ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ

ছাত্র-জনতার শাহবাগ ব্লকেড

  • দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে সারা দেশ ঢাকা মার্চ করবে : নাহিদ ইসলাম
  • প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত শাহবাগে থাকব : হাসনাত আবদুল্লাহ
  • বিএনপি এলে জুলাইয়ের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে : সারজিস
  • সীতাকুণ্ডে সন্ত্রাসী হামলায় দুজন গুলিবিদ্ধসহ ১০ জামায়াত নেতাকর্মী আহত
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ছাত্র-জনতার শাহবাগ ব্লকেড
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে গতকাল বিকেল থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এনসিপিসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) জুলাই গণ-অভুত্থানে অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পাশে মিন্টো রোডের প্রবেশমুখে সমাবেশ শেষে তাঁরা শাহবাগ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। ওই সমাবেশ থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধের ঘোষণা দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। এরপর আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।

সেখানে অবস্থান নিয়ে তাঁরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে গণজমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। আজ শনিবার বিকেল ৩টা থেকে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

এর পাশাপাশি যত দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হবে, তত দিন পর্যন্ত শাহবাগ ব্লকেড থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। গতকাল শাহবাগে ব্লকেড কর্মসূচি চলার সময় রাত ১১টার দিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন হাসনাত আবদুল্লাহ।

সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, তিন দফা দাবিতে আমাদের অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আগামীকাল বিকেল ৩টার দিকে শাহবাগে গণজমায়েত ঘোষণা করা হচ্ছে।

ঢাকা থেকে জুলাই পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার যাঁরা হয়েছেন, যাঁরা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, শাপলা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই শাহবাগে আমাদের গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে।

 

ছাত্র-জনতার শাহবাগ ব্লকেড

সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি মিছিল শাহবাগের উদ্দেশে রওনা হয়। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছে চতুর্দিকে অবস্থান নেওয়া শুরু করে। এরপর ছোট ছোট মিছিল নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ ছাত্র-জনতা সেখানে আসতে শুরু করে।

শাহবাগে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারীরা চার থেকে পাঁচটি গ্রুপে ভাগ হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

স্লোগানে উত্তাল হয় শাহবাগ মোড়। এ সময় আন্দোলনকারীরা আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ, আওয়ামী লীগ, ব্যান ব্যান জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো, দিয়েছি তো রক্ত, আরো দিব রক্ত ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিকে গতকাল রাত ১০টায় ঢাকায় রামপুরা ব্রিজে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এর ফলে দুই পাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশে গত রাত ৯টা থেকে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাকর্মীরা। এতে মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

 

যমুনার পাশের সমাবেশ

যমুনার পাশের সমাবেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি সেদিন থেকে শুরু হবে, যেদিন থেকে টাইটেলটা হবেবাংলাদেশ উইদাউট আওয়ামী লীগ। ইন্টেরিমের (অন্তর্বর্তী সরকার) কানে আমাদের দাবি পৌঁছায়নি। তাই এখন আমরা শাহবাগ ব্লকেড করব। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত আমরা শাহবাগে থাকব। এখান থেকে আমাদের দ্বিতীয় অভ্যুত্থানপর্ব শুরু হবে।

তিনি বলেন, ১০০টা ফেরাউন একসঙ্গে করলেও একটা হাসিনা পাওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগকে কেন রাজনৈতিক দল বলা হয়? আমরা শুনতে পাচ্ছি প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসার চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে তিনি নাকি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ইতিহাসের প্রতিটি স্তরে আওয়ামী লীগের হাতে রক্ত লেগে রয়েছে। ২০০৬ সালে লগি-বৈঠা দিয়ে তারা মানুষ হত্যা করেছে। ভারতীয়দের সহায়তায় আমাদের দেশপ্রেমিক বিডিআর অফিসারদের পিলখানায় হত্যা করা হয়েছে। শাপলায় গণহত্যা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের ফিরিস্তি অনেক দেওয়া হয়েছে, আর নয়। আওয়ামী লীগ নামক ভাইরাস নিয়ে এই বাংলাদেশে থাকতে চাই না। আমরা সবাইকে একত্র করতে এই জমায়েতের ব্যবস্থা করেছি। এখান থেকে গিয়ে আমরা শাহবাগ অবরোধ করব।

