ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭
বিশেষ লেখা

সেনা ম্যাজিস্ট্রেসি বহালে কুচক্রের মাথায় বাজ

  • সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে জেনারেল ওয়াকারের বার্তা
শেয়ার
সেনা ম্যাজিস্ট্রেসি বহালে কুচক্রের মাথায় বাজ
ওয়াকার-উজ-জামান

মোস্তফা কামাল

মহলবিশেষ খুব আশায় ছিল, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি আর থাকছে না। মাঠেও থাকবে না বাহিনীগুলো। এবার ঠিকই তাদের তুলে নেওয়া হবে। এমন আশায় গুড়ে বালি পড়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৪ মে বুধবার থেকে আরো ৬০ দিন মাঠে থাকবে তারা। মাথায় বাজ পড়ার অবস্থা মাঠ থেকে সেনাবাহিনী উঠে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা চক্রটির। মাঠ থেকে সেনা তুলে নেওয়ার পর কত কিছু ঘটানোর আয়োজনই না ছিল তাদের। তাদের এ অপতৎপরতার যথেষ্ট তথ্য ছিল সরকারের কাছে।
তাই বাস্তবতার তাগিদ ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের আলোকেই সরকারের সেনাসহ যৌথ বাহিনীকে আরো মাঠে রাখার এ সিদ্ধান্ত।

সরকারের এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের পূর্বাপর সময়ে রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে হয়ে গেল ক্যাপস্টোন কোর্স। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংলাপ ও একীভূত চিন্তাধারা বিকাশে এই কোর্স একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম। দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দক্ষ ও স্বনির্ভর জাতি গঠনে এ প্রশিক্ষণ এই সময়ের জন্য কতটা গুরুত্বের তা অনেকেরই ধারণার বাইরে।

ক্যাপস্টোন কোর্স-২০২৫/১-এ প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ফেলোদের কৌশলগত নেতৃত্ব বিকাশের তাগিদ দিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের (এনডিসি) আওতায় তিন সপ্তাহের কোর্সটিতে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তাদের পাশাপাশি শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সরকারি-বেসরকারি খাতের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি, কূটনীতিক, সাংবাদিক ও করপোরেট খাতের ৩২ জন ফেলো অংশ নেন।

সমাপনীতে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভীষণ গুরুত্ব দেন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে। বলেন, এর জন্য দরকার কৌশলগত নেতৃত্ব। ক্যাপস্টোন ফেলোরা সৃজনশীল চিন্তাধারা, সংস্কারমুখী দৃষ্টিভঙ্গি ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে জনস্বার্থে কাজ করবেন বলে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন সেনাপ্রধান।

কোর্স সম্পন্নকারীরা মোটামুটি একটি মেসেজ নিয়ে ফিরেছেন। সেনাপ্রধান গুরুগম্ভীরভাবে তাঁর বার্তা দিয়েছেন আগেও। যে যাঁর মতো শুনেছেন, বুঝেছেন। তাঁর বক্তব্যের শব্দ, বাক্য নিয়ে গোলমাল বাধানোর চেষ্টাও করেছেন। কারো কারো দ্রুত বাস্তবতা উপলব্ধিতে এসেছে। বিলম্বে হলেও মতিগতি বদলেছে কারো কারো।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ১৯ জুলাই রাতে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করা হয়। পরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় ৮ আগস্ট। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উদ্ভূত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ১৭ সেপ্টেম্বর সশস্ত্র বাহিনীকে (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী) বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়। এর পর থেকে এই মেয়াদ দুই মাস করে বাড়াচ্ছে সরকার। কয়েক ধাপে এই ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এবার বাড়ানো হলো পঞ্চমবারের মতো।

