<h3 style="color:#aaa; font-style:italic">দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)। জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশে এখন এক সম্ভাবনাময় খাত এলপি গ্যাস। দিন দিন দেশে এর চাহিদা বাড়ছে। গ্রাম কিংবা শহরে পাল্লা দিয়ে রান্নার কাজে বাড়ছে এলপিজির ব্যবহার। দেশে এখন ২০ থেকে ২৫ শতাংশ মানুষ এলপি গ্যাস ব্যবহার করছে। অবশ্য জনসংখ্যার বৃহৎ অংশ এখনো এই সুবিধার বাইরে। গ্রামাঞ্চলে অসংখ্য মানুষ কাঠ-কয়লা দিয়ে রান্না করে। এতে শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে নারীরা। জ্বালানি কাঠের জোগান দিতে গিয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্য এলপিজি একটি বিকল্প জ্বালানি হতে পারে। বাংলাদেশে এলপিজির সম্ভাবনা, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে গত ১৩ জুলাই এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (লোয়াব)-এর সহায়তায় এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছিল কালের কণ্ঠ। ‘বাংলাদেশে এলপিজির নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক ওই বৈঠকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের কোথাও সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটলেই এলপিজির ওপর দায় চাপানো হয়। এটি ঠিক নয়। কারণ দুর্ঘটনার জন্য সিলিন্ডারের কোনো ভূমিকা থাকে না। মূলত এলপি গ্যাস ব্যবহারকারীর অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই এলপি গ্যাস ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে বিতরণকারী কম্পানিগুলোকে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের। এতে এলপিজি নিয়ে মানুষের ভীতি কমবে; আস্থাও বাড়বে। এলপিজি নিয়ে দুই পৃষ্ঠার এই আয়োজন গ্রন্থনা করেছেন সায়েম টিপু, আরিফুর রহমান, সজীব হোম রায় ও তানজিদ বসুনিয়া। ছবি : লুৎফর রহমান</h3> <p> </p> <p><strong>এলপিজির</strong> <strong>ব্যবহার</strong> <strong>বাড়াতে</strong> <strong>দরকার</strong> <strong>অবকাঠামোর</strong> <strong>উন্নয়ন</strong></p> <p>ইমদাদুল হক মিলন</p> <p>আমরা জানি, দেশে ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক গ্যাস কমে আসছে। বিকল্প জ্বালানি হতে পারে এলপিজি। রান্নার কাজে বাংলাদেশে এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। রান্নার পাশাপাশি পরিবহনেও এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। অবশ্য এলপিজির ব্যবহার বাড়াতে অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। দক্ষিণ এশিয়ার ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও চীনে এলপিজি ব্যবহার বাড়ছে। <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1A.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />পরিবেশবান্ধব এই গ্যাস সঠিক <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1Q.jpg" style="float:right; height:1200px; margin:12px; width:232px" />নিয়মে ব্যবহার করলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। আমাদের দেশে এখনো অনেকে সিলিন্ডার ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানে না। অসতর্কতা, সচেতনতার অভাবে সিলিন্ডারের গুণগতমান যাচাই করা হয় না। এসব কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। সম্ভাবনার এলপি গ্যাস মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হলে অবশ্যই গ্রাহকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার রীতি ও সচেতনতা বাড়াতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে এলপিজি বিতরণকারী কম্পানিগুলোকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপন নিয়ে ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে অনুমতি আনতে অনেক সময় লেগে যায়। এলপিজি প্ল্যান্ট স্থাপন অনুমতি যাতে আরো সহজ হয়; সেটি নিশ্চিত করতে হবে। গত ১০ বছরে দেশে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে ২১ গুণের বেশি। বর্তমানে আট লাখ টন এলপিজি ব্যবহার হচ্ছে। যদিও চাহিদা আছে ৩০ লাখ টন। এলপিজির ব্যবহার আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আমরা জানি, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ আবাসিক গ্যাসের চাহিদা এলপিজি দিয়ে মেটানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। গ্রামাঞ্চলে অসংখ্য মানুষ কাঠ-কয়লা দিয়ে রান্না করে। এতে শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে নারীরা। জ্বালানি কাঠের জোগান দিতে গিয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ জন্য এলপিজি একটি বিকল্প জ্বালানি হতে পারে। অবশ্য এলপিজি ব্যবহারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিরাপত্তা আরো জোরদার করতে হবে। কারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্ক কাজ করে। জনসচেতনতা গ্রামগঞ্জে পৌঁছে দিতে হবে। অধিকাংশ দুর্ঘটনা গ্রাহকের অবহেলার জন্য হয়। এর ব্যবহার সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে। তবে এখানে রিটেইলারদের ভূমিকাও একটা বড় ব্যাপার। রিটেইলারদের কারণে দামে প্রভাব পড়ছে। আর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হোস পাইপও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলপিজিতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এলপিজির বাজার ও সরবরাহের যে বিশাল ব্যবস্থাপনা, এটা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সেরা। দেশের বন্দর ও অবকাঠামো খাতের যে অবস্থা এর পরও সাশ্রয়ী মূল্যে এলপিজি সরবরাহ করছে।