ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

পুরনো মডেলেই করের জাল

মো. জাহিদুল ইসলাম
মো. জাহিদুল ইসলাম
শেয়ার
পুরনো মডেলেই করের জাল

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্বস্তি, সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তারা শুনতে চায় আশার বাণী। সরকারও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। কমিয়েছে বাজেটের আকার।

তবে এখনো স্বস্তির কোনো খবর নেই। উল্টো মধ্যবিত্ত শ্রেণির করের হার দ্বিগুণ করা হচ্ছে। নিরাপদ বিনিয়োগের উৎস সরকারি ট্রেজারি বিলের সুদেও উৎস কর দ্বিগুণ হচ্ছে। মোবাইল ফোন, ব্লেন্ডার, জুসার, ইলেকট্রিক কেটলি, রাইস কুকার, প্রেসারকুকারের মতো পণ্যও হতে পারে আগের চেয়ে ব্যয়বহুল।
রান্নার জন্য এলপিজি সিলিন্ডার, ঘরের জন্য ফ্রিজ-এসি, বাড়ির জন্য লিফট কিনতে গেলেও পকেটের ওপর পড়বে বাড়তি চাপ। পুরনো মডেলেই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটেও করের জালে সাধারণ মানুষকে আটকাতে রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

মধ্যবিত্তের জন্য দ্বিগুণ করহার

আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে।

পরবর্তী স্ল্যাব এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ পরবর্তী স্ল্যাব হবে ছয় লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে করহার দ্বিগুণ করে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সাধারণত মধ্যবিত্ত শ্রেণির আয় এটি। স্ল্যাব পরিবর্তন ও করহার বাড়ানোর ফলে করের জালে পিষ্ট হবে মধ্যবিত্ত শ্রেণি।
বর্তমানে একজন ব্যক্তির বার্ষিক আয় সাত লাখ ২০ হাজার টাকা হলে তাঁকে কর দিতে হতো আট হাজার টাকা। আসছে বাজেটে এই করের পরিমাণ হবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা।

 

সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ

বর্তমানে আয়কর ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ। তবে গত কয়েক বছরের বাজেটে বিত্তবানদের কাছ থেকে ৩০ শতাংশ কর আদায়ের কথা ভেবেছিল এনবিআর। অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এবার তা বাস্তবায়নের পথেই হাঁটছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। ছয় লাখ ৭৫ হাজার টাকার পর চার লাখ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ, পরের পাঁচ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ, আর ২০ লাখ টাকার ওপর ২৫ শতাংশ ও অবশিষ্ট টাকার ওপর ৩০ শতাংশ কর আরোপ করা হতে পারে। অবশ্য প্রথম রিটার্ন জমা দেবেনএমন করদাতাদের জন্য সুখবর থাকছে। নতুন করদাতাদের আয়ভেদে সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা আয়কর দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। ন্যূনতম কর দেশের সব এলাকার জন্য পাঁচ হাজার টাকা।

 

জুলাই যোদ্ধা করদাতাদের সুযোগ

এ ছাড়া মহিলা ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী করদাতার করমুক্ত সীমা হতে পারে চার লাখ ২৫ হাজার টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের জন্য পাঁচ লাখ টাকা। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধা করদাতাদের জন্য এই সীমা পাঁচ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা-মাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রতি পোষ্যের জন্য করমুক্ত সীমা ৫০ হাজার বেশি হবে।

 

সুযোগ থাকছেই কালো টাকা সাদা করার

বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ের ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে। বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য বিভিন্ন এলাকার মৌজাভেদে স্থাপনা, বাড়ি, প্লট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেসের করহার সর্বনিম্ন প্রতি বর্গমিটারে ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ছয় হাজার টাকা। একই সঙ্গে ভূমির করহার বিভিন্ন এলাকার মৌজাভেদে প্রতি বর্গমিটারে সর্বনিম্ন ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। এই সুযোগ বহাল রাখা হলেও এতে করের পরিমাণ অনেক বাড়ানো হতে পারে।

 