দুর্যোগ-দুর্বিপাকসহ বাংলাদেশে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করেছে। বিভিন্ন কাজে মাঠ প্রশাসনকে সহায়তাও করেছে। এখনো করছে; তা-ও ব্যাপক ক্ষমতা ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে। সাধারণত দেশে জরুরি অবস্থা ছাড়া সেনাবাহিনীকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয় না। প্রয়োজনে এবার দেওয়া হয়েছে। বিচারিক ক্ষমতা পাওয়ার পর কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে সেনাবাহিনীকে প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। অপরাধীদের সরাসরি গ্রেপ্তার করা যাবে। ছাড়াও যাবে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে পুলিশকে নির্দেশও দিতে পারবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশন্ড সেনা কর্মকর্তারা। বেআইনি সভা-সমাবেশ নিজেরা ছত্রভঙ্গ করে দিতে এবং এ কাজে বেসামরিক বাহিনীকেও ব্যবহার করতে পারবে সেনাবাহিনী। এ ছাড়া স্থানীয় উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন আদেশ জারি করতে পারবে, আটক করতে পারবে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকেও। এমন এখতিয়ার দেওয়ার পরও বাস্তবে সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার তেমন অ্যাকসেস করছে না। কোথাও বাড়তি বল প্রয়োগেও যাচ্ছে না। এর নেপথ্যে একদিকে পেশাদারি, আরেক দিকে বাস্তবতাবোধ। জনতার পালস উপলব্ধি। কিছু ক্ষেত্রে অন্য দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে মেলানো যাবে না।

আরোপিত বা চাপিয়ে দেওয়া নয়, জনতার সঙ্গে সেতুবন্ধ দিয়েই এ দেশে সেনাবাহিনীর জন্ম। আর কোথাও সেনা-জনতার ক্যামেস্ট্রি বলবৎ থাকলে বাহিনীটির মেজাজ-বৈশিষ্ট্য অন্য রকম হওয়াই স্বাভাবিক। চব্বিশের গণ-আন্দোলন সেখানে আরেকটি মাত্রা যোগ করেছে। সেনাবাহিনী শেষতক আর কেবলই বাহিনী থাকেনি, জনতার অংশ হয়ে গেছে। একাত্তরে এই মন্ত্রের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম। বাহিনীটির জাতির পরম আস্থা ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে ওঠার মূল রহস্য সেখানেই। সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা, দেশের তরে মন্ত্রটি সেনা সদস্যদের মনে আপনা-আপনিই বাজে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি তাঁরা ছুটে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন সেবামূলক ও উন্নয়ন কাজে। সমতল-পাহাড়-জল-জঙ্গল সবখানেই। প্রাকৃতিক বা মানবিক দুর্বিপাকে, বন্যার্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ কাজেও। পুনর্বাসনেও। সেনাবাহিনীর কর্মপ্রক্রিয়া ও শৃঙ্খলার ধরন এমনই।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পর ২০২৪ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বন্যায় আক্রান্ত হয় দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বেশ কিছু এলাকা। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অসংখ্য ঘরবাড়ি। কোনোভাবে মাথা গোঁজার মতো অবশিষ্ট ঘরও থাকেনি কারো কারো। ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০টি পরিবারের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর নির্মাণের জন্য সেনাবাহিনীকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫০ কোটি টাকা। কাজটি হয়ে গেছে বরাদ্দের অর্ধেকেরও কমে, ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। ঘটা করে প্রচার বা মিডিয়া কাভারেজের অপেক্ষা না করে সেনাবাহিনীর ২৪ ও ৩৩ ডিভিশন ৪৯২ ও ৫০০ বর্গফুটের দুটি ডিজাইনে দ্রুতগতিতে শেষ করে কাজটি। বরাদ্দের অর্ধেকেরও বেশি টাকা বাঁচে দেশের। সভা-সেমিনার, সম্ভাষণে ভরিয়ে দেওয়ার প্রচার-প্রচারণা তারা করেনি। দেশে সচরাচর এ ধরনের কাজে দফায় দফায় বাজেট-বরাদ্দ বাড়ানোর ঘটনা বেশি। কাজ পরের বিষয়। কাজ না করে বা ঘর না বানিয়েও বিল তুলে নেওয়ার বহু দৃষ্টান্তের বিপরীতে সেনাবাহিনীর এ কর্মযজ্ঞের মাঝে ভাবনার অনেক উপাদান আছে। রয়েছে বিশ্লেষণের বিষয়ও। এখানে অলৌকিকতার কিছু নেই। সেনাবাহিনীর কাজের ধরন তথা বৈশিষ্ট্যই এমন।

দেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পাহাড়ি এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে সেনাবাহিনী। পাহাড়ে সেনাবাহিনী আছে বলে পাহাড়ের মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে। পাহাড়ে সেনাবাহিনী আছে বলে এখনো পার্বত্য চট্টগ্রাম আমাদের দেশের একটি অংশ হয়ে আছে। সেখানে সেনাবাহিনী কেবল নিরাপত্তা নিশ্চিত করে না, পাহাড়িদের সেবাও দেয়। দুর্গম এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং দরিদ্র, অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে নানা সহায়তা, বই ও শিক্ষাসামগ্রীও দেয়। আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের আত্মত্যাগ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারির মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছেন সম্মান ও গৌরব। আবার শান্তি রক্ষার কাজে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মানুষকে শিক্ষাদান, কৃষিকাজ শেখানোর মতো কাজেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রেকর্ড সৃষ্টি করছে। দেশে রাজনৈতিক একটি দুষ্টচক্রের কাছে সেনাবাহিনী তাই মারাত্মক নাপছন্দের। সেনাবাহিনী কখন মাঠ থেকে সরবে, সেই অপেক্ষা তাদের। কোন অনিবার্য পরিস্থিতিতে ম্যাজিস্ট্রেসি সক্ষমতা নিয়ে এখনো সেনাবাহিনীকে মাঠে রাখা হয়েছে, তা দুর্বোধ্য নয়। তারা আছে বলেই সম্ভাব্য অনেক বিপদ থেকে রক্ষা। জননিরাপত্তা, অনাকাঙ্ক্ষিত অরাজকতা প্রতিরোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের কারসাজি রুখে দেওয়া, মিল-কারখানা সচল রাখা, রাষ্ট্রের কেপিআই এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাগুলো রক্ষা, সড়ক-মহাসড়ক বাধামুক্ত রাখা, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, বিদেশি কূটনীতিক ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ সেনাবাহিনী যেভাবে করে যাচ্ছে, তা বিবেকবানরা উপলব্ধি করছেন মর্মে মর্মে।

প্রথাগতভাবে উপরোক্ত কাজগুলো পুলিশের। কিন্তু ক্ষতবিক্ষত, দুমড়েমুচড়ে যাওয়া পুলিশকে কাজে ফেরানো এখনো কঠিন কাজ। অন্যান্য বাহিনী একটু একটু করে পেশাদার হয়ে উঠছে। তাদের স্বাভাবিক করে তুলতে বাড়তি শ্রম দিতে হচ্ছে সেনাবাহিনীকে। এর সঙ্গে এখন আরো বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে নিয়মিত কাজের মতো। মাদক নির্মূল ও অপহরণ প্রতিরোধে সেদিন কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের গহিন জঙ্গলে র‌্যাব ও অন্যান্য বাহিনীর সমন্বিত অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারের গহিন অরণ্যে ডাকাত-সন্ত্রাসীদের আস্তানা। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সেনাবাহিনীর যৌথ টহলদলের অভিযানে ১২৫ কেজি গাঁজা, ৪২৪ বোতল ফেনসিডিল, সাত লিটার চোলাই মদ, মদ তৈরির কাঁচামাল, বিয়ার, মদ, ইয়াবা ও বিপুল পরিমাণ মাদকসহ চারজনকে পাকড়াও করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার একটু উন্নতি হতে না হতেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবার গোলমেলে। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় নিরাপত্তা, ভূ-আঞ্চলিক নানা চ্যালেঞ্জসহ নানা বিষয়ে বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিদের সুচিন্তিত পরামর্শের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে সেনাপ্রধানের বার্তা ও আহ্বানের কত ওজন, তা যার যার জায়গা থেকে উপলব্ধির বিষয়।

লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মিরপুরে প্রথম টি-টোয়েন্টি আজ

