআইয়ের আরো শক্ত সম্পৃক্ততা দরকার</strong></p> <p><strong>আনিসুর রহমান চৌধুরী</strong></p> <p>অক্সফাম হচ্ছে একটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। আমরা বাংলাদেশে আর্থিক সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে থাকি। বিগত চার বছরে পরিবেশসংক্রান্ত একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। সেই চার বছরের অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। ২০২৫ সালের মধ্যে সনাতন ইটভাটা বন্ধে সরকারের যে লক্ষ্য আমি আশা করছি, কনকর্ডসহ আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেহেতু কাজ করছে, আমি আশা করছি, সেই লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হব আমরা। এটা সম্ভব করতে গিয়ে আমি মনে করছি, চাহিদা ও সরবরাহকারীদের শক্তিশালীভাবে যুক্ত থাকা দরকার হয়। আমরা দেখেছি, প্রত্যন্ত বা গ্রামাঞ্চলে, যেখানে যোগাযোগের সমস্যা রয়েছে, সেখানে পরিবেশবান্ধব পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। আমরা সেই সব মানুষকে উৎসাহিত করছি, তারাও একমত পোষণ করছে। তাই পরিবেশবান্ধব পণ্যের শিল্প যাতে গড়ে ওঠে এবং পণ্য যাতে সেখানে যায়, সেই উদ্যোগ নিতেই হবে। প্রতি মাসে এসংক্রান্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা উচিত। পরিবেশবান্ধব নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে তৈরি করা বাড়িটা কেমন হয় সেটা অনেকেই জানে না। এটার একটা দৃষ্টান্ত রাখা উচিত। কারণ অনেক দিন ধরে আমি ওই সব দৃষ্টান্ত দেখার চেষ্টা করছি, কিন্তু তেমন উদাহরণ খুব কম পাই আমরা। স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই) তৈরি করেছেন। এ ক্ষেত্রে এইচবিআরআই একটি অগ্রদূত প্রতিষ্ঠান। মানুষের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানটির যথেষ্ট সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং আমাদের প্রকল্পটি তাদের সঙ্গেই করেছি। তাই আমি মনে করি, সরকারের সঙ্গে এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে এইচবিআরআইয়ের আরো শক্ত সম্পৃক্ততা দরকার। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি থানচি পাহাড়ের পাদদেশে তাদের পণ্য পৌঁছাতে পারে, রিজিলিয়েন্স নির্মাণসামগ্রী কেন নয়? ওই এলাকায় ভবন হচ্ছে, স্থাপনা হচ্ছে এবং মাটি ব্যবহার করে ইটভাটা হচ্ছে।</p> <p> </p> <p><strong><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/01.January/30-01-2020/Goal Table/Kalerkantho_GT_20-01-30-20.jpg" style="float:left; margin:8px" />২০২৫ সাল পর্যন্ত ইটভাটার জন্য সময় চাই</strong></p> <p><strong>আসাদুর রহমান খান</strong></p> <p>নির্মাণশিল্পে ইট একটি প্রধানতম উপাদান। বাংলাদেশে সাড়ে সাত হাজার ইটভাটা রয়েছে। এ পর্যন্ত আমাদের কাছে মনে হয়েছে, নির্মাণপণ্য হিসেবে ইট সবচেয়ে সস্তা এবং সহজে ব্যবহার উপযোগী। এ কারণে ইটের এত সমস্যা থাকার পরও নির্মাণপণ্যের মৌলিক চাহিদার মধ্যে রয়েছে। আর এই ব্যবসা অনেক পুরনো এবং দীর্ঘ সময় ধরে এটা চলে আসছে। ইটের বিকল্প এখন পর্যন্ত সেইভাবে নাই। ইটের বিকল্প তৈরি করতে আমরাও চেষ্টা করেছি। আইনের মধ্যে থেকেই আমরা এই ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু ২০১৩ সালে একটি আইনের পর এই ব্যবসা অবৈধ হয়ে গেছে। ২০১৯ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও আমরা অবৈধ রয়েছি। জরিমানার পরিমাণও বেড়েছে। অভিযান করে ইটভাটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমরা খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। কিন্তু ২০২৫ সাল পর্যন্ত যদি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আমাদের সময় দেওয়া হয়, তাহলে তা বন্ধ করতে আমরা রাজি আছি। ব্লকের ব্যাপারে আমি নিজেও চেষ্টা করেছি। কিন্তু এর বাজার তৈরি করতে বলছি আমরা। ৫০ শতাংশ সিসি ব্লক তৈরির ব্যাপারে বলা আছে আইনে। কিন্তু আমরা সনাতন পদ্ধতিতে ইট তৈরি করি। এ অবস্থায় আমরা কিভাবে সিসি ব্লক তৈরি করব। এ জন্য জরিমানা করা হচ্ছে। ইটের বিকল্প তৈরি করা জরুরি। যত দ্রুত করা যায়, তত ভালো।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p> <p> </p> <p><strong>যাঁরা অংশ নিয়েছেন</strong></p> <p><strong>মো. শাহাব উদ্দিন</strong></p> <p>মন্ত্রী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়</p> <p> </p> <p><strong>ইমদাদুল হক মিলন</strong></p> <p>সম্পাদক, কালের কণ্ঠ ও পরিচালক, ইডাব্লিউএমজিএল</p> <p> </p> <p><strong>মোস্তফা কামাল</strong></p> <p>ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, কালের কণ্ঠ</p> <p> </p> <p><strong>শাহরিয়ার কামাল</strong></p> <p>ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কনকর্ড গ্রুপ</p> <p> </p> <p><strong>ড. মো. শামীম জেড বসুনিয়া</strong></p> <p>ইমেরিটাস অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক</p> <p> </p> <p><strong>মোহাম্মদ শামীম আখতার</strong></p> <p>মহাপরিচালক, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই)</p> <p> </p> <p><strong>মেজর (অব.) প্রকৌশলী সামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী</strong></p> <p>সদস্য (উন্নয়ন), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)</p> <p> </p> <p><strong>আবু নাসের খান</strong></p> <p>চেয়ারম্যান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)</p> <p> </p> <p><strong>ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন</strong></p> <p>অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়</p> <p> </p> <p><strong>সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান</strong></p> <p>প্রধান নির্বাহী, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)</p> <p> </p> <p><strong>মামনুন মুর্শেদ চৌধুরী</strong></p> <p>সহসভাপতি, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট</p> <p> </p> <p><strong>আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান মুন্না</strong></p> <p>অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর</p> <p> </p> <p><strong>মো. জিয়াউল হক</strong></p> <p>পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা), পরিবেশ অধিদপ্তর</p> <p> </p> <p><strong>অধ্যাপক ড. তানভীর আহমেদ</strong></p> <p>পুরকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)</p> <p> </p> <p><strong>অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার</strong></p> <p>যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)</p> <p> </p> <p><strong>ড. আদিল মুহাম্মদ খান</strong></p> <p>সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স</p> <p> </p> <p><strong>শাহাদাত হোসেন</strong></p> <p>পরিচালক, রিহ্যাব</p> <p> </p> <p><strong>মীর তানভীর হোসাইন</strong></p> <p>সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)</p> <p> </p> <p><strong>আনিসুর রহমান চৌধুরী</strong></p> <p>আরবান ম্যানেজার, অক্সফাম</p> <p> </p> <p><strong>আসাদুর রহমান খান</strong></p> <p>সহসভাপতি, বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি</p>