করপোরেট কর অপরিবর্তিত

বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানি যাদের পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি আইপিওর (ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং) মাধ্যমে হস্তান্তর হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে করপোরেট করহার ২২.৫০ শতাংশ। তবে সব আয় ব্যাংকের মাধ্যমে হলে করহার হবে ২০ শতাংশ। আয়কর আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী অন্য কম্পানিগুলোর করহার ৩০ শতাংশ। পাবলিকলি ট্রেডেড ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩৭.৫০ শতাংশ। এসব প্রতিষ্ঠান পাবলিকলি ট্রেডেড না হলে ৪০ শতাংশ। সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কম্পানি ও কম্পানি নয় এমন শ্রেণির জন্য ৪৫ শতাংশ কর ও ২.৫০ শতাংশ সারচার্জ। পাবলিকলি ট্রেডেড মোবাইল অপারেটর কম্পানির জন্য ৪০ শতাংশ। পাবলিকলি ট্রেডেড না হলে ৪৫ শতাংশ। কম্পানি, ফার্মের জন্য ৩০ শতাংশ, ট্রাস্ট-ফার্ম, ব্যক্তিসংঘের জন্য ২৭.৫০ শতাংশ, সমবায় সমিতির জন্য ২০ শতাংশ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-ডেন্টাল কলেজ-ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের জন্য করহার ১৫ শতাংশ।

 

সারচার্জ অপরিবর্তিত, বেড়েছে পরিবেশ সারচার্জ

বিত্তবান ব্যক্তি করদাতাদের নিট পরিসম্পদের মূল্যমান চার কোটি টাকা পর্যন্ত সারচার্জ শূন্য। চার কোটি টাকা অতিক্রম করলে ১০ শতাংশ এবং ৫০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে সারচার্জের পরিমাণ ৩৫ শতাংশ। এ ছাড়া একাধিক গাড়ি থাকলে সিসিভেদে ২৫ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত পরিবেশ সারচার্জের বিধান থাকলেও তা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে।

 

কিছু নিত্যপণ্যে উৎস কর কমছে

সূত্র জানায়, বাজেটে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের উৎস কর কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে। ধান, ধানের কুড়া, চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর ডাল, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, আটা, মোটা আটা, লবণ, চিনি, ভোজ্যতেল, কালো গোলমরিচ, দারুচিনি, বাদাম, লবঙ্গ, খেজুর, ক্যাসিয়া পাতা, কম্পিউটার ও কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের ফল ক্রয়ের জন্য স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের ওপর উৎস কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া সেলুলার মোবাইল ফোন অপারেটরের মতো টাওয়ার শেয়ারিং কম্পানির লাইসেন্স ফি বা অন্য কোনো ফি বা চার্জ থেকে ২০ শতাংশ হারে কর কর্তনের বিধান রাখা হয়েছে। সিকিউরিটিজের সুদ থেকে উৎস কর্তন দ্বিগুণ করা হয়েছে। এখন এই হার ১০ শতাংশ। ভাড়া, কনভেনশন হল, কনফারেন্স সেন্টারের সেবার জন্য উৎস কর কর্তনও করা হয়েছে দ্বিগুণ। আগে ৫ শতাংশ থাকলেও এখন দিতে হবে ১০ শতাংশ। তালিকাভুক্ত কম্পানির শেয়ারহোল্ডার, ডিরেক্টর শেয়ারহোল্ডার, প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডারকে শেয়ার হস্তান্তরে ১০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে।

তবে কমানো হয়েছে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীর বিদ্যুৎ ক্রয়ের কর, বিদেশি ক্রেতার এজেন্টের কমিশন বা পারিশ্রমিকের কর, সম্পত্তি হস্তান্তরে কাঠাপ্রতি ২০ লাখের পরিবর্তে শতাংশপ্রতি ১২ লাখ টাকা, পারকিউজিট বাবদ ১০ লাখ টাকার বদলে ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা কমানো হয়েছে। ৩৯টি ক্ষেত্রে এখন এই বাধ্যবাধকতা থাকছে। ১২টি ক্ষেত্রে শুধু টিআইএন দাখিল করলেই হবে।

 

অনেক নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে

রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ারকন্ডিশনার ও কম্প্রেসারের ভ্যাট এক লাফে দ্বিগুণ করা হচ্ছে। আগে ৭.৫০ শতাংশ থাকলেও এখন ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন উপকরণের ক্ষেত্রেও ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড, চার্জার, ব্যাটারি, হাউজিং, ক্যাসিংসহ অন্যান্য উপকরণে ভ্যাট ২ শতাংশের জায়গায় ৪ শতাংশ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অটোমেটিক স্ক্রু ফিডার, উইন্ডো প্রেস মেশিন/হট বার মেশিন, অটো সিলার, ইউএইচএফ টেম্পারেচার সেল, সিল্ড বক্স, ডিসপ্লে কালার এনালাইজার, শিল্ড বক্স, রেডিয়েশন ও জিপিএস সিগনাল এনালাইজিং মেশিন, ডব্লিউ-লেন টেস্টিং মেশিনসহ অন্যান্য উপকরণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের চার্জার ও ব্যাটারি উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলে ৭.৫০ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে, আগে ছিল ৫ শতাংশ। চার্জার ও ব্যাটারি উৎপাদনের সক্ষমতা না থাকলে দিতে হবে ১০ শতাংশ ভ্যাট। আগে ছিল ৭.৫০ শতাংশ।

ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার এবং প্রেসার কুকারে এ পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতি ছিল। এ জন্য দামও সহনীয় ছিল। তবে আসছে বাজেটে ৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হতে পারে। রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি সিলিন্ডারের ভ্যাটহার বেড়ে ১০ শতাংশ হচ্ছে।

 

গৃহনির্মাণে খরচ বাড়বে

শেষ বয়সের সঞ্চয় দিয়ে বাড়ি বানাতে গেলেও এখন আবার ভাবতে হবে। সিমেন্টশিট উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে  ১৫ শতাংশ, ফেরো ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো-সিলিকো-ম্যাঙ্গানিজ অ্যালয় উৎপাদন পর্যায়ে এক হাজার টাকা প্রতি মেট্রিক টন থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা প্রতি মেট্রিক টন করা হচ্ছে। ফেরো-সিলিকন অ্যালয়ের উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি মেট্রিক টনে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করা হচ্ছে। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির সেবা পর্যায়ে ৭.৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। লিফটের উৎপাদনে ভ্যাট ৭.৫০ শতাংশ করা ও নির্মাণ সংস্থার সেবার বিপরীতে ভ্যাট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে।

 

আবগারি শুল্কে সুখবর

পরিবর্তন আসছে ব্যাংকে জমা টাকার ওপর আবগারি শুল্কের স্তর ও হারে। তবে এতে সুবিধা পাবেন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। আগে এক লাখ টাকার বেশি রাখলে আবগারি শুল্ক কেটে নেওয়া হতো। এটা বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। তিন লাখ টাকার বেশি রাখলে ১৫০ টাকা দিতে হবে।

এ ছাড়া এলএনজির আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি, মাটি, পাতা, ফুল বা বাকলের তৈরি প্লেট বাটিসহ সব ধরনের তৈজসপত্রের উৎপাদনে অব্যাহতি, স্যানিটারি ন্যাপকিন-প্যাকেটজাত তরল দুধ-পলিপ্রোপাইলিন স্ট্যাপল ফাইবারে ভ্যাট অব্যাহতি, ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলারের ভ্যাট বাড়িয়ে ৭.৫০ শতাংশ, ই-বাইকের উৎপাদন ও উপকরণ আমদানি, ফ্রিজ-এসি-কম্প্রেসার উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি, কটন সুতা, কৃত্রিম আঁশ ও অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি ইয়ার্নের উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি কেজিতে তিন টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা, স্ক্র্যাপ থেকে প্রস্তুত এসএম পণ্যের ভ্যাট ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বৃদ্ধি ও কাটিং, বেন্ডিং, স্ট্রিম্প ও ওয়েল্ড ম্যাস পরিবর্তন করে সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রতি মেট্রিক টনে ৮০০ টাকার বদলে বাজেটে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

হতাহতের তথ্য নিয়ে অসংগতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হতাহতের তথ্য নিয়ে অসংগতি

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতের তথ্যে অসংগতি রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ১০ হাসপাতালে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩১। ১৬৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে।

বিকেল ৩টায় এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানান, এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৮ এবং আহত ৬৯ জন।

এমন পরিস্থিতিতে গতকালও হাসপাতালে আহতদের খুঁজতে দেখা গেছে স্বজনদের। তাঁরা নিহতদের সঠিক নাম, তথ্য প্রকাশ এবং আহতদের সম্পূর্ণ ও নির্ভুল তালিকা দ্রুত প্রকাশ করার দাবি জানান।

তথ্য প্রকাশে পিছিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় : জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আমরা আইএসপিআরের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের হিসাবে একটি হাসপাতাল যুক্ত হয়েছে।

সেটি হলো লুবানা জেনারেল হাসপাতাল। আমরা সেখানে যোগাযোগ করেছি। তাদের নিবন্ধন খাতায় কোথাও কোনো মৃত্যু নেই। কিন্তু তারা মুখে বলছে, সেখানে দুই শিশু হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আসে, যাদেরকে তাদের অভিভাবকরা নিয়ে গেছেন।
এই দুজন পরে কোনো হাসপাতালে না আসায় মৃত্যুর তালিকায় তাদের নাম নেই।

