সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম দিনে সংলাপে অংশ নিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। এলডিপির পক্ষ থেকে কমিশনের উত্থাপিত ১২০টি প্রস্তাবের সঙ্গে একমত প্রকাশ ও ৪২টিতে অসম্মতি জানিয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সংস্কার প্রস্তাবের ওপর লিখিত মতামত দিয়েছে।
দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শুরু
- আগে গণপরিষদ নির্বাচন চায় না জামায়াত। পিআর পদ্ধতি ও দ্বিকক্ষ সংসদের পক্ষে মত
- সংস্কার সুপারিশের ১২০ প্রস্তাবে একমত, ৪২টিতে না এলডিপির
- রবিবার মতামত দেবে বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এলডিপির আনুষ্ঠানিক সংলাপ হয়। দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বে সংলাপে এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমদসহ আটজন উপস্থিত ছিলেন।
সংলাপ শেষে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ জানান, রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১৬৬টি প্রশ্নমালার যে স্প্রেডশিট পাঠিয়েছে তার মধ্যে এলডিপি ১২০টিতে একমত প্রকাশ করেছে। দলটি ৪২টিতে একমত নয় এবং দুটিতে আংশিকভাবে একমত ও দুটি অস্পষ্ট বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কারসংক্রান্ত ৭০টি প্রস্তাবের মধ্যে ৫১টিতে একমত, ১৬টিতে একমত নয়, একটিতে আংশিকভাবে একমত ও দুটি প্রস্তাবে অস্পষ্ট বলে মনে করে।
সুপারিশগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ সব থেকে দুর্বল ছিল বলে জানান অলি আহমদ। তিনি বলেন, ‘এর আগে তারা অতীতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ করেছিল তার কাগজ সংগ্রহ করা উচিত ছিল। আপনি যত কিছুই করেন না কেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পারবেন না, যদি না দুজন লোক কাজ না করে—একজন ওসি, আরেকজন হলো ইউএনও।
এলডিপির মতামতের কাগজ কাউকে না দিতে ঐকমত্য কমিশনের কাছে প্রস্তাব রাখেন অলি আহমদ। জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা কাউকে দেব না। আগামী শনিবার দুটি ও রবিবার একটি দল সংলাপে অংশ নেবে বলে জানান তিনি।’
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচন চায় না জামায়াত : গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংসদ ভবনে অবস্থিত নিজ কার্যালয়ে ঐকমত্য কমিশনের কো-চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজের কাছে সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদল। দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ।
এ সময় অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছে। আমিরে জামায়াতসহ নেতারা প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে দ্রুত একটি অর্থবহ নির্বাচন দেওয়ার জন্য বারবার বলে আসছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ের ব্যাপারে একটি ধারণা জাতির সামনে পেশ করা হয়েছে। আমরা তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করিনি। আজকে আমরা পাঁচটি বিষয়ের ওপর আমাদের মতামত তুলে ধরেছি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার উল্লেখ করেন, কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা একমত হতে পারিনি; আবার অনেক বিষয়েই একমত হয়েছি। আমরা ব্যাখ্যাসহ আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছি। আমরা আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংস্কার সম্পন্ন করে একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার কাজ শুরু করবে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, ঐকমত্য কমিশনের কাছে দেওয়া জামাতের প্রস্তাবে পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, পৃথিবীর ৬০টিরও বেশি দেশে এটি চালু রয়েছে। সংবিধানের মূলনীতি প্রসঙ্গে তারা আল্লাহর প্রতি অবিচল ঈমান এবং আস্থার কথা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া সংবিধানে সাম্য, গণতন্ত্র, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের ধারণা বজায় রাখতে মতামত দিয়েছেন।
তিনি জানান, জামায়াতে ইসলামী জনপ্রশাসনে বিরাজমান বৈষম্য এবং অসন্তোষের বিষয়েও মতামত দিয়েছে। তাঁরা এমন একটি সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চান, যা সুষ্ঠু ও কার্যকর হবে এবং প্রশাসনে অস্থিরতা বা বৈষম্য থাকতে পারবে না। বিচারব্যবস্থার বিষয়ে তাঁরা হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ এবং ডিভিশনাল বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনায় কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁদের মতে, দেশের বিচারব্যবস্থা অতিরিক্ত মামলার পেছনে দৌড়াচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ দ্রুত বিচার পাচ্ছে না। জামায়াতে ইসলামী চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। দলটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য সময়সীমা নির্ধারণের বিষয়ে মন্তব্য না করে; বরং সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ বলে মত প্রকাশ করেছে। তারা মনে করে, কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হলে তা ফলপ্রসূ না হলেও, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাটা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, কোনো দেশে গণপরিষদ নির্বাচনের প্রয়োজন হয় নতুন সংবিধানের প্রয়োজন হলে। কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল গঠন করা হয়। সেই কাজটা কখনো পার্লামেন্টেও হতে পারে, আবার গণপরিষদও হতে পারে। সবটাই সুযোগ সেখানে আছে। আমাদের তো একটা পার্লামেন্ট বিদ্যমান আছে। একেকটা দল নতুন গঠিত হলে তাদের নতুন কিছু কর্মনীতি কর্মসূচি থাকতেই পারে তা দোষণীয় কিছু নয়। সে ব্যাপারেও মতামত দিয়েছি।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচন চাই না। ধর্মনিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে আমরা মতামত দিয়েছি। ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দের যে ব্যাখ্যা ও ব্যবহার তা আমরা পছন্দ করি না।
তিনি বলেন, জামায়াত আগে থেকেই নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে যে অবস্থান সেই অবস্থানেই আছে। আমরা সময় কখনো বেঁধে দিইনি। আমাদের কাছে সময়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া। নির্বাচনটা যদি ১৪, ১৮ বা ২৪-এর মতো হয়, তাহলে তো ছয় মাস, দুই বছর, পাঁচ বছর অপেক্ষা করেও লাভ নেই। ১৫ বছর যদি একটা অবাধ-নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি, তাহলে সেই নির্বাচনের জন্যই মিনিমাম সংস্কার করার প্রয়োজন, সে জন্য যৌক্তিক সময় দিতে আমরা প্রস্তুত। দু-এক মাস আগে পিছের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হওয়া। সে জন্য আমরা কোনো রোডম্যাপ ও ডেডলাইন বলিনি। নির্বাচনের রোডম্যাপ ও ডেডলাইন দেওয়া উচিত সরকারের।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা আসলে সংবিধানের সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে চাই, যেখানে আমরা ফ্যাসিবাদ এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একটি সুষ্ঠু ও জনমুখী প্রশাসন গড়ে তুলতে পারব। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, সংস্কার কার্যক্রম যাতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং জনগণের কল্যাণে ঘটে।
গতকাল অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘সংস্কার বা নির্বাচন নিয়ে কমিশনের ওপর কোনো চাপ নেই। আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা তাই করছি। বিএনপি আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই তাদের মতামত জানাবে। ঈদের পরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে আলোচনা হবে।’ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গতকাল গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, আগামী রবিবার বিএনপি সংস্কার প্রস্তাব দেবে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক : জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কমফোর্ট ইরোর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ের সভাকক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এশীয় কর্মসূচির পরিচালক পিইয়েরে প্রকাশ এবং প্রতিষ্ঠানটির মায়ানমার ও বাংলাদেশি সিনিয়র কন্সালট্যান্ট থমাস কিয়ান উপস্থিত ছিলেন৷
জানা গেছে, বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজের অগ্রগতিসহ বিবিধ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হচ্ছে। ঈদের আগে চারটি দলের সঙ্গে সংলাপে বসবে কমিশন। ঈদের ছুটি শেষে পর্যায়ক্রমে বাকি দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরো জানান, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর সুনির্দিষ্ট মতামত জানতে এরই মধ্যে স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত ১৬টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত পাওয়া গেছে।
সম্পর্কিত খবর

মিরপুরে প্রথম টি-টোয়েন্টি আজ
লাহোরের ‘বদলা’ ঢাকায়
তরিকুল ইসলাম সজল

একটু পরপরই ভেসে আসছে ‘ওয়াচ ইট ওয়াচ ইট’ শব্দ। মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের মূল মাঠে সচরাচর এমন দৃশ্য দেখা যায় না। গতকাল সন্ধ্যায় কৃত্রিম আলোর নিচে সেন্ট্রাল উইকেটের দুই পাশের নেটে ব্যাট হাতে রীতিমতো তাণ্ডব চালালেন তাওহিদ হৃদয় ও জাকের আলীরা। বড় বড় ছক্কা হজমে এ দুই ব্যাটারের সামনে যেন বল ফেলার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদরা।