লাহোরের ‘বদলা’ ঢাকায়

তরিকুল ইসলাম সজল
তরিকুল ইসলাম সজল
শেয়ার
লাহোরের ‘বদলা’ ঢাকায়

একটু পরপরই ভেসে আসছে ওয়াচ ইট ওয়াচ ইট শব্দ। মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের মূল মাঠে সচরাচর এমন দৃশ্য দেখা যায় না। গতকাল সন্ধ্যায় কৃত্রিম আলোর নিচে সেন্ট্রাল উইকেটের দুই পাশের নেটে ব্যাট হাতে রীতিমতো তাণ্ডব চালালেন তাওহিদ হৃদয় ও জাকের আলীরা। বড় বড় ছক্কা হজমে এ দুই ব্যাটারের সামনে যেন বল ফেলার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদরা।

তাঁদের এমন প্রস্তুতি আজ সন্ধ্যা ৬টায় পাকিস্তানের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ঘিরে, যেখানে ঘুরেফিরে আলোচনার কেন্দ্রে মিরপুরের স্পিন সহায়ক উইকেট।

গতকাল সিরিজ-পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে মিরপুরের উইকেট নিয়ে একাধিকবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাসকে। সেসব কথার জবাব দেওয়ার আগে অবশ্য প্রথম ম্যাচের উইকেট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন লিটন। এরপর মিরপুরের কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করতেও দেখা গেল তাঁকে।

উইকেট দেখে আসার পর বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হলো লিটনকে, উইকেট ভালোই দেখলাম। আমার কাছে মনে হয় ভালো উইকেট হবে। ব্যাটিং-বোলিং দুই পক্ষেরই থাকবে। মিরপুরের এই উইকেটে সর্বশেষ ১৩ মাস আগে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন লিটনরা।
এই মাঠে সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হয়েছে প্রায় দুই মাস আগে। অর্থাৎ পাকিস্তানের বিপক্ষে সতেজ উইকেট পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। এর সঙ্গে শ্রীলঙ্কা থেকে সদ্য টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাসের পুঁজি তো আছেই। এবার সেটা মিরপুরে ধরে রাখার তাড়না শোনা গেল লিটনের কণ্ঠে, শ্রীলঙ্কায় আমাদের একটা ভালো সিরিজ গেছে, গোটা দলেরই। আমরা চেষ্টা করব, এই আত্মবিশ্বাসটা যেন দল হিসেবে আমরা মিরপুরেও ধরে রাখতে পারি।
পাকিস্তানি অধিনায়ক আগা সালমানও স্বাগতিকদের এগিয়ে রাখলেন, আমাদের জন্য এখানকার কন্ডিশন আলাদা। বাংলাদেশ যেকোনো স্টেডিয়ামে, যেকোনো মাঠে এবং যেকোনো দেশেই একটি খুব ভালো দল। আর যখন তারা নিজেদের দেশে খেলে, তখন তারা আরো শক্তিশালী। আমরা জানি আমাদের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আসতে চলেছে।

পরিসংখ্যান অবশ্য বাংলাদেশের বিপক্ষে কথা বলছে। এশিয়ান কাপের ম্যাচ বাদ দিলে টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি ২১ লড়াইয়ে মাত্র ২ জয় লিটনদের। এই দুটি জয় অবশ্য মিরপুরেই পেয়েছে বাংলাদেশ দল। তবে ২০১৬ সালের পর পাকিস্তানকে আর হারাতে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা, এই সময়ে হারে টানা ১২ ম্যাচ। সর্বশেষ সফরেও ৩-০ ব্যবধানে হারেন লিটনরা। এবার আক্ষেপ ঘোচাতে পারবে বাংলাদেশ? অধিনায়ক বললেন, যেকোনো দলকে হারানোর মতো মানসিকতা আমাদের আছে এবং আমরা সেই চেষ্টাই করব। কিন্তু নির্দিষ্ট এই দিনটাতে আপনাকে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। তার মানে এই না যে ঘরের মাঠ বলেই আপনি ভালো খেলে জিতিয়ে দেবেন। তবে এসব ভেবে নিজেদের ওপর চাপ বাড়াতে চাচ্ছেন না লিটন, না, কোনো অতিরিক্ত চাপ নেই। আমরা এসব রেকর্ডের দিকে মনোযোগ দিই না। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো ভালো ক্রিকেট খেলা এবং আমরা যে ধরনের ক্রিকেট খেলতে চাই, সেটাই খেলা। এই সিরিজেও আমরা একই বিষয়ে মনোযোগ দেব। আমরা প্রতিটি ম্যাচে ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই এবং প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে চাই।