এ ছাড়া উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের হিসাবে একটি পার্থক্য হয়েছে। আমরা বলেছিলাম, সেখান থেকে একজনের মরদেহ সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মূলত এই সংখ্যায় আমাদের সঙ্গে আইএসপিআরের পার্থক্য হয়েছে।

অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, আহতদের সংখ্যা বলা হচ্ছে ১৬৫।

এখানে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০ জনের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং লুবানা জেনারেল হাসপাতালে ১৩ জনের চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে। অথচ সেখানে দু-তিনজন রোগীও নেই। জরুরি চিকিৎসা দেওয়া এবং রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের কারণে সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৩০ জন বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ১০ জনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। অন্যদের মধ্যে ১০ জন শঙ্কামুক্ত এবং দুজনকে সাধারণ ওয়ার্ড থেকে কেবিনে স্থানান্তর করার প্রস্তুতি চলছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য : মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় যে তথ্য দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগী ৬৮ জন, মৃত ২৮ জন। বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৪২ জন, এ পর্যন্ত মৃত্যু ১০ জনের। সিএমএইচে ভর্তি ২৩ জন, মৃত্যু ১৫ জনের। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি একজন, মৃত্যু নেই। শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি একজন, মৃত্যু নেই। ঢাকা মেডিক্যালে কোনো রোগী ভর্তি নেই, মৃত্যু একজনের। লুবানা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি কোনো রোগী নেই, মৃত্যু একজনের। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন একজন, মৃত্যু নেই। এ ছাড়া ইউনাইটেড হাসপাতালে কোনো রোগী নেই, মৃত্যু একজনের।

এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় হালনাগাদ করা তালিকা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৩৯ জনই শিক্ষার্থী। ছয়জন শিক্ষক, ১৫ জন সেনা সদস্য এবং একজন করে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসকর্মী, স্কুল স্টাফ, গৃহকর্মী ও ইলেকট্রিশিয়ান রয়েছে। এ ছাড়া পরিচয় শনাক্ত না হওয়া চারজন রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী বলেন, এখন পর্যন্ত অজ্ঞাতপরিচয় ছয়টি লাশ আছে। এর মধ্যে চারজনের স্বজন এসেছেন। ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে লাশ হস্তান্তর করা হবে। বাকি দুজনের স্বজনদের খোঁজ এখনো মেলেনি।

সায়েদুর রহমান বলেন, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে একটি মেডিক্যাল টিম মঙ্গলবার রাতের মধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছবে। এই টিমে একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দুজন নার্স থাকবেন। বুধবার থেকে তাঁরা আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবায় যুক্ত হবেন।

চিকিৎসা নিয়ে উত্তরার হাসপাতাল ছেড়েছে আহতরা : গতকাল ঘটনার দ্বিতীয় দিন উত্তরার হাসপাতালগুলো ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব রোগীর মধ্যে অনেকে ঘটনাস্থলের ভয়াবহতা দেখে মানসিক আঘাত বা প্যানিক অ্যাটাকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে কেউ কেউ আহত হয়েছে। সামান্য দগ্ধ কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে গুরুতর দগ্ধ রোগীদের দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল ও জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।

উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি আহত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. বজলুর রহমান আদিল বলেন, এখানে এক শর বেশি শিক্ষার্থী আসে। এর মধ্যে প্রথমে আসা প্রায় ৪০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় শুধু স্যালাইন আর বার্ন ক্রিম দিয়ে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়। পরে যারা এসেছে, তারা মূলত আতঙ্কগ্রস্ত ছিল। রাতের মধ্যে তারা চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। ২৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল, তারাও পরদিন হাসপাতাল ছাড়ে। হাত পুড়ে যাওয়ায় এক শিক্ষার্থী এখনো চিকিৎসা নিচ্ছে।

ঘটনার পর দুটি মৃতদেহ হাসপাতালটিতে আনা হয়েছিল, যা পরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের কাস্টমার রিলেশন অফিসার নয়ন বলেন, দগ্ধ ১২ জন শিক্ষার্থী এসেছিল। পাঁচজনকে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হয়, অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যায়। এখানে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।

মন্তব্য
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চার দলের বৈঠক

সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস, কঠোর হওয়ার পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস, কঠোর  হওয়ার পরামর্শ

মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনার পর ক্ষোভ-বিক্ষোভে উত্তাল পরিস্থিতিতে চার রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে দলগুলো সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চার দলের নেতারা।

গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় রাত ৯টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা ওই বৈঠক চলে।

বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, সব দলই ফ্যাসিবাদ মোকাবেলায় সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা যেন আরো শক্ত অবস্থান নিই। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা ঘাটতি আছে, এটা ওনারা বলেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনপ্রক্রিয়ার দিকে আমাদের সুষ্ঠুভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত।

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্ধৃত করে আসিফ নজরুল বলেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, আপনাদের মধ্যে যে ঐক্য আছে, সেটা আরেকটু দৃশ্যমান হলে ভালো হয়। গঠনমূলক কোনো কর্মসূচি দিয়ে হোক অথবা যেকোনোভাবে হোক, আপনারা যদি একসঙ্গে থাকেন, তাহলে মানুষের মনে স্বস্তি আসবে। তিনি বলেন, ঐক্যের প্রমাণ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলো উপস্থাপন করে যে, মাঠে উনারা নিজেদের মধ্যে যাই বলুন না কেন, প্রধান উপদেষ্টা ডাকলে তাঁরা আসেন। প্রধান উপদেষ্টা ডাকলে সবাই একসঙ্গে হাজির হন।

ঐক্য থাকার আরেকটা প্রমাণ হচ্ছে যে, দলগুলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়ে নিয়মিত যাচ্ছে।

আসিফ নজরুল বলেন, দলগুলো একটা বিষয় খুব জোর দিয়ে বলেছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো হতাশা বা দুশ্চিন্তা থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। রাজনীতির মাঠে তারা যাই বলেন, ফ্যাসিবাদের বিষয়ে তারা ঐক্যবদ্ধ।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলগুলো একটি বিষয় বলার চেষ্টা করেছে, নিষিদ্ধ দল, ফ্যাসিস্টদের সহযোগীরা মাঝেমধ্যে দেশের এখানে-সেখানে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। উনারা আমাদের বলেছেন, প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিতে।

আমরা উনাদের বলেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যটা মাঠে আরো বেশি দৃশ্যমান করুন।

বৈঠক শেষে ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এনসিপিসবাই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে বলেছি যে, আমরা অবশ্যই সরকারের পাশে অতীতেও ছিলাম, এখনো আছি, সামনেও ইনশাআল্লাহ এই সরকারের পাশে থাকব।

গতকাল রাত ৯টা থেকে শুরু হওয়া এ বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী; জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম মেম্বার অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি।

আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে আতাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে গতকাল থেকে আজকে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তিনি (ইউনূস) বলেছেন যে পরাজিত শক্তি, বিশেষ করে ফ্যাসিবাদী শক্তির দোসররা, বিভিন্নভাবে চাচ্ছে এই পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার জন্য এবং পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যাতে দেশে একটি অস্থিরতা তৈরি করা যায়, জনমনে আতঙ্ক ছড়ানো যায়, গুজব ছড়ানো যায়।

আতাউর রহমান বলেন, আমরা বলেছি, রাজনৈতিক দল হিসেবে একেক দলের একেক রকম বক্তব্য থাকবে, সমালোচনাও থাকবে। সামনে যেহেতু নির্বাচন হবে, নির্বাচনের আগে একদল অন্য দলের বিরুদ্ধে সমালোচনা করবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা একটা প্রশ্নে সবার মধ্যে একমত, সেটা হলো আওয়ামী ফ্যাসিবাদ যাতে আবার পুনর্বাসিত হতে না পারে, তারা যাতে দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে না পারে, দেশের বিরুদ্ধে কোনো রকম তৎপরতা চালাতে না পারে, এই ব্যাপারে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।

তিনি বলেন, আমরা বলছি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো উন্নত করতে হবে এবং প্রশাসনিকভাবে সরকার যেন মজবুত হয়, আরো কঠোর হয় এবং সব কিছুকে কঠিনভাবে দমন করে।

আগামী দিনে যাতে একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, সে ব্যাপারে বৈঠকে সবাই একমত হয়েছে মন্তব্য করে আতাউর রহমান বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য আমরা সবাই একযোগে কাজ করব, এই ব্যাপারেও আমরা সবাই একমত হয়েছি।

মন্তব্য
সরেজমিন মাইলস্টোন

ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছিন্নভিন্ন বই-খাতা স্বজনদের হাহাকার