 

সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল

সমাবেশে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ইসলামী আন্দোলনের আশরাফ আলী আকন, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, লেবার পার্টির ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার রাশেদ প্রধান, ইনকিলাব মঞ্চের শরীফ ওসমান হাদি প্রমুখ একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। তাঁরা দ্রুততম সময়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানান।

একাত্মতা প্রকাশ করে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সর্বদলীয় সভা ডেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে বিগত বছরগুলোতে যারা গুম, খুন ও অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আমাদের আবারও রাস্তায় নামতে হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা আমার ভাইকে খুন করেছে, গুম করেছে, যারা আমার বোনকে ধর্ষণ করেছে, যারা আমার অধিকার হরণ করে দিনের পর দিন আমাকে ভোট দিতে দেয়নি তাদের রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না।

 

যমুনার সামনে থেকে কিছু আন্দোলনকারীকে সরিয়ে দেয় পুলিশ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে যখন সমাবেশ চলছিল ওই সময় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান করা কিছু আন্দোলনকারীকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এনসিপি ঘোষিত সমাবেশ শুরু হলেও যমুনার সামনে ১০ থেকে ১৫ জন মানুষ অবস্থান করছিলেন। তাঁদের বারবার সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হলেও তাঁরা সেখানে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। এরপর মঞ্চ থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম যমুনার সামনে এসে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের মঞ্চের সামনে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা যমুনার সামনেই অবস্থান করবে বলে জানান।

পরে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে পুলিশ তাঁদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করলে তাঁরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে। ফলে কিছু সময়ের মধ্যে তারা ওই জায়গা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এ সময় উপস্থিত আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে এক নারীকে পুলিশ হেফাজতে নিতে দেখা গেছে।

এ সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও বিষয়টি নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে ছাত্র-জনতার জুমার নামাজ আদায়

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে জুমার নামাজ আদায় করছে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা। এদিকে নামাজ আদায়ের সময় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে নিরাপত্তা প্রাচীর তৈরি করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বাধীন একদল বিক্ষোভকারী। পরে তাতে সংহতি জানান জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

আর গতকাল জুমার নামাজের পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পাশে মঞ্চ তৈরি করে সেখানে সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা। সমাবেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।

 

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে উত্তরায় সড়ক অবরোধ

শাহবাগের পাশাপাশি গতকাল রাজধানীর উত্তরাসহ কয়েকটি এলাকায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় উত্তরায় ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তরা। সন্ধ্যা ৬টার দিকে উত্তরা বিএসএ সেন্টারের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে বলে জানায় পুলিশ। বিক্ষোভের কারণে সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হয়। এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জুলাই রেভল্যুশনারি এলায়েন্স নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে উত্তরা ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

 

দ্রুত সময়ে সিদ্ধান্ত না এলে সমগ্র দেশ ঢাকা মার্চ করবে : নাহিদ ইসলাম

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে না এলে সমগ্র দেশ ঢাকা মার্চ করবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম। গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা লেখেন।

ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলাম লেখেন, শাহবাগের অবস্থান চলমান থাকবে। দল-মত-নির্বিশেষে আওয়ামী লীগ ও দেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে জুলাইয়ের সব শক্তি এক থাকবেএটাই প্রত্যাশা। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্লকেড চালু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে সমগ্র বাংলাদেশ আবারও ঢাকা শহরে মার্চ করবে।

তিনি আরো লেখেন, দেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী, জুলাইবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী, ইসলামবিরোধী, নারীবিরোধী, মানবতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী মুজিববাদী সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণে বাংলাদেশপন্থী সব শক্তি ঐক্যবদ্ধ হই।

এর আগে আরেক ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলাম আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ ৩ দফা দাবি জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম। গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ দাবি জানান।

ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগের দলগত বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে। 

বিএনপি এলে জুলাইয়ের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে : ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম

বিএনপি এলে জুলাইয়ের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। গতকাল শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।

ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম বলেন, বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠন ছাড়া সব রাজনৈতিক দল এখন শাহবাগে। বিএনপি এলে জুলাইয়ের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়। আজকের এই শাহবাগ ইতিহাসের অংশ এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির মানদণ্ড।

 

আ. লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল, সমাবেশ, অবরোধ

এদিকে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার গুলজার মোড় এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এরপর চকবাজার থেকে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা নিউমার্কেট এলাকায় যান। নিউমার্কেট মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ ছাড়া গতকাল ষোলশহর ২ নম্বর সড়ক, নিউমার্কেট, হালিশহর, আন্দরকিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় একই দাবিতে মিছিল সমাবেশ হয়েছে।

রংপুরে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। গতকাল বাদ জুমা নগরের জিলা স্কুল মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কাচারীবাজার এসে আবার সেখানে গিয়ে অবস্থান নেয়। কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র, যুবদলের একটি অংশ, এনসিপি, জামায়াত, ছাত্রশিবির, গণ অধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে ছাত্র-জনতা। গতকাল জুমা বাদ নগরের শিববাড়ি ও ময়লাপোতা মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ছাত্র-জনতার ব্যানারে এ সমাবেশ হয়। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, রেড জুলাই, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও এনসিপির নেতারা বক্তব্য দেন।

গতকাল জুমার নামাজের পর সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এসসিপি ও সমমনা ছাত্র-জনতা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচিতে এনসিপির নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

রাজশাহী নগরের তালাইমারী এলাকায় জুমার নামাজের পর মার্চ ফর ব্যান আওয়ামী লীগ কর্মসূচি পালন করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রশিবির, হেফাজতে ইসলামসহ সমমনা আরো কয়েকটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এর আগে জুমার নামাজের পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় জড়ো হন। তাঁরা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। এতে সড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় পণ্যবাহী ট্রাক, দূরপাল্লার বাসসহ অন্যান্য যানবাহন আটকে যায়।

এ ছাড়া গতকাল নাটোরের কানাইখালী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমাবেশ এবং কুমিল্লার দেবীদ্বারে উপজেলা সদরে ও কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।

 

সীতাকুণ্ডে সন্ত্রাসী হামলায় গুলিবিদ্ধ দুজনসহ ১০ জামায়াত নেতাকর্মী আহত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরে সন্ত্রাসীদের হামলায় জামায়াতের প্রতিবাদসভা পণ্ড হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে জামায়াতের দুই নেতা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ১০ জন আহত হন। গতকাল বিকেলে উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুর এসএস পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।

সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ দুই জামায়াত নেতা হলেন মোহাম্মদ আলী ও আব্দুস সালাম। হামলায় আহত ১০ জনের মধ্যে রয়েছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা জামায়াতের যুগ্ম অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি কুতুব উদ্দিন শিবলীও। অন্যান্যের নাম জানা যায়নি। আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাঁচজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আহত জামায়াত নেতা কুতুব উদ্দিন শিবলী।

ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সোহেল রানা বলেন, জামায়াতের সমাবেশে সন্ত্রাসী হামলার খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে  ছুটে যান। অবরুদ্ধ জামায়াতের নেতাকর্মীকে উদ্ধারের পাশাপাশি আহত জামায়াতের নেতাকর্মীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার কালের কণ্ঠের অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক এবং জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা]

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জামায়াতের সমাবেশ আজ

১০ লাখের বেশি লোক সমাগমের লক্ষ্য

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
১০ লাখের বেশি লোক সমাগমের লক্ষ্য

দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ শনিবার আয়োজন করতে যাচ্ছে তাদের জাতীয় সমাবেশ। এবারই প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্ববৃহৎ জনসমাগমের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে দলটি। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে নানামুখী প্রস্তুতি।