</p> <p> </p> <p><strong>গ্রামেগঞ্জে</strong> <strong>জনপ্রিয়</strong> <strong>হয়ে</strong> <strong>উঠছে</strong> <strong>এলপিজি</strong></p> <p>মোস্তফা কামাল</p> <p>বর্তমানে বাংলাদেশে এলপিজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন একবার বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিল ক্লিনটন আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে গ্যাস বিক্রির জন্য চাপ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে আগে আমরা ৩০ বছরের মজুদ রেখে তারপর গ্যাস বিক্রির চিন্তা-ভাবনা করব। <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1B.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />তার আগে নয়। আমার সংবাদিকতা ক্যারিয়ারে আমি দীর্ঘদিন কূটনৈতিক প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছি। বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত একবার বললেন যে বাংলাদেশ গ্যাসের ওপরে ভাসছে। এ দেশে গ্যাসের কী পরিমাণ মজুদ আছে তার একটি হিসাব তিনি দিলেন। এ কথা শুনে তাঁর দেশে গ্যাসের কী পরিমাণ মজুদ আছে সেটি জানতে চেয়ে আমরা তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি তার কোনো হিসাব দিতে পারেননি। পুরো বিষয়টিকে এড়িয়ে গেছেন। বাংলাদেশের গ্যাস নিয়ে উন্নত দেশগুলোর আগ্রহ অনেক আগে থেকেই আছে। আমরা আসলেই গ্যাস সংকটে আছি। বাসাবাড়িতে লাইন টেনে গ্যাসের যে সংযোগ দেওয়া হয় এটি বিশ্বের কোথাও নেই। পৃথিবীর সর্বত্রই এলপিজি গ্যাসের ব্যবহার হয়। বাংলাদেশেও এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। বাংলাদেশে এলপি গ্যাসের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ৪০ বছর বাংলাদেশে এলপিজি গ্যাস বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। গাড়িতে সিলিন্ডারের পরিবর্তে কিভাবে এলপিজিতে রূপান্তর করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। একসময় মানুষ কাঠ, কেরোসিন তেলের সাহায্যে রান্নার কাজ করত। পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং এখন এলপিজি; এই পরিবর্তনগুলো সাধিত হয়ে আসছে। আমার বাড়ি একদম প্রান্তিক অঞ্চলে। সেখানে বিদ্যুৎ গেছে আরো ৪০ বছর আগে। অথচ এলপিজি গ্যাস গেছে মাত্র তিন চার বছর আগে। কিন্তু এত অল্প সময়ের মধ্যেও ঘরে ঘরে এলপি গ্যাসের ব্যবহার হচ্ছে। আগে গ্রামে যেখানে কাঠ ব্যবহার হতো, এখন সেখানে এলপিজির ব্যবহার হচ্ছে। গ্রামের এই পাল্টে যাওয়া দেখে ভালো লেগেছে। তবে এলপি গ্যাসের নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গ্রামের অনেক মানুষ এখনো এলপিজির ব্যবহার সম্পর্কে ভালোভাবে জানে না। অনেক সময় দেখি নকল কম্পানি এলপিজির অপব্যবহার করছে। ফলে নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েই গেছে।</p> <p> </p> <p><strong>এলপিজির</strong> <strong>বিষয়ে</strong> <strong>সচেতনতা</strong> <strong>বাড়াতে</strong> <strong>জনপ্রতিনিধিদের</strong> <strong>সঙ্গে</strong> <strong>বসুন</strong></p> <p>নূরুল ইসলাম তালুকদার</p> <p>এলপিজির নিরাপত্তা সমস্যার ক্ষেত্রে ঢালাওভাবে গ্রাহকদের দোষ দিলে হবে না। এলপি গ্যাস সিলিন্ডার গ্রামের মানুষরাও ব্যবহার করে। তারা অনেকেই অশিক্ষিত। এটার ব্যবহার ও শেখানোর দায়িত্ব এলপিজি ব্যবসায়ীদের নিতে<img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1C.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" /> হবে। এলপিজি গ্যাসের জন্য কেমন ঘর লাগবে, জানালা থাকতে হবে কি না, তা ব্যবসায়ীদের বলতে হবে। গণসচেতনতা, গণজাগরণের বিকল্প নেই। আপনারা ব্যবসায়ীরা এটার ব্যবস্থা করবেন। প্রয়োজনে জনপ্রতিনিধি, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিয়ে বসেন। পাশাপাশি এলপিজির ব্যবহার নির্দেশিকা বাংলায় লেখার ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্যবহারবিধি জানাতে হবে। এলপিজি ব্যবসায় লাইসেন্স ফি এখন একটু বেশি থাকতে পারে। একসময় এটি হয়তো কমে যাবে। এমনও সময় আসবে লাইসেন্স ফি লাগবে না। আগে একসময় রেডিও, টিভি কিনলে লাইসেন্স লাগত। এখন লাগে না। সরকারের সঙ্গে লাইসেন্স ফি নিয়ে কথা বলুন আপনারা। নিশ্চয়ই একটা পথ বেরিয়ে আসবে। তবে লাইসেন্স লাগবে। এতে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে। আপনারাও লাভ একটু কম করেন। দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখেন। যাতে সবাই এটা ব্যবহার করতে পারে। আইন দিয়ে সব কিছু হয় না। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় কোনো আইন ছিল না। পরে সেটাই আইন হয়ে গেছে। তাই সচেতনতাও আইন দিয়ে হবে না। আপনারা যাঁরা এলপিজি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত আপনাদের কী কী সমস্যা আছে লিখিত আকারে জানান। সমস্যাগুলো বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তুলে ধরা হবে। সমস্যাগুলো নিয়ে সেখানে আলোচনাও হবে। টেকসই ব্যবসার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।</p> <p>গ্যাস বিস্ফোরণের প্রতিবেদন প্রকাশের সময় বলা হয় গ্যাস সিলিন্ডার। কিন্তু বলা হয় না কোনটা। এটা কি এলপিজি, না প্রাকৃতিক গ্যাস। এ বিষয়ে বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।</p> <p> </p> <p><strong>এলপিজিতে</strong> <strong>গণহারে</strong> <strong>লাইসেন্স</strong> <strong>দেওয়া</strong> <strong>বন্ধ</strong> <strong>করতে</strong> <strong>হবে</strong></p> <p>আজম জে চৌধুরী</p> <p>বাংলাদেশে দিন দিন এলপিজি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এখন থেকে পাঁচ বছর আগেও বাংলাদেশে এলপিজির ব্যবহার ছিল বছরে মাত্র ৮০ হাজার টন। এখন সেটি বেড়ে আট লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। তখন মাত্র দু-একটি কম্পানি এলপিজি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল। যদিও এখন এই সংখ্যা অনেক বেশি। দেশে গ্যাসের মজুদ নিয়ে একসময় বেশ আলোচনা হয়েছিল। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও নরওয়ের দুটি কম্পানি আমাদের গ্যাসের ওপর <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1D.