মিরপুরের উঠান লিটনদের যেমন হাতের তালুর মতো চেনা, তেমনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলার সুবাদে পাকিস্তান দলের বেশ কয়েকজনও এখানকার কন্ডিশন সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাইছেন পাকিস্তানি অধিনায়ক, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই বিপিএলে খেলেছে, যা অবশ্যই একটি বড় সুবিধা। তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ আমাদের জন্য মূল্যবান। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের পরিকল্পনা সাজিয়েছি। তবে বাংলাদেশও সুবিধা পাবে বলে মনে করছেন লিটন, দুই পক্ষই সুবিধা পাবে। ওরাও জানে আমাদের শক্তি, দুর্বলতার জায়গাও জানে। আমরাও তাদের সঙ্গে খেলি, শক্তি, দুর্বল জায়গাগুলো সম্পর্কে জানি। তো, আমার মনে হয় না এটা খুব সমস্যা হবে।

মন্তব্য

গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৩০৬

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৩০৬
কারফিউ শিথিল থাকার সময় গতকাল গোপালগঞ্জ শহরে জনজীবনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করে। শহরের ছালেহিয়া আলিয়া মাদরাসা সড়কের সামনে থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

ধীরে ধীরে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। কারফিউ শিথিল থাকায় আগের দিনের চেয়ে জন ও যান চলাচল বেশি ছিল। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত বুধবারের হামলা-সংঘর্ষে পুলিশ বাদী হয়ে গতকাল পর্যন্ত চারটি মামলা করেছে। গতকাল শহরজুড়ে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছিল।

গতকাল শনিবার পর্যন্ত চারটি মামলায় আসামি করা হয়েছে তিন হাজার চারজনকে।

এদিকে গত বুধবার থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩০৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। নতুন গ্রেপ্তার করা হয় ১১৯ জনকে।

জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে আরো একটি মামলা করেছে পুলিশ।

সদর উপজেলার সাতপাড়ে পুলিশের গাড়ি পোড়ানো ও সড়কে গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করা হয় গোপালগঞ্জ সদর থানায়। গত শুক্রবার রাতে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুন বাদী হয়ে ৫৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ৩৫০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।

এর আগে সন্ত্রাস দমন আইনে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৫৭৫ জন, কাশিয়ানী থানায় ৩৭০ জন এবং কোটালীপাড়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এক হাজার ৬৫৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। সব মিলিয়ে আসামির সংখ্যা তিন হাজার চারজন।

পুলিশ জানায়, গোপালগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে চারটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলা করা হয় সদর, কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানায়। চারটি মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৫৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় দুই হাজার ৬৫০ জনকে।

গোপালগঞ্জে গতকাল সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকে। এ অবস্থায় গতকাল রাত ৮টা থেকে আজ রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউয়ের সময়সীমা বাড়ায় জেলা প্রশাসন।

কারফিউ শিথিল থাকায় সাধারণ মানুষ গতকাল ঘর থেকে বের হয়। শহরে যান চলাচলও ছিল আগের দিনের চেয়ে বেশি। শহরে খোলা রাখা হয় বেশ কয়েকটি দোকানপাট। তবে অনেকে ছিল গ্রেপ্তার আতঙ্কে।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানান, গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। তাই গতকাল রাত ৮টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউয়ের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

গত বুধবার গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ ভণ্ডুল করতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা ও সংঘর্ষে লিপ্ত হন। দিনভর সংঘর্ষে প্রথমে চারজন এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেকজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

মন্তব্য

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে এনসিপি নেতার বক্তব্যে উত্তাল কক্সবাজার

বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার ও চকরিয়া প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার ও চকরিয়া প্রতিনিধি
শেয়ার
সালাহউদ্দিনকে নিয়ে এনসিপি নেতার বক্তব্যে উত্তাল কক্সবাজার
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌর শহরে গতকাল এনসিপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। ছবি : কালের কণ্ঠ

কক্সবাজার জেলা শহরের শহীদ দৌলত ময়দানে এনসিপির জুলাই পদযাত্রার পথসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এবং কক্সবাজারের সন্তান সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর এক আপত্তিকর বক্তব্যে ফুঁসে উঠেছে কক্সবাজার। পাটওয়ারীর বক্তব্যের পরপরই শহরজুড়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। অবরোধ করা হয় সড়ক।

আকস্মিক এমন পরিস্থিতিতে উত্তেজিত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কবল থেকে রেহাই পেতে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানের পাহারায় পর্যটন শহর ছেড়ে বান্দরবানের পথে চকরিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয় এনসিপির পদযাত্রা।

কক্সবাজার শহর থেকে চকরিয়া পর্যন্ত কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঈদগাহ উপজেলা বাসস্টেশনে এবং চকরিয়া উপজেলা বাসস্টেশনে এনসিপির পৃথক পথসভা নির্ধারিত থাকলেও কোনো সভা আর করতে পারেননি এনসিপির নেতারা। এমনকি সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানের পাহারায় এনসিপি নেতাদের দলটি চকরিয়ায় পৌঁছার আগেই বিএনপির ক্ষুব্ধ লোকজন পথসভার মঞ্চটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। চকরিয়ায় বিক্ষুব্ধ লোকজন সড়ক অবরোধ করে রাখে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সড়ক অবরোধ ভেঙে দিয়ে ক্ষুব্ধ লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য লাঠিচার্জ করলে কয়েকজন আহত হন।

এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার জেলা শহরের শহীদ দৌলত ময়দানের মঞ্চে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের নাম উল্লেখ না করে বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত গডফাদার ছিল শামীম ওসমান। এখন শুনছি, কক্সবাজারের নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছে। ঘের দখল করছে, মানুষের জায়গাজমি দখল করছে। আবার সে নাকি সংস্কার বোঝে না।

নাম না বললাম। কক্সবাজারের জনতা এ ধরনের সংস্কারবিরোধী, যে পিআর বোঝে না, তাদের রাজপথে ঠেকিয়ে দেবে ইনশাআল্লাহ।

এমন বক্তব্য প্রদানের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। তখনই বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘর থেকে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। এনসিপির নেতারা সমাবেশস্থল ত্যাগ করার পরপরই ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা এনসিপির সমাবেশস্থলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।

এমনকি এনসিপির পদযাত্রার ব্যানার-ফেস্টুন সব কিছুই গুঁড়িয়ে দেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের মুখে ততক্ষণে কক্সবাজারের এনসিপি সমাবেশে যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন তাঁরাসহ এনসিপির নেতাকর্মীরাও দ্রুত সরে পড়েন।

ওদিকে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ সব উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে এনসিপি নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। কক্সবাজার জেলা শহরে বিকেল থেকে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাসাস, মহিলা দলসহ প্রায় সব সংগঠন একের পর এক প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল চলছিল।

এনসিপি আগেই কক্সবাজার থেকে পাঁচ জেলার উদ্দেশে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। এ ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কক্সবাজার শহরের দৌলত ময়দানমুখী পদযাত্রা শুরুর কথা থাকলেও তাদের কর্মসূচি শুরু হয় দুপুর ১টার পর। পথসভার মঞ্চে এনসিপি সভাপতি নাহিদ ইসলাম বলেন, পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষভাবে নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিটি তৈরি করাসহ এই দুটি সংস্কারে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে জুলাই সনদ তৈরি সম্ভব।

মন্তব্য
ফিরে দেখা ২০ জুলাই ’২৪

কারফিউয়ের মধ্যেও সংঘর্ষ, নিহত ৩৭

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
কারফিউয়ের মধ্যেও সংঘর্ষ, নিহত ৩৭