সমাবেশ শুরু হবে দুপুর ২টায়।

তবে সকাল ১০টা থেকেই থাকবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশ উপলক্ষে প্রায় ১০ হাজার বাস, বিশেষ ট্রেন ও লঞ্চে আসবেন নেতাকর্মীরা। ১০ লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম আশা করছে দলটি।

এ জন্য তিনটি বিশেষ ট্রেন রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও ময়মনসিংহ রুটে চলাচল করবে, রেল কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে এর অনুমোদন দিয়েছে।

দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানিয়েছেন, বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সমাবেশে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবার ও আহতরাও থাকবেন সম্মানিত অতিথি হিসেবে।

সমাবেশের মূল লক্ষ্য ৭ দফা দাবি জনসমক্ষে উপস্থাপন ও আদায়ের অঙ্গীকার।

এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেঅবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের নিশ্চয়তায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা, সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন এবং এক কোটিরও বেশি প্রবাসী ভোটারকে ভোটাধিকার প্রদান।

জাতীয় সমাবেশ সফল করতে কাজ করছে একটি মূল বাস্তবায়ন কমিটি এবং অধীন আটটি উপকমিটি। দেশের সর্বত্র পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন, ভ্রাম্যমাণ মাইক এবং সাংস্কৃতিক দল নিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে। গান, নাটিকা আর স্লোগানে সমাবেশের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নগর থেকে গ্রামান্তরে।

সমাবেশস্থলে থাকবে কড়া নিরাপত্তা।

২০টি নির্দিষ্ট পয়েন্টে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্বে থাকবেন, যাঁদের জন্য থাকছে আলাদা ইউনিফর্ম। ঢাকার বাইরে থেকে আসা মানুষের গাড়ি রাখার জন্য ১৫টি আলাদা পার্কিং জোন নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

অতিথিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে থাকবে ১৫টি মেডিক্যাল বুথ, প্রতিটিতে দুজন এমবিবিএস চিকিৎসক, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও অ্যাম্বুল্যান্স সুবিধা।

বৃহৎ জনসমাগমের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হবে ড্রোন ও ক্যামেরা, যা প্রদর্শিত হবে এলইডি স্ক্রিনে এবং একযোগে প্রচারিত হবে ফেসবুক ও ইউটিউবেও।

এর আগে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, সড়ক, রেল ও নৌপথে সারা দেশ থেকে ঢাকামুখী হবেন লাখো মানুষ। তিনি নগরবাসীর কাছে সম্ভাব্য যানজট ও ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা

পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা দেখছে না বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের প্রয়োজনীয়তা দেখছে না বিএনপি

ভোটের অনুপাত (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চায় না বিএনপি। দলটি সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চেয়ে আসছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আগামীর সংলাপে আবার যথারীতি তাদের আগের এ অবস্থানই তারা তুলে ধরবে। এ অবস্থায় ঐকমত্য কমিশন নিজেরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উচ্চকক্ষ বাতিলের প্রস্তাব করলে, সেটার বিরোধিতা করবে না দলটি।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে ৩১ দফার আলোকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেই অঙ্গীকার রক্ষা করবে।

অর্থাৎ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে উচ্চকক্ষ গঠন করবে; মানে দলীয় অঙ্গীকার থেকে সরে যাবে না বিএনপি।

সর্বশেষ ঐকমত্য কমিশনার বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আমরা সেই জায়গাতেই আছি। আমাদের ৩১ দফার ভিত্তিতে আমরা যে আইডিয়া নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে বলেছিলাম, সেটি হলোযাঁরা দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন, যাঁদের জাতি গঠনে অবদান আছে এবং যাঁরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, তাঁদের মেধা, প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার অবদান যেন জাতি গঠনের কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়। জাতি যাতে সমৃদ্ধ হয়, সেই আইডিয়া থেকেই আমরা এই প্রস্তাবটি রেখেছিলাম।