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />একটি সমীক্ষা করেছিল। সমীক্ষা শেষে তারা জানিয়েছিল, বাংলাদেশে ৩৩ ট্রিলিয়ন গ্যাস মজুদ আছে। তবে এগুলো কোনো প্রমাণিত তথ্য নয়। কিছু তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে তারা এসব তথ্য জানিয়েছিল। আর সেই তথ্যের ভিত্তিতেই ধারণা করা হয়, দেশে গ্যাসের যে মজুদ আছে; তা আগামী ৫০ বছর ব্যবহার করা যাবে। যদিও এখন বলা হচ্ছে আগামী আট-১০ বছরে আমাদের গ্যাসের মজুদ শেষ হয়ে যাবে। নতুন প্রযুক্তির কারণে এলপিজির ব্যবহার এখন অনেক সহজ। তবে এর নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে হবে। ২০১৭ সালে সরকার নতুন পেট্রোলিয়াম নীতিমালা করেছিল। এর পর থেকে দেশে এলপিজির ব্যবহার বাড়তে থাকে। এর ফলে বর্তমানে বছরে আট লাখ টন এলপিজি ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের ধারণা, এলপিজির ব্যবহার আরো বাড়বে। আগামী পাঁচ বছরে ২০ লাখ টনে যাবে এর ব্যবহার। অবশ্য এই অগ্রগতিতে প্রথম যে চ্যালেঞ্জ তা হলো এলপিজি ব্যবহারে নিরাপত্তা। এলপিজির ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে এলপিজি ব্যবসার জন্য লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে গণহারে। লাইসেন্স দেওয়া দোষের কিছু নয়। তবে বাজারের সক্ষমতা আছে কি না; যাঁরা উদ্যোক্তা আছেন তাঁদের নিরাপত্তা আছে কি না—এসব দিকও দেখা দরকার।। অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ব্যবসার পরিকল্পনা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।</p> <p>এখন দেখা যাচ্ছে রাস্তাঘাটে বিভিন্ন জায়গায় পাঁচ থেকে সাত কোটি টাকা দিয়ে বাল্ক এলপিজি কিনে নিয়ে ফিলিং করে। এগুলো রাস্তাঘাটে বিক্রি হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে এলপিজির ওপর মানুষের ভীতি তৈরি হচ্ছে। এভাবে দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে এলপিজির ওপর দেশের মানুষ নিরুৎসাহিত হবে। এর ফলে এলপিজির ব্যবহার বাড়ানোর যে পরিকল্পনা আছে, তা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই জোর দিতে হবে এলপিজি নিরাপত্তার বিষয়ের ওপর। যদিও এই পর্যন্ত যত দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার একটিও এলপিজি সিলিন্ডারের কারণে নয়। মানুষের অসচেতনতায় দুর্ঘটনা ঘটছে। এলপিজি যারা ব্যবহার করে তারা সাধারণত গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। তাদের ওপর যদি ১০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়; তাহলে এলপি গ্যাস বিকাশের পথ বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে এলপিজির দাম বৃদ্ধি পাবে। তবে এলপিজি অ্যাসোসিয়েশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দাম বাড়ানো হবে না। কারণ আমরা চাই, এলপিজি সম্প্রাসারণ হোক।</p> <p> </p> <p><strong>এলপিজি</strong> <strong>দুর্ঘটনা</strong> <strong>রোধ</strong> <strong>করতে</strong> <strong>পারে</strong> <strong>‘</strong><strong>গ্যাস</strong> <strong>ডিটেক্টর</strong><strong>’</strong></p> <p>ড. ইজাজ হোসেন</p> <p>এলপিজিতে দুটি ইস্যু আছে। একটি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, অন্যটি ভবিষ্যৎ ইস্যু। নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। সারসংক্ষেপ হলো—গ্রাহকের অসচেতনতা থাকলে দুর্ঘটনা ঘটে। নতুন কোনো প্রযুক্তি এলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় নিই। এর ব্যাপক ব্যবহার হয় এবং ব্যবহারে সচেতন না থাকার কারণে দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। উদাহরণ হিসেবে বিদ্যুেক নেওয়া যেতে পারে। এখনো আমাদের <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1E.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />অনেকেই জানে না—কিভাবে প্লাগটা খুলতে হবে, লাইন দিতে হবে। জনসংখ্যার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মোটরযানের সংখ্যাও বেড়েছে। এর ফলে এখন নিয়মিত মোটরযান দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এলপিজির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তাই এর জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কিভাবে এলপি গ্যাস ব্যবহার করতে হয়, তা গ্রাহকদের জানাতে হবে। তা ছাড়া দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে মানসম্মত হোস পাইপের দিকে নজর দিতে হবে। বাতাসের থেকে এলপি গ্যাস ভারী। তাই পাইপ লিক বা হোস পাইপে সমস্যা থাকলে এলপিজি গ্যাস ঘরের নিচে পড়ে থাকে। যে কারণে ঘর আবদ্ধ থাকলে বা কোনো জানালা না থাকলে বা খোলামেলা পরিবেশ না থাকলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য এলপিজি গ্যাসের দুর্ঘটনা রোধ করতে পারে ‘গ্যাস ডিটেক্টর’। এটার দাম অনেক কম। মাত্র এক হাজার টাকা। আমি একাধিক ডিটেক্টর ব্যবহারের পরামর্শ দেব। এতে ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা কমে যাবে বলে আশা করি। আগে এর দাম অনেক বেশি থাকায় উন্নত দেশগুলোতে এটি পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন সবখানেই এটি পাওয়া যায় এবং খুবই সাশ্রয়ী। কয়েক দিন আগে দেখলাম এক লোক লাথি দিয়ে গাড়ি থেকে এলপিজি নামাচ্ছে। বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। এখন এলপিজিতে অনেক বিনিয়োগকারী। এখানে কে টিকে থাকবে আর কে থাকবে না তা জানি না। এখন বছরে আট লাখ টন এলপিজি ব্যবহার হচ্ছে। এটা বেড়ে ২০ থেকে ৩০ লাখ টনে উন্নীত হবে। যাদের নতুন গাড়ি আছে তাদের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—আমি সিএনজিতে চালাব নাকি এলপিজিতে যাব? আমি মনে করি, এখানে এলপিজির ভালো সম্ভাবনা আছে। দুর্ঘটনা ঘটলেই বলা হয়, সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়েছে। তখন এটা এলপিজির ঘাড়ে এসে পড়ে। এটা ঠিক না। এতে ভুল বার্তা যাচ্ছে। সিলিন্ডারের মতো ভয়ংকর একটি জিনিস গ্রাহকরা এর ব্যবহার করছে অসচেতনতার সঙ্গে। ঠিক যেভাবে লাকড়ির ব্যবহার করা হয়। কিন্তু লাকড়ি আর গ্যাস এক জিনিস না। বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই বার্তাটা ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। এ জন্য সচেতনতা অবশ্যই প্রয়োজন। এখন এলপিজি দুর্ঘটনা ঘটলেই বলা হয়, সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়েছে। তখন এটা এলপিজির ঘাড়ে এসে পড়ে। এটা ঠিক না। এতে ভুল বার্তা যাচ্ছে।