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নজিরবিহীন সহিংসতা ও প্রাণহানির জেরে আগের দিন ১৯ জুলাই রাত ১২টায় দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়। প্রথম দফায় এই কারফিউ ২০ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে। এরপর দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে ফের কারফিউ শুরু হয়ে পরদিন বিকেল ৩টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়।

এর মধ্যে থমথমে পরিবেশ আরো বাড়তে থাকে।

আর কারফিউয়ের মধ্যেও দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এদিন সংঘর্ষে সর্বোচ্চ ৩৭ জনের মৃত্যুর খবর আসে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে। নিহতদের মধ্যে রাজধানীতে ১৬ জন এবং রাজধানীর বাইরে ২১ জন।

২০ জুলাই তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখে সরকার।

কারফিউ চলার সময় সারা দেশে যানবাহন চলাচলও বন্ধ থাকে। এর প্রভাব পড়ে বিমান চলাচলেও। যাত্রীস্বল্পতা, যাত্রীদের বিমানবন্দরে পৌঁছতে দেরি হওয়া এবং সফটওয়্যারসংক্রান্ত সমস্যার কারণে বিভিন্ন ফ্লাইট বিলম্বিত বা বাতিল করা হয়। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় এয়ারলাইনগুলোকে।
এদিন রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে রেল চলাচল বন্ধ থাকবে।

রাজধানীতে সহিংসতা ঠেকাতে এদিনও র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহল অব্যাহত ছিল। বঙ্গভবন, গণভবন, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, থানা, সারা দেশের কারাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছ থেকে কারফিউ পাস নিয়ে জরুরি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা বাইরে বের হন।

কারফিউয়ের মধ্যে রাজধানীর অলিগলিতে মানুষের আনাগোনা থাকলেও এদিন বেশির ভাগ প্রধান সড়ক ছিল প্রায় জনশূন্য। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকি ছিল। তবে এদিনও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, বনশ্রী, রামপুরা, মালিবাগ, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় সংঘর্ষ বেশি হয়।

সকাল থেকে রাজধানীর বাড্ডা, বনশ্রী, উত্তর ও মধ্য বাড্ডা এলাকায় অবস্থান নেয় কয়েক শ মানুষ। এর মধ্যে বনশ্রীতে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান ছিল বেশি। বিক্ষোভকারীরা সড়কে লোহার ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ ও আহত হন।

সংঘর্ষের মধ্যে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বিভিন্ন দোকানের মালপত্র লুট হওয়ার খবরও পাওয়া যায় এদিন। মেরুল বাড্ডার হাতিরঝিল এলাকায় দোকানের লুট করা মালপত্র নিয়ে বিরোধে এক কিশোরের ছুরিকাঘাতে আরেক কিশোর নিহত হয়। এ ছাড়া আরেক কিশোর ছুরিকাঘাতে আহত হয়।

এদিন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ভবনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। এতে ওই ভবনে থাকা হাইওয়ে পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক মানুষ আটকা পড়ে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ গিয়ে হেলিকপ্টারের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে। হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়াও ওই ভবনে থাকা হাসপাতাল, ব্যাংক, চায়নিজ রেস্টুরেন্টসহ অর্ধশতাধিক দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এদিন দুপুরে কারফিউ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রাষ্ট্র ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্যই কারফিউ বলবৎ করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে কারফিউ শিথিল করা হবে।

আগের দিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মন্ত্রিসভার তিন সদস্যের বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের সব দাবি নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছে, যা আদালতে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ উপস্থাপন করবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং রায়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিষয়টির একটি গ্রহণযোগ্য মীমাংসা হবে।

 

রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক

দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এদিন রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠক করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকের পরই অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউয়ের ঘোষণা আসে।

 

দুই দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা

২০ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নির্বাহী আদেশে ২১ ও ২২ জুলাই সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ওই দুই দিন স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি, পোশাক কারখানাসহ সব কলকারখানা বন্ধ থাকবে বলেও জানানো হয় মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে। তবে জরুরি পরিষেবা কাজে নিয়োজিত কর্মীরা ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন। সুপ্রিম কোর্টও বিচারিক আদালতগুলোতে দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