ছোট ছোট মিছিল নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার গণজমায়েতে অংশ নেয়। এদিকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আগপর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, সুস্পষ্ট ঘোষণা না পেলে মার্চ টু যমুনা ঘোষণা করা হবে। গণজমায়েত চলাকালে এক পর্যায়ে তিনি এই ঘোষণা দেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি, আরেকটি বাংলাদেশি শক্তি। যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় না তারা ফ্যাসিবাদী শক্তি, আর যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় তারা বাংলাদেশি শক্তি।’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কোনো শক্তি আমার কণ্ঠরোধ করতে চায় তবুও আপনারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না। আমি যদি কর্মসূচি ঘোষণা নাও করতে পারি, তার পরও আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘২০১৩ সালে শাহবাগের মাধ্যমেই ফ্যাসিবাদ শুরু হয়েছে আর এই শাহবাগ থেকে ফ্যাসিবাদের পতন হবে। আমাদের মত-পথ আলাদা হতে পারে, তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে আমাদের মত-পথ এক। নমরুদের যেভাবে পতন হয়, ফেরাউনের যেভাবে পতন হয়, হাসিনারও পতন হয়।’
এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ৫ আগস্ট সমর্থন দিয়েছে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আওয়ামী লীগ আর রাজনীতি করতে পারবে না। অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’
শাহবাগে গণজমায়েত শুরুর আগে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা শাহবাগের সমাবেশে এসে যোগ দিতে শুরু করেন। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ছাত্র-জনতার হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইসলামী বিভিন্ন দলসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগের গণজমায়েতে যোগ দেন। সাধারণ ছাত্র-জনতাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই গণজমায়েতে অংশ নিয়েছেন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাত্মতা প্রকাশ
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত গণজমায়েতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, লেবার পার্টি, জনতার দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
একাত্মতা প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেন, ‘৫ আগস্ট রায় হয়ে গেছে বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কী হবে না। ফলে এটা নিয়ে টালবাহানা চলবে না। অতি দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের সব নেতাকর্মী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আগপর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না।’
জনতার দলের সদস্যসচিব আজম খান বলেন, ‘আজকে আমরা জনতার দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে এই আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করতে এসেছি। সারা বাংলাদেশে আজকে দাবি উঠেছে, ফ্যাসিস্টদের দল আওয়ামী লীগকে ব্যান করে দেওয়ার জন্য। এর সঙ্গে আমরা একাত্মতা ঘোষণা করছি।’
দিনভর ব্লকেড ছিল শাহবাগ
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবিতে গতকাল বিকেলে শাহবাগে গণজমায়েত থাকলেও সকাল থেকে শাহবাগ ব্লকেড করে রাখে ছাত্র-জনতা।
গতকাল সকাল ১১টায় শাহবাগ মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, শাহবাগের চারপাশের রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়েছে। শাহবাগ মোড়ে শতাধিক ছাত্র-জনতা অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছে।
সুস্পষ্ট ঘোষণা না পেলে মার্চ টু যমুনা ঘোষণা
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার থেকে এখন পর্যন্ত আমরা কোনো রোডম্যাপ পাইনি। আর এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা যদি কোনো ধরনের সুস্পষ্ট ঘোষণা না পাই, তাহলে আমরা মার্চ টু যমুনা ঘোষণা করব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি অনুযায়ী, ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশে রাজসিক মোড়ে আমরা অবস্থান করব। যদি প্রয়োজন হয় মার্চ টু যমুনা কর্মসূচি করব।’ গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে এই ঘোষণা দেন তিনি।
এরপর নির্ধারিত সময়ে কোনো ঘোষণা না আসায় নেতাকর্মীদের নিয়ে শাহবাগ মোড় ছেড়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশে রাজসিক মোড়ে অবস্থান নেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘উপদেষ্টাদের স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আপনারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে কোনো গড়িমসি করবেন না। আমরা আপনাদের এখনো পর্যন্ত বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন।’