</p> <p> </p> <p><strong>গ্রামে</strong> <strong>সচেতনতা</strong> <strong>কর্মসূচি</strong> <strong>আরো</strong> <strong>জোরদার</strong> <strong>করতে</strong> <strong>হবে</strong></p> <p>মো. মাসুদ খান</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1F.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />এলপিজি খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের যে বিস্ফোরক অধিদপ্তর রয়েছে তাদের পক্ষে সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না। এলপিজির সিংহভাগ ভোক্তা শহরাঞ্চলের বাইরে।  বর্তমানে দেশের গ্রামাঞ্চলগুলোতেও এলপিজির ব্যবহার বড় আকারে বেড়েছে। তবে এর প্রধান দুর্বলতা নিরাপত্তা। এটা নিশ্চিত করতে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। এলপিজিতে সবার আগে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া জনসচেতনতার যেসব কর্মসূচি আছে; সেগুলোকে বেগবান করতে হবে। কেননা গ্রামের সাধারণ মানুষ এর বড় ভোক্তা। বলা হয়ে থাকে আমাদের দেশে ভোক্তার কারণেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু যখন একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে, তখন সে ব্যাপারে সাধারণ মানুষের কোনো কৌতূহল থাকে না। এলপিজি ব্যবহার যে একটি বিপজ্জনক খাত, তারা এটা প্রথমেই ধারণা করে থাকে।  এটা আমি নিজেও মনে করি। এটা থেকে পরিত্রাণের একটাই উপায়, তাহলো সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তবে খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, এটা আপনারা করছেন। আমার পরামর্শ—এই কর্মসূচিকে আরো জোরদার করতে হবে। এ জন্য গ্রামগঞ্জের চায়ের দোকানগুলোকে প্রচারণার আওতায় আনতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।</p> <p> </p> <p><strong>সঠিক</strong> <strong>তথ্য</strong> <strong>কোথাও</strong> <strong>পাওয়া</strong> <strong>যায়</strong> <strong>না</strong></p> <p>ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান</p> <p> </p> <p>আমাদের জ্বালানির যে তথ্যগুলো আছে তার সঠিক তথ্য কোথাও পাওয়া যায় না। এই যে এলপিজির আমদানি, বিপণন, বিক্রয় এগুলো নিয়ে কে ভণিতা করছে কোথা থেকে করছে তা আমি খুঁজে পাই না। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে জানতে চেয়েছি; বিইআরসির কাছেও জানতে চেয়েছি। তারা শুধু আমদানির অনুমতি দেন। তবে কতটুকু আমদানি করা হয়েছে সেই তথ্য তাদের কাছে নেই। <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1G.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />একই সঙ্গে এটাও ভাবলাম যে যেটা আমদানি হচ্ছে সেটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাওয়া যাবে। ওনারা যে ডাটা দিয়েছে সেখানেও তথ্যের অনেক কমবেশি লক্ষ করলাম। বিষয়টি তুলে ধরার প্রধান কারণটি কোনো একটি সেক্টরের উন্নয়ন সাধন করার জন্য পরিকল্পনা করতে গেলে তো সেই সেক্টরের তথ্য লাগবে। কিন্তু এই সেক্টরে সেই তথ্য নেই। অনেকেই আক্ষেপের সুরে বললেন যে বিইআরসি সমস্যাগুলো দেখে না, বিইআরসিকে অবশ্যই বিষয়গুলো দেখতে হবে এবং তাদেরই সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে হবে এবং সুবিধা-অসুবিধাগুলো দেখতে হবে। যেমন এলপি গ্যাসের চেয়ে লাইন গ্যাসের মূল্য এত কম। এখন যদি আমি এলপি গ্যাসকে প্রোমোট করতে চাই তাহলে লাইন গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে। কিন্তু এর সঙ্গে অন্য ইস্যুগুলোও আছে। বিপণন নেটওয়ার্ক আছে, আমদানি আছে। এগুলোকেও সমর্থন দিতে হবে। কিন্তু সেগুলো প্ল্যান করতে গেলে তো সঠিক তথ্যগুলো লাগবে। এটি সঠিক যে সারা দেশে গিয়ে লাইন গ্যাসের সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে গিয়ে লাইন সংযোগ স্থাপন অসম্ভব। আপনি যদি পাহাড়ি এলাকার কথা চিন্তা করেন ওখানে লাইন গ্যাসের চেয়ে এলপি গ্যাস দেওয়া সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত। প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তাই যদি হয় তাহলে এলপিজি গ্যাসের যে সুবিধা-অসুবিধা আছে সেগুলো আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে হবে। যাই হোক, আমি এলপি গ্যাসের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। বিভিন্ন জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটছে কিন্তু দোষ পড়ছে এলপি সিলিন্ডারের ওপর। এলপি গ্যাসের সিলিন্ডারে অল্প প্রেসার থাকে তাই দুর্ঘটনার সুযোগ কম সেখানে গাড়ির সিলিন্ডারে প্রেসার বেশি থাকে। এলপি গ্যাসের দুর্ঘটনার সুযোগ নেই, দুর্ঘটনা তখনই ঘটে যখন সংযোগ লিক করে। এটি যে শুধু এলপিজি গ্যাসের ক্ষেত্রেই ঘটে এমন নয়, প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রেও এটি হয়ে থাকে। এলপিজি বাতাসের তুলনায় দুই গুণ ভারী। ব্যবহারের সময় এটি যেন লিকেজ না হয় সে বিষয়ে ব্যবহারকারী সচেতন থাকলেই হবে। আগে দেখা যেত, যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো তারাই শুধু এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করত এবং তাদের রান্নাঘরও বড় ছিল। এখন যেহেতু এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে, এখন অনেক মানুষ এটি ব্যবহার করছে। এখন যেহেতু এর জনপ্রিয়তা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে তাই এর আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো মানুষকে জানিয়ে দিতে হবে। এলপিজির সঠিক ব্যবহার, সঠিক ব্যবস্থাপনা, রান্নাঘরে চুলার কতটুকু দূরত্বে সিলিন্ডার থাকবে