শরীফ শাওন
শরীফ শাওন
শেয়ার
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ছিন্নভিন্ন বই-খাতা স্বজনদের হাহাকার
বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনটিতে গতকালও উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়। ছবি : কালের কণ্ঠ

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ উত্তরা শাখার প্রাথমিক ভবনটি এখন ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। এক দিন আগেও যে ভবনটি শিশু শিক্ষার্থীদের কলহাস্য-গুঞ্জনে মুখর ছিল, সেখানে পুড়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিসের স্তূপ জমে আছে। পোড়া গন্ধে বাতাস ভারী। চারদিকে ছড়িয়ে আছে ছিন্নভিন্ন বই-খাতার ছাই আর আধপোড়া জঞ্জাল।

পরিবেশটা আরো দুঃসহ করে তুলেছে সন্তানের খোঁজে আসা অভিভাবক-স্বজনদের হাহাকার।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, দুর্ঘটনার দ্বিতীয় দিনও স্কুল ক্যাম্পাসের বাতাস ভারী হয়ে আছে পোড়া গন্ধে। সেই গন্ধে মিশে আছে দুর্ঘটনায় হতাহত শিশুদের কান্না, আতঙ্ক আর অসমাপ্ত পাঠ। থমথমে পরিবেশের মধ্যে শুধু নিঃশব্দে কান্না করে যাচ্ছেন কেউ কেউ।

কেউ পাথরের মতো স্থির, কেউ ভেঙে পড়ছেন ছেলের বা মেয়ের নাম লেখা একটি ছেঁড়া খাতার পাতা দেখে।

ভবনের সামনের খোলা জায়গায় পানি লেগে স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ে আছে আংশিক পোড়া বই, আইডি কার্ড ও ব্যাগের টুকরা। এসবের ভেতর নিখোঁজ সন্তানদের চিহ্ন খুঁজে ফিরছেন অভিভাবকরা। কেউ পেয়েছেন সন্তানের ব্যবহৃত বই, কেউ নোটখাতা, আবার কেউ আইডি কার্ডের টুকরা।

তা দেখে বুক ঠেলে আসা হাহাকারে মুষড়ে পড়ছেন মা-বাবা।

এমন একজন অভিভাবক রাবেয়া খাতুন। মাটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বই-খাতাগুলো নিয়ে দেখছিলেন তিনি। হঠাৎ চিকার দিয়ে বলেন, এটা আমার মেয়ের ব্যাগ...আর এটা আমার মেয়ের লেখা। ওর খোঁজ তো পাইলাম না।

এগুলো তার চিহ্ন হয়ে থাকবে।

রাবেয়া খাতুনের ভাই সাগর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, রাইসা মণি তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে দুর্ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ। ক্যাম্পাসসহ রাতভর রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে খুঁজেও তার সন্ধান পাইনি।  তাই আজ (মঙ্গলবার) আবার এসেছি। একটি ছেঁড়া খাতায় তার হাতের লেখা আর ব্যবহৃত ব্যাগ দেখে শনাক্ত করতে পেরেছি।

স্কুল ক্যাম্পাসের চারপাশে নিরাপত্তা ও সহায়তা দিতে কাজ করছিলেন কিছু স্বেচ্ছাসেবক। ভবনের সিঁড়ির পাশে তাঁরা দড়ি দিয়ে একটি করিডর তৈরি করেছেন, অভিভাবকরা যাতে ভেতরে ঢুকে শেষবারের মতো একবার চেনা পরিবেশ দেখে আসতে পারেন। সেখানে কাউকে দেখা যায় নিঃশব্দে দেয়ালের পোড়া দাগ ছুঁয়ে কাঁদছেন, কেউ চোখ বন্ধ করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে সয়ে নেওয়ার চেষ্টায় বুকচাপা কষ্ট।

স্বেচ্ছাসেবক রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, অনেকে ভেতরে এসে কেবল দাঁড়িয়ে থাকেন, কেউ কিছু বলেন না। শুধু একটা বই বা আইডি খুঁজে নেন। আমরা তাঁদের সহায়তা করছি, কিন্তু কাকে কিভাবে সান্ত্বনা দেব, তা বুঝে উঠতে পারছি না।

সকালে ক্যাম্পাসজুড়ে ছিল অভিভাবকদের ভিড়। এর মধ্যে অনেকের দাবি, তাঁদের সন্তান এখনো নিখোঁজ। রাতভর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও তাদের সন্ধান মেলেনি। তাই সকাল হতেই ছুটে এসেছেন ক্যাম্পাসে। তাঁরা জানেন না, সন্তানের ভাগ্যে কী ঘটেছে। শেষ স্মৃতি হিসেবে সন্তানের ব্যবহৃত একটি বই, খাতা, আইডি কার্ড বা ব্যাগ স্মৃতি হিসেবে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাঁরা।