সেখানে আমরা উচ্চকক্ষে ১০০টি আসন রাখার জন্য বলেছিলাম।

এর আগে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য হয়। কিন্তু নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একমত হতে পারেনি দলগুলো। পরে গত সপ্তাহের সোমবার ঐকমত্য কমিশন ৬৪ জেলা এবং ১২ সিটি করপোরেশন থেকে একজন করে নির্বাচিত সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠনের বিকল্প প্রস্তাব করলেও তা সরাসরি নাকচ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল।

পরদিন মঙ্গলবার কমিশনের সংলাপে বিএনপিসহ পাঁচটি দল প্রস্তাব করে, সংসদের নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে।

অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপিসহ ২১টি দল ভোটের অনুপাতে (পিআর) উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের পক্ষে দলীয় অবস্থান তুলে ধরে। কয়েকটি দল এমনও প্রস্তাব করেছে, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে সে ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষেরই দরকার নেই।

দীর্ঘ আলোচনায়ও সদস্যরা কিভাবে নির্বাচিত হবেনএ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য না হওয়ায় সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাবই বাদ যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়।

এমন পরিস্থিতিতে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী সপ্তাহে সংলাপে উচ্চকক্ষের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কমিশন মনে করে, সমাজে বিরাজমান বৈচিত্র্যকে প্রতিনিধিত্ব করতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রয়োজন রয়েছে।

অন্যদিকে বিদ্যমান সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলো একমত। তবে সংসদের উচ্চকক্ষের মতো নারী সংসদ সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও একমত হতে পারেনি দলগুলো।

কমিশনের প্রথম প্রস্তাব ছিল, সংসদের আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৪০০ করা হবে। ১০০ আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে শুধু নারীরা প্রার্থী হবেন। এতে ঐকমত্য না হওয়ায় গত সোমবার কমিশন প্রস্তাব করে ২৫টির বেশি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেএমন দলগুলো অন্তত এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারী প্রার্থী দেবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বেশির ভাগ দল এ প্রস্তাব নাকচ করে। বিএনপি আগের মতোই জানায়, নারী আসন ১০০ করতে একমত হলেও নির্বাচন হতে হবে বিদ্যমান পদ্ধতিতে অর্থাৎ কোনো দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের আসন সংখ্যার অনুপাতে।

জামায়াত জানায়, পিআর (ভোটের অনুপাতে) পদ্ধতিতে আসন বণ্টন হলে তারা আসন বৃদ্ধিতে রাজি। এনসিপি নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের নতুন ফর্মুলা দেয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সংসদে নারী সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। নেতারা অভিমত দেন, তাঁরা নারীর ক্ষমতা ও প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর পক্ষে। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসনসংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা ১০০টির মধ্যে ৫০টি নারী আসন সংরক্ষিত চাইবে। আর বাস্তবতার নিরিখে ধাপে ধাপে নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন চাইবে। এর অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনে ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ৫ শতাংশ, অর্থাৎ ১৫টি আসনে সরাসরি নির্বাচন এবং পরবর্তী নির্বাচন অর্থাৎ চতুর্দশ সংসদ নির্বাচনে ১০% মানে ৩০টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। দলটি তাদের মধ্যে ক্ষমতার কিছু ভারসাম্য আনতে রাজি আছে। তবে এমন ভারসাম্য চায় না, যেখানে সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকবে না।

স্থায়ী কমিটি মনে করে, সার্বিক বিবেচনায় রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হাতে পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। বিএনপি নেতারা অভিমত দেন, যদি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যাপক বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে সংসদীয় গণতন্ত্র তেমন অর্থবহ থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকলে, সেটা অকার্যকর হয়ে পড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একজন সদস্য বলেন, আগামীতে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার কিংবা সংসদীয় সরকারযে পদ্ধতিই করা হোক, সরকারপ্রধানকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিতে হবে। তবে আলোচনায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা নিয়ে আগামীতে আরো আলোচনা হবে।