এ রকম আনুষঙ্গিক সব বিষয় নিয়ে ব্যবহারকারীদের সচেতন করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া তো অবশ্যই পাশাপাশি যে কম্পানিগুলো এই যারা এলপিজির ডিস্ট্রিবিউশন করেন তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। এলপিজির যথার্থ ব্যবহার নিয়ে ব্যবহারকারীদের সচেতনতার মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে তাদেরই। পাশাপাশি ব্যবহারবিধিগুলো বাংলায় লিখে সিলিন্ডারের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। ব্যবহারকারীদের চোখের সামনে থাকলে সবাই সচেতন হবে। ফলে সমন্বিতভাবে গ্রাহকদের সচেতন করা গেলে এলপিজি সিলিন্ডারের দুর্ঘটনার বিষয়ে যে অভিযোগগুলো আসছে তা দূর করা সম্ভব হবে। এতগুলো কম্পানি থাকার পরও কেন সেকেন্ডারি ফিলিংয়ের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে  না তা আমার বোধগম্য নয়। বিষয়গুলো নিয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।</p> <p> </p> <p><strong>নদীগুলোর</strong> <strong>ড্রেজিং</strong> <strong>প্রয়োজন</strong></p> <p>সৈয়দ ইউসুফ শাহরিয়ার</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1H.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />বাংলাদেশে এলপিজির দাম কমানোর কিছু সুযোগ আছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পরিবহন খরচ। পরিবহনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কোন জায়গা থেকে এলপিজি আনবেন। এ ছাড়া জাহাজের আকার কত বড় সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। এলপিজির দাম কমাতে আপনি একটি বড় জাহাজ কতটা কাছে নিয়ে আসতে পারবেন। আপনি যদি ৫ কিংবা ১০ হাজার টনের একটি ভ্যাসেল পাঁচ হাজার মাইল বহন করেন, সেখানে প্রতি ইউনিটে যত টাকা খরচ হবে ৫০ হাজার কিংবা এক লাখ টন বহন করলে ইউনিট খরচ কমে আসবে। আর দীর্ঘ মেয়াদে মূল্য কমাতে গেলে আমাদের বড় সংরক্ষণাগার করতে হবে, ড্রেজিং করতে হবে যেগুলোতে সাত থেকে আট বছর সময় লাগবে। বাংলাদেশের এলপিজির ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কিছু করার আছে। এখানে চাহিদা কোনো বিষয় নয়, আপনারা ছোট ছোট কিস্তিতে গ্যাস অনেকের কাছ থেকে কেনেন। যদি বাংলাদেশের এলপিজি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সহযোগিতার মাধ্যমে মোট চাহিদাটা নিরূপণ করা যায় সে ক্ষেত্রে আমরা একটা ভূমিকা পালন করতে পারি বলে আমার মনে হয়। খুব দ্রুতই সে ভূমিকা পালন করতে পারি যেখানে মূল্য কমিয়ে আনা সম্ভব। বাংলাদেশের খুব কাছেই আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দর আছে। সব কিছু মিলে বাংলাদেশে থেকে জাহাজ যেতে এক দিনের মতো সময় লাগবে। এবং এটি (অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে গ্যাস জোগান দেওয়া) খুবই সম্ভব। এর আগে আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন ট্যাক্স বাড়ছে, অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচও বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে আপনারা দেখেন যদি একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব হয় তাহলে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব। তিন হাজার কিংবা পাঁচ হাজার টনের জোগানে দাম কমানোর সুযোগ নেই কিন্তু যদি ২০ হাজার টন দিতে বলেন সেখানে কমানোর অনেক সুযোগ আছে।</p> <p> </p> <p><strong>হোস</strong> <strong>পাইপের</strong> <strong>মান</strong> <strong>উন্নত</strong> <strong>করতে</strong> <strong>হবে</strong></p> <p>মুজিবুর রহমান</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1I.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />যখন কোনো গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ঘটে, তখন এটা এলপিজি সিলিন্ডার নাকি সিএনজি গ্যাস সিলিন্ডার তা গণমাধ্যমে বলা হয় না। এতে মানুষের মনে ভয় ঢুকে যায়। এটা নির্দিষ্ট করে বলতে হবে। মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন, নিউজ পেপার অ্যাসোসিয়েশন এবং এলপিজি অ্যাসোসিয়েশন মিলে কাজ করতে পারে। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এখন বাংলাদেশের বড় বড় কম্পানিগুলো গ্রামে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করছে। এটা আরো বাড়াতে হবে। এলপি গ্যাসের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে না, বরং হোস পাইপের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ বিস্ফোরক বিভাগ এই হোস পাইপের মান নির্ধারণ করে দিচ্ছে না। তাই অনেক ক্ষেত্রে মানহীন বা কম মানের হোস পাইপ ব্যবহার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিস্ফোরক বিভাগের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। পরিবহনের ক্ষেত্রে বিআরটিএ এবং বিস্ফোরক অধিদপ্তরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অন্যথায় এলপিজি গ্যাস পরিবহনের ক্ষেত্রে ট্রাকের বডির যে সমস্যা রয়েছে তা দূর হবে না। ট্রাকগুলোকে একটু মডিফাই করলেই এ সমস্যা দূর হবে। সরকারকে আগে ঠিক করতে হবে কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দিবে। সরকারের পক্ষ থেকে কখনো বলা হয়, এলএনজিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। আবার কখনো বলা হয়, এলপিজিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এলপিজি খাতকে বেশি গুরুত্ব দিলে এ শিল্প আরো বড় হবে। বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা এ খাতে দেড় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তাদের প্রত্যেকের বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। আর তাদের বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়া মানে ব্যাংকিং খাত ঝুঁকির মধ্যে পড়া। তাই আশা করি, সরকার দীর্ঘমেয়াদি একটি স্থিতিশীল পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। আর এটি হলে সবার জন্য মঙ্গল হবে।