মন্তব্য
পড়ে আছে ৬ এয়ারফিল্ড

ঢাকার আকাশে শিগগিরই বন্ধ হচ্ছে না যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ

মাসুদ রুমী
মাসুদ রুমী
শেয়ার
ঢাকার আকাশে শিগগিরই বন্ধ হচ্ছে না যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ

রাজধানীর আকাশে সামরিক ও বেসরকারি প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ দিন দিন বাড়ছে। এতে ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানীতে সাধারণ মানুষের জীবনে ঝুঁকির মাত্রাও বাড়ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত সোমবার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের ওপর একটি এফটি-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি ৩১ শিক্ষার্থী নিহত ও ১৬৫ জনের বেশি আহত হওয়ার পর বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার রেকর্ড এটি।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ছয়টি এয়ারফিল্ড পড়ে থাকলেও রাজধানীর আকাশে কেন ঝুঁকিপূর্ণ যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে যেকোনো সময় আরো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিমান চলাচল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, আকাশও শহরের একটি স্পেস। সেটিকে নিরাপদ রাখা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর আকাশে প্রতিদিন গড়ে ১০-১২টি সামরিক ফ্লাইট এবং আরো কয়েকটি বেসরকারি ফ্লাইং ফ্লাইট পরিচালিত হয়। অথচ এসব মহড়ার জন্য শহরের বিকল্প প্রশিক্ষণস্থল যেমন ঈশ্বরদী, শ্রীমঙ্গল বা সৈয়দপুরকে ব্যবহার করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। দুর্ঘটনার পরও বিমানবাহিনী বা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রাজধানীর প্রশিক্ষণ আকাশপথ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে এভিয়েশন বিশ্লেষক এ টি এম নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, এ ধরনের যুদ্ধবিমান নিয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রশিক্ষণ চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

অনেকে ভাবেন এগুলো শুধু প্রশিক্ষণের জন্য, কিন্তু এগুলো আসলে জেট যুদ্ধবিমানএকটি মেশিনের সামান্য ত্রুটি বড় দুর্ঘটনা ডেকে আনতে পারে।

তিনি বলেন, যখন ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি নির্মিত হয়েছিল, তখন এর আশপাশে এত ঘনবসতি ছিল না। সেখানে আমরা আবাসন, এমনকি স্কুল করতে দিলাম। যে স্কুলটিতে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল, সেই স্কুলটি কি বিমানবন্দরের এত কাছে থাকা উচিত? প্রতিদিন এখানে শতাধিক উড়োজাহাজ উঠছে-নামছে, এর বিকট শব্দ যাচ্ছে শিশুদের কানে। আকাশ প্রতিরক্ষার নিয়ম মানতে হবে, সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন থাকতে হবে।

শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে বিমানবন্দর সরানো যায়নি আমাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাবে।

 

আন্তর্জাতিক রীতিনীতি

পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির নেই। সব দেশেই যাত্রীবাহী ও সামরিক বিমান উড্ডয়নের জন্য পৃথক রানওয়ে বা বিমানবন্দর থাকে। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, প্রশিক্ষণ ও মহড়ার মতো উচ্চঝুঁকির ফ্লাইট অপারেশন জনবসতিপূর্ণ এলাকার বাইরে পরিচালনা করতে হবে।

আইকাওয়ের অ্যানেক্স-১৪-এর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের জন্য এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে, যেটি হবে জনবসতি থেকে দূরে। যেখানে শব্দদূষণ কম হবে এবং ঝুঁকি কম থাকবে। বেবিচকের নীতিমালায়ও একই কথা বলা হয়েছে। তবে এসব বিধান অনুযায়ী প্রশিক্ষণ পরিচালনা না করে বিপদে রাখা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘনবসতিপূর্ণ শহরের ওপর দিয়ে জেট ইঞ্জিনধারী যুদ্ধবিমান ওড়ানো এক ধরনের অন্ধ ঝুঁকি নেওয়ার নাম। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) নির্দেশনা অনুসারে, প্রশিক্ষণ পরিচালিত হওয়া উচিত জনবসতি ও বাণিজ্যিক উড়ানহীন অঞ্চলে’—যা রাজধানীর ক্ষেত্রে পুরোপুরি উপেক্ষিত।

 