মন্তব্য
সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা

গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. আশরাফুল হুদা বলেছেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা ছিল। তিনি আরো দাবি করেন, জুলাই চেতনা নস্যাৎ করে পতিত প্রধানমন্ত্রীকে পুনর্বাসন ও জাতীয় নির্বাচন পেছানোর একটি চক্রান্ত চলছে, গোপালগঞ্জের ঘটনা তারই অংশ।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সাবেক আইজিপি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর থাকলে গোপালগঞ্জের মতো এত বড় ঘটনা ঘটত না।

গোয়েন্দা ব্যর্থতাই এই ঘটনার জন্য দায়ী। তিনি আরো বলেন, পুলিশের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকলে এবং যথাযথভাবে কাজ করতে দিলে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।

সোহাগ হত্যা প্রসঙ্গে আশরাফুল হুদা বলেন, শহরের কেন্দ্রস্থলে হত্যাকাণ্ড ঘটে যাওয়ার পর পুলিশের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। দুই দিন পর বিষয়টি ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়, এটা দুঃখজনক।

এখানে কোনো গাফিলতি থাকলে তারও সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, বলেন তিনি।

মব ভায়োলেন্স প্রসঙ্গে সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সব সময় ভুক্তভোগীরাই মব ভায়োলেন্স করে না, অনেক সময় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যও এটি সংঘটিত হয়। কেউ কেউ পরিকল্পিতভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা মব সন্ত্রাস বৃদ্ধির প্রধান কারণএ বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠিত ছায়া সংসদে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের হারিয়ে বিজয়ী হয় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের বিতার্কিক দল।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, মব সন্ত্রাস জাতীয় জীবনে এক নতুন আপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশটা যেন মবের মুল্লুকে পরিণত হচ্ছে। এটি গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে কলঙ্কিত করছে। সমাজের ক্যান্সার হিসেবে এই সংস্কৃতি বন্ধ করা না গেলে জনজীবনে আতঙ্ক আরো বাড়বে।

মন্তব্য
মার্কিন কূটনীতিকদের প্রতি ট্রাম্প

অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
অন্য দেশের নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না

অন্য দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য না করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মার্কিন দূতাবাসগুলোতে তারবার্তা পাঠিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। তারবার্তায় বলা হয়েছে, কোনো দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি হয়নি, এই নিয়ে কোনো দেশের মার্কিন দূতাবাস বা রাষ্ট্রদূত যেন মন্তব্য না করেন। গত ১৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে এই তারবার্তা।

এতে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো দেশের নির্বাচন নিয়ে সেই দেশের মার্কিন দূতাবাস কিংবা ওয়াশিংটন থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হবে না।

নির্বাচনে বিজয়ী পক্ষকে অভিনন্দন জানানো এবং যথাযথ সময়ে বিজয়ী পক্ষের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মার্কিন স্বার্থ নিয়ে আলোচনা শুরুর দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।

তারবার্তায় আরো বলা হয়েছে, কোনো দেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে কি হয়নি, বৈধ হয়েছে কি হয়নি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোকে সমুন্নত রাখতে পেরেছে কি পারেনিএসব নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসে কর্মরত কূটনীতিকরা আগ বাড়িয়ে মন্তব্য তো করবেনই না, এমনকি কোনো পক্ষ প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তা এড়িয়ে যেতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

তারবার্তায় বলা হয়, অবশ্য কোনো দেশের নির্বাচন বা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যদি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত স্পষ্ট ও বাধ্যতামূলক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট থাকে, তাহলে এই নির্দেশনার ব্যতিক্রম ঘটবে; তবু সে ক্ষেত্রে ওই দেশের মার্কিন দূতাবাস, রাষ্ট্রদূত বা কর্মরত মার্কিন কূটনীতিকরা কোনো মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া জানাবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত মুখপাত্ররা প্রতিক্রিয়া জানাবেন।

তারবার্তায় আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তার নিজের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছে এবং তা উদযাপনও করছে। অন্যান্য দেশও একই পথ বেছে নিয়েছে। আমাদের প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে বলেছেন, যেকোনো দেশ, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, সেই দেশের সঙ্গে তিনি মার্কিন অংশীদারি বিস্তারের পক্ষে। সূত্র : রয়টার্স

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