</p> <p> </p> <p><strong>ফায়ার</strong> <strong>সার্ভিসের</strong> <strong>কর্মকর্তাদের</strong> <strong>মানসিকতায়</strong> <strong>পরিবর্তন</strong> <strong>জরুরি</strong></p> <p>মোল্লাহ আমজাদ হোসেন</p> <p>এলপিজি নিয়ে যেসব নিয়ন্ত্রক (রেগুলেটরি) সমস্যা আছে; সেগুলো নিয়ে আলোচনার সময় সরকারের কোনো প্রতিনিধিকে পাওয়া যায় না। এটা একটা বড় সমস্যা। এলপিজি খাতটিকে এককভাবে রাষ্ট্রের কে নিয়ন্ত্রণ <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1J.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />করবে, তা ঠিক করা যায়নি। বিপিসি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কারণ, সংস্থাটি নিজেই এলপি গ্যাসের ব্যবসা করে। তা হলে এখানে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হয়। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান করা যেত। কিন্তু এলপি গ্যাস নীতিমালায় মন্ত্রণালয়কেও যোগ করা হয়েছে। এতে করে হয়রানি আরো বেড়েছে। এখন লাইসেন্স নবায়ন করা, এলপিজি আমদানির তথ্য দেওয়াসহ নানা কাজের জন্য কম্পানিগুলোকে অনেক হয়রানি হতে হয়। এলপিজির ক্ষেত্রে বিইআরসি কিছুই করে না। তার পরও তার কাছ থেকে ফি দিয়ে অনুমতি নিতে হয়। আমাদের ফায়ার সার্ভিসের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা জরুরি। কারণ, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলিন্ডার দুর্ঘটনা। তাই ফায়ার সার্ভিসের মানসিকতায় পরিবর্তন আনা জরুরি।</p> <p>আমাদের দেশে এলপিজির দুর্ঘটনা ঘটছে এক্সেসরিজের জন্য। সিএনজির ক্ষেত্রেও যেমন ঘটে। এলপিজির ক্ষেত্রেও সেটা ঘটছে। বাংলাদেশের মতো এত নিম্নমানের হোস পাইপ এবং রেগুলেটর আর করা হয় না। এটা নিয়ে আমি নিজে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কোনো স্ট্যার্ন্ডার্ড নেই। এই জায়গাটাতে বোধহয় কাজ করা দরকার। আর মিডিয়া যেখান থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন করে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ সেটা হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। যদি এই বিভ্রান্তিটা দূর করতে হয় তাহলে প্রথমে ফায়ার সার্ভিসকে এডুকেট করতে হবে। কারণ গ্যাস দুর্ঘটনা হলে তাদের কাছে প্রতিবছরে যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় সেটি আমি সংগ্রহ করেছি। সেখানেও লেখা আছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। মানে তাদের প্রতিবেদনের শিরোনামে এটা লেখা—সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। কারণ প্রতিবেদনে যেখানকারই হোক দুর্ঘটনা হলে তার প্রথম সোর্স থাকে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।</p> <p> </p> <p><strong>এলপিজি</strong> <strong>বিকাশে</strong> <strong>কাঁধে</strong> <strong>কাঁধ</strong> <strong>মিলিয়ে</strong> <strong>কাজ</strong> <strong>করতে</strong> <strong>হবে</strong></p> <p>তোফাজ্জল হক</p> <p>আমি মনে করি, বাংলাদেশে এলপিজির ব্যবহার বাড়ানো এবং এর ব্যাপক সম্ভাবনা আছে গ্রামে। গ্রামের মানুষকে উজ্জীবিত করতে তাদেরকে এলপিজির ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে এলপিজি ব্যবসায়ীদের একটা গণ-আন্দোলন করতে হবে। এখানে কোনো বাজার প্রতিযোগিতা চলবে না। আমরা ভারতবর্ষে তিনটি অয়েল কম্পানি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছি। আমাদের ৬০ জেলায় প্রত্যেক অয়েল কম্পানির সেলস অফিস <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1K.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />আছে। সেখানে তারা স্থানীয়দের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করছে। আমরা ২০১৪ সালে একটা কর্মসূচি নিয়েছিলাম ধূমপানমুক্ত গ্রাম ঘোষণার। ৬০০টা সেলস অফিস প্রতিবছর ১০টি করে গ্রামকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণা করবে। আমার মনে হয়,  আমরা যদি তিনটি অয়েল কম্পানি মিলে ভারতের সাড়ে ৩২ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকা কাভার করতে পারি পাঁচ বছরে; বাংলাদেশে এক লাখ ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটার কাভার করা এটা ২৫টা এলপিজি অপারেটরের পক্ষে অসম্ভব নয়। এলপিজিতে যে দুর্ঘটনা হয় মূলত তার জন্য দায়ী হোস। এটা একটা সত্যিকারের বড় সমস্যা। সুতরাং বিশ্বমানের এলপিজি হোস নিশ্চিত করতে হবে। ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন ভারতের সবচেয়ে বড় সরকারি সংস্থা। আমরা গত বছরের ফরচুন ফাইভ হান্ড্রেডে র‌্যাংকিংয়ে ১৩৭তম অবস্থানে ছিলাম। ভারতে ৫০ শতাংশ পেট্রোলিয়াম পণ্যের মার্কেটিং এবং রিফাইনিংয়ের দায়িত্ব ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন করে থাকে। এলপিজি তার মধ্যে একটি অন্যতম পণ্য। আমরা পুরো ভারতে ৭০ কোটি মানুষের সঙ্গে যুক্ত এলএনজি সরবরাহের ব্যাপারে। বাংলাদেশে এলপিজির বাজার দিন দিন বাড়ছে। চার বছর ধরেই দেখছি এর বাজার বাড়ছে। ভারতেও এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। ভারতে এখন একমাত্র পণ্য এলপিজি যেটা ডাবল ডিজিটে প্রবৃদ্ধি করছে। সেটা সম্ভব হয়েছে ২০১৪ সালে একটা প্রগ্রাম উদ্বোধনের কারণে। যেটার নাম ছিল প্রধানমন্ত্রী উজলা জুজলা প্রগ্রাম। যার মাধ্যমে ডিপিএল পরিবারের যারা সমাজের একেবারে নিচুস্তরের নারীদের নামে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা একটা ডিপোজিট ফ্রি সংযোগ। এই জুজলার আওতায় প্রায় সাড়ে আট কোটি পরিবারকে গত পাঁচ বছরে এলপিজি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এটি একটি রেকর্ডও। আমরা ভারতে তিনটি কম্পানি এলপিজি সরবরাহ করে থাকি। এই তিনটি সরকারি সংস্থা। এদের মধ্যে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন ৫০ শতাংশ জিম্মাদার।