পড়ে আছে দেশের ৬ এয়ারফিল্ড

বাংলাদেশে অন্তত ছয়টি পুরনো এবং পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ড রয়েছে, যেগুলোর বেশির ভাগই সামান্য মেরামতে প্রশিক্ষণ উপযোগী করা সম্ভব বলে মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই এয়ারস্ট্রিপগুলো এখনো কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। ফলে ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানীর আকাশেই যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে বিমানবাহিনী।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, পরিত্যক্ত বা আংশিক ব্যবহৃত অবস্থায় থাকা ছয়টি এয়ারফিল্ড হলোঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, কুমিল্লা, লালমনিরহাট, টাঙ্গাইল ও ফেনী। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও বেবিচকের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, নীতিহীনতা ও সিকিউরিটি ট্যাগের কারণে এসব বিকল্প ব্যবহার হচ্ছে না।

 

প্রশিক্ষণের অবস্থান নতুন করে ভাবা দরকার : সাখাওয়াত

বিমান প্রশিক্ষণের জন্য স্থান নির্বাচনে নতুন করে ভাবার তাগিদ দিয়েছেন নৌপরিবহন, শ্রমকর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ঢাকা শহর অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রম কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। তাই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করা উচিত।

 

ইতিহাস আগেও আছে, গুরুত্ব পায়নি

এই দুর্ঘটনাই প্রথম নয়, আগেও ঘটেছে। বাংলাদেশে এফটি-৭ যুদ্ধবিমানের আরো কয়েকটি দুর্ঘটনার রেকর্ড রয়েছে। ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর টাঙ্গাইলের মধুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বহরে থাকা একটি চীনা এফ-৭ বিজি বিধ্বস্ত হয়। সেই সময় বিমানের পাইলট উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দীপু মারা যান। ২০১৫ সালের ২৯ জুন চীনা এফ-৭এমবি বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়। সাগরে পড়ে যাওয়া ওই বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ নিখোঁজ হন। এ ছাড়া ২০০৮ সালের ৮ এপ্রিল টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বিধ্বস্ত হয় একটি চীনা এফটি-৭ যুদ্ধবিমান। বিমান থেকে বেরিয়ে আসার পরও স্কোয়াড্রন লিডার মোর্শেদ হাসান মারা যান।

 

প্রশিক্ষণ বিমান কারা চালান?

রাজধানীর আকাশে বর্তমানে প্রশিক্ষণ পরিচালনায় দুটি পক্ষ সক্রিয়। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর কুর্মিটোলা ঘাঁটি থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০-১২টি প্রশিক্ষণ ফ্লাইট উড্ডয়ন করে। বেসরকারি ফ্লাইং স্কুল অন্তত তিনটি প্রতিষ্ঠান রাজশাহী, চট্টগ্রাম, উত্তরা ও আশপাশে প্রশিক্ষণ চালায়।

 

যা বলছে কর্তৃপক্ষ

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রশিক্ষণের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেন, বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এমন জায়গা খুঁজে বের করলেও পাশে আবার ঘনবসতি হয়। এখানে যখন বিমানবন্দর হয়েছিল আমি যখন প্রথম এখানে ১৯৮৫ সালে ফ্লাই করেছিলাম তখন ওদিকে কিছুই ছিল না, উত্তরা বলতে কিছু ছিল না। এটার সঙ্গে ঘনবসতির সম্পর্ক করা ঠিক না। আমাদের দেশ ছোট, সব জায়গায় মানুষ। এটা (কুর্মিটোলা) আমাদের মেইন বেইস, সবচেয়ে ইম্পোর্ট্যান্ট জায়গা এটা। ভিআইপিরা এখানে থাকেন, আমাদের স্থাপনা এখানে, পার্লামেন্ট এখানে। একটা প্রটেকশনের ব্যাপার আছেএখানে একটা স্ট্রং এয়ারবেইস থাকা খুবই দরকার।

রাজধানী থেকে প্রশিক্ষণ বিমান স্থানান্তর প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, এটা সরানোর উদ্যোগ আমার জানা মতে এই মুহূর্তে নেই।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ঢাকা থেকে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের সীমান্তঘেঁষে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সমীক্ষাও করা হয়েছে। এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের বিমানবন্দরের ড্রয়িং-ডিজাইন ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ব্যয় হয়েছে শতকোটি টাকা। তবে এক যুগ পরও বিমানবন্দর তৈরির পরিকল্পনা এখনো হিমঘরে। এ বিষয়ে খুব একটা অগ্রগতি নেই বলেও জানিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