</p> <p> </p> <p><strong>পাঁচ</strong> <strong>বছরে</strong> <strong>এলপি</strong> <strong>গ্যাসের</strong> <strong>চাহিদা</strong> <strong>২০</strong> <strong>লাখ</strong> <strong>টন</strong> <strong>হবে</strong></p> <p>অরুণ কর্মকার</p> <p>এলপিজি নিয়ে গ্রাহকের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে বেশি বেশি সেমিনার, সিম্পোজিয়াম অথবা ওয়ার্কশপের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যৌথভাবে একটি ক্যাম্পেইনেরও উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে জনসম্পৃক্ত যে বিষয়গুলো রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ইস্যু এলপিজি খাত। পাঁচ বছর আগেও এলপিজির চাহিদা ছিল ৮০ হাজার টন। সেখানে চাহিদা এখন আট লাখ টন হয়ে গেছে। আগামী পাঁচ বছর পরে এই <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1L.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />চাহিদা ২০ লাখ টনে ছাড়িয়ে যাবে বলে আমার ধারণা। কারণ মানুষের যেমন সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে তেমনি মানুষ এখন কাঠের চুলা পরিবর্তন করতে খুবই আগ্রহী এবং গ্যাসের দিকে ঝুঁকছে। এরই মধ্যে এলপি গ্যাস গ্রামগঞ্জে চলে গেছে। পাইপ গ্যাসের সঙ্গে এলপি গ্যাসের কোনো তুলনা করার প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি। কারণ পাইপলাইন গ্যাস দেশের সব মানুষকে দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। যদি আমরা গ্যাসে সমৃদ্ধ থাকি গ্যাসে ভাসিও তার পরও এটি সম্ভব হবে না। কারণ এটি অর্থনৈতিক লাভবান হবে না। ওই গ্যাস যদি ইন্ডাস্ট্রিতে দিই, বিদ্যুৎ বানাই কিংবা সার তৈরিতে ব্যবহার করি তাহলে বিষয়টি অনেক বেশি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। বাণিজ্যের কিছু দিক থেকে এলপি গ্যাসের ব্যবহার বাড়তেই থাকবে এবং সরকারেরও নীতি সেটাই। কাজেই এলপি গ্যাসের সম্ভাবনাটা এখানে অনেক বেশি। আগামী পাঁচ বছরে এলপি গ্যাসের চাহিদা ২০ লাখ টন হবে। এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এখন গ্যাসের দামের বিষয়ে একটু দৃষ্টিপাত করতে চাই। পাইপলাইন গ্যাস ও এলপি গ্যাসের গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য বিরাজমান। পাইপলাইনের গ্যাসে বাসায় দুই চুলায় খরচ হয় ৯৭৫ টাকা। আর আপনি যদি মিটারে ব্যবহার করেন তাহলে খরচ ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার বেশি হবে না। ৪০০ টাকাও হতে পারে। খুব ব্যবহার করলেও ৬০০ থেকে ৬৫০ এর মধ্যে। একই সময়ে যদি বাসায় দুটি সিলিন্ডারের কথা ধরি, ১২ লিটারের দুই সিলিন্ডারে খরচ তিন গুণেরও বেশি। এই যে বৈষম্য, এই বৈষম্যটা কমাতে হবে। তাহলে এলপি গ্যাসের দাম কমাবেন কিভাবে? এলপি গ্যাস তো আমদানি করা হয়। আমদানি মূল্যের ওপর তো আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তাহলে কমবে কিভাবে? সরকার গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরও এখানে যথেষ্ট পরিমাণে ভর্তুকি দিচ্ছে। আগামী বছরও সাত-আট হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। তাহলে কেন এলপি গ্যাসে দেওয়া হবে না? জ্বালানি নিরাপত্তা মানে শুধু জ্বালানি পাওয়া না। নিরাপদ জ্বালানি ও সাশ্রয়ী জ্বালানি; সাশ্রয়ী জ্বালানি বললেই তো হচ্ছে না, তার জোগান থাকাটাও একটা ব্যাপার। দামের ক্ষেত্রে এই বৈষম্যটা কমাতে হবে। এই জায়গায় মূল ভূমিকা সরকারের। যদিও এলপি গ্যাসের বিষয়টি বিইআরসি নিয়ন্ত্রণ করছে না। কিন্তু তার পরও তাদের একটা মধ্যবর্তী ভূমিকা আছে। আমাদের দাবি বিইআরসি এটি নিয়ন্ত্রণ করুক। পাইপ গ্যাস যারা ব্যবহার করে তারা তো মোট গ্রাহকের ১২-১৫ শতাংশ। তাহলে বাকি ৮৫ থেকে ৮৮ গ্রাহকের অধিকারের বিষয়ে ভোক্তা সংগঠনগুলো চুপ কেন? ট্যাক্স, এআইটি এগুলো কমিয়ে দিতে পারে। যারা এলপি গ্যাস ব্যবহার করে তাদের জন্য মাসিক একটি ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে পারে। এখানে ভর্তুকি দিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিলে অবৈধ সংযোগে গ্যাস চুরি কমবে।</p> <p> </p> <p><strong>গ্যাসের</strong> <strong>দাম</strong> <strong>বেশি</strong> <strong>রাখার</strong> <strong>জন্য</strong> <strong>দায়ী</strong> <strong>পরিবহন</strong> <strong>ব্যবস্থা</strong></p> <p>রণজিৎ জয়াবর্ধনা</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1M.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />এলপি গ্যাসের বাজারে ইতিমধ্যে অনেক খেলোয়াড় (ব্যবসায়ী) চলে এসেছে। ছোট মার্কেটের জন্য এটি অনেক বেশি। এ কারণে আমরা একে অপরের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা করছি। নিজেদের শেষ করে দিচ্ছি। এলপি গ্যাসের দাম বাড়ার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা একটা বড় সমস্যা। পরিবহন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এলপি গ্যাসের দাম বাড়তি। কমানো যাচ্ছে না। নদীর নাব্য সংকট বড় সমস্যা। নাব্য সংকট দূর করতে হলে জোর দিতে হবে ড্রেজিংয়ের ওপর। নদীর ড্রেজিং করতে পারলে বড় বড় জাহাজ অনেক ভেতরে আসতে পারবে। তখন খরচ অনেক কমে আসবে। তবে এলপিজির আরেকটি চ্যালেঞ্জ—এর নিরাপত্তা ও সচেতনতা। গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।</p> <p> </p> <p><strong>এলপিজির</strong> <strong>কারণে</strong> <strong>যখনই</strong> <strong>চাই</strong> <strong>রেস্টুরেন্ট</strong> <strong>দিতে</strong> <strong>পারি</strong></p> <p>খন্দকার রুহুল আমিন</p> <p>দীর্ঘদিন ধরেই আমি বাণিজ্যিক রেস্তোরাঁ এবং শিল্প খাতের ব্যবসা করে আসছি। দুই জায়গাতেই এলপিজির ব্যবহার  হয়। একসময় অনেক টাকা খরচ করে এবং ভালো সাজসজ্জা করেও গ্যাস লাইনের কারণে রেস্টুরেন্ট চালাতে পারতাম না। কারণ গ্যাস লাইন সংযোগ <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1N.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />পেতাম না। তবে এখন এলপিজির কারণে এ অসুবিধা নেই। যখনই রেস্টুরেন্ট খুলতে চাই এখন দিতে পারি। শিল্প খাতেও আমরা এলপিজি ব্যবহার করছি। নিরাপত্তা সচেতনতা ও প্রচার এই তিনটি বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া গেলে আমাদের এলপিজি নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক অনেকটা কেটে যাবে। এবার বাসাবাড়িতে প্রাকৃতিক গ্যাসের যে দাম বাড়ানো হয়েছে; এটা এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্যই। এটা অনেকটা স্পষ্ট হয়েছে বিভিন্ন প্রচারণায়। এ কারণেই আমি মনে করি বেশি বেশি প্রচার দরকার আছে। এ ছাড়া এলপি গ্যাস যেন প্রতিযোগিতা দামে ব্যবহার করা যায় এটি নিশ্চিত করতে হবে। কেননা আমরা মনে করি আমাদের উৎপাদন খরচ কত তা বের করতে চাই। এখানে যদি আমাদের খরচ বেড়ে যায়; তাহলে এর প্রতি মানুষ নিরুৎসাহ হবে। তাই আমি মনে করি, খাত সংশ্লিষ্টদের ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত, বাসাবাড়ির গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য।</p> <p> </p> <p><strong>বাসাবাড়িতে</strong> <strong>এলপিজি</strong> <strong>সিলিন্ডার</strong> <strong>রাখার</strong> <strong>জন্য</strong> <strong>নির্ধারিত</strong> <strong>জায়গা</strong> <strong>রাখা</strong> <strong>হয়</strong> <strong>না</strong></p> <p>নাওইদ রশিদ</p> <p>এলপিজি খাতের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ অবকাঠামো। এর কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বাসাবাড়িতে পাঠানো গ্যাসের দাম কমানো যাচ্ছে না। যতই কমাতে চাই, ততই উদ্যোক্তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া নতুন করে যেসব বাড়ি তৈরি হয়; ওই সব <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1O.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />বাসাবাড়িতে এলপিজি সিলিন্ডার রাখার জন্য নির্ধারিত জায়গা রাখা হয় না। ফলে বাসাবাড়িতে নিয়ে যাওয়া সিলিন্ডার যেনতেনভাবে সংরক্ষণ করা হয়। যেসব স্থানে রাখা হয়; তাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকে না। আমার মনে হয় এ জন্য বিল্ডিং কোডের একটা রেকটিফিকেশন দরকার। এলপিজি গ্যাসের গ্যাস সিলিন্ডার রাখার জন্য সহায়ক হবে। সরকার আবাসিকে গ্যাস সরবরাহ করবে না। এমন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও আবাসন কম্পানিগুলো এ বিষয়টি মোটেও আমলে নেয় না। নিরাপত্তা মান ধরে রাখার জন্য আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাবকে উদ্যোগ নিতে হবে বলে আমি মনে করি।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p> <p><strong>ভবিষ্যতের</strong> <strong>নিরাপদ</strong> <strong>বিকল্প</strong> জ্বালানি <strong>এলপিজি</strong></p> <p>প্রকৌশলী জাকারিয়া জালাল</p> <p>বাংলাদেশে মূলত চারটি কারণে এলপি গ্যাসের উত্থান হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে; এলপি গ্যাসের বিকাশে সরকারের সদিচ্ছা ছিল; এই খাতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বেড়েছে; আর আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দরপতন ঘটেছে। এই চার কারণে বাংলাদেশে এলপি গ্যাসের আজকের এই অবস্থান। আমাদের দেশে এলপিজি খাতে নিরাপত্তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা হয়। গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার যেমন কাজ করছে, তেমনি বেসরকারি কম্পানিগুলোও কাজ করে যাচ্ছে। যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেটার নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান করে থাকে বিস্ফোরক অধিদপ্তর। এলপিজির দুর্ঘটনা নিয়ে তারা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আশার কথা হলো, বিস্ফোরক অধিদপ্তর তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, এখন পর্যন্ত এলপিজি <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1P.jpg" style="float:left; height:346px; margin:12px; width:300px" />সিলিন্ডারের কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। সিলিন্ডারে কোনো সমস্যা ছিল না। মূলত মানুষের অসচেতনতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সরকারের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি, ক্যাম্পেইন করছি। এলপিজি ব্যবসায় কিছু সমস্যা রয়েছে। এলপিজি প্ল্যান্টের লাইসেন্স নিতে কিংবা নবায়ন করতে বিনিয়োগকারীদের সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। একটি এলপিজি প্ল্যান্ট করতে ২৭টি লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। এটা অনেক বেশি। লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সলিউশন হওয়া উচিত। অনেকে বলেন, বাংলাদেশে এলপি গ্যাসের দাম তুলনামূলক বেশি। তথ্যটি সঠিক নয়। বাংলাদেশে এলপিজি কম্পানিগুলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম দাম রাখছে। চলতি অর্থবছর এলপিজিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর এবং ৫ শতাংশ মূসক ধরা হয়েছে। এর ফলে দাম পড়ছে অনেক বেশি। তার পরও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম <img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/07 July/16-07-2019/10/KK_RT_1R.jpg" style="float:right; height:78px; margin:12px; width:160px" />দামে এলপি গ্যাস দিচ্ছে। অথচ এর দাম বেশি হওয়া উচিত। বিনিয়োগকারীরা বা ব্যবসায়ীরা মানুষের কথা চিন্তা করে দাম কম রাখছে। এলপিজির দাম কম রাখার ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনের মতো দেশে মাত্র চারটি কম্পানি এলপিজি ব্যবসায় প্রতিযোগিতা করছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বেসরকারি খাতের মাত্র তিন কম্পানি প্রতিযোগিতা করছে। অথচ আমাদের দেশে ২৫টি কম্পানি এ খাতে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাগেরহাটের মোংলায় এরই মধ্যে এলপিজির শহর হয়ে গেছে। গত তিন থেকে চার বছরে সেখানে বড় বড় প্রতিষ্ঠান টার্মিনাল করেছে।</p>