গতকাল সিরিজ-পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে মিরপুরের উইকেট নিয়ে একাধিকবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাসকে। সেসব কথার জবাব দেওয়ার আগে অবশ্য প্রথম ম্যাচের উইকেট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন লিটন। এরপর মিরপুরের কিউরেটর গামিনি ডি সিলভার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করতেও দেখা গেল তাঁকে।
পরিসংখ্যান অবশ্য বাংলাদেশের বিপক্ষে কথা বলছে। এশিয়ান কাপের ম্যাচ বাদ দিলে টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি ২১ লড়াইয়ে মাত্র ২ জয় লিটনদের। এই দুটি জয় অবশ্য মিরপুরেই পেয়েছে বাংলাদেশ দল। তবে ২০১৬ সালের পর পাকিস্তানকে আর হারাতে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা, এই সময়ে হারে টানা ১২ ম্যাচ। সর্বশেষ সফরেও ৩-০ ব্যবধানে হারেন লিটনরা। এবার আক্ষেপ ঘোচাতে পারবে বাংলাদেশ? অধিনায়ক বললেন, যেকোনো দলকে হারানোর মতো মানসিকতা আমাদের আছে এবং আমরা সেই চেষ্টাই করব। কিন্তু নির্দিষ্ট এই দিনটাতে আপনাকে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। তার মানে এই না যে ঘরের মাঠ বলেই আপনি ভালো খেলে জিতিয়ে দেবেন।’ তবে এসব ভেবে নিজেদের ওপর চাপ বাড়াতে চাচ্ছেন না লিটন, ‘না, কোনো অতিরিক্ত চাপ নেই। আমরা এসব রেকর্ডের দিকে মনোযোগ দিই না। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো ভালো ক্রিকেট খেলা এবং আমরা যে ধরনের ক্রিকেট খেলতে চাই, সেটাই খেলা। এই সিরিজেও আমরা একই বিষয়ে মনোযোগ দেব। আমরা প্রতিটি ম্যাচে ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই এবং প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে চাই।’
মিরপুরের উঠান লিটনদের যেমন হাতের তালুর মতো চেনা, তেমনি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলার সুবাদে পাকিস্তান দলের বেশ কয়েকজনও এখানকার কন্ডিশন সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাইছেন পাকিস্তানি অধিনায়ক, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই বিপিএলে খেলেছে, যা অবশ্যই একটি বড় সুবিধা। তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ আমাদের জন্য মূল্যবান। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের পরিকল্পনা সাজিয়েছি।’ তবে বাংলাদেশও সুবিধা পাবে বলে মনে করছেন লিটন, ‘দুই পক্ষই সুবিধা পাবে। ওরাও জানে আমাদের শক্তি, দুর্বলতার জায়গাও জানে। আমরাও তাদের সঙ্গে খেলি, শক্তি, দুর্বল জায়গাগুলো সম্পর্কে জানি। তো, আমার মনে হয় না এটা খুব সমস্যা হবে।’

গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার ৩০৬
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ধীরে ধীরে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। কারফিউ শিথিল থাকায় আগের দিনের চেয়ে জন ও যান চলাচল বেশি ছিল। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত বুধবারের হামলা-সংঘর্ষে পুলিশ বাদী হয়ে গতকাল পর্যন্ত চারটি মামলা করেছে। গতকাল শহরজুড়ে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছিল।
এদিকে গত বুধবার থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩০৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। নতুন গ্রেপ্তার করা হয় ১১৯ জনকে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে আরো একটি মামলা করেছে পুলিশ।
এর আগে সন্ত্রাস দমন আইনে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৫৭৫ জন, কাশিয়ানী থানায় ৩৭০ জন এবং কোটালীপাড়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এক হাজার ৬৫৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। সব মিলিয়ে আসামির সংখ্যা তিন হাজার চারজন।
পুলিশ জানায়, গোপালগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে চারটি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলা করা হয় সদর, কাশিয়ানী ও কোটালীপাড়া থানায়। চারটি মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৩৫৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয় দুই হাজার ৬৫০ জনকে।
গোপালগঞ্জে গতকাল সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকে। এ অবস্থায় গতকাল রাত ৮টা থেকে আজ রবিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউয়ের সময়সীমা বাড়ায় জেলা প্রশাসন।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ কামরুজ্জামান জানান, গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। তাই গতকাল রাত ৮টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউয়ের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
গত বুধবার গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ ভণ্ডুল করতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা ও সংঘর্ষে লিপ্ত হন। দিনভর সংঘর্ষে প্রথমে চারজন এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেকজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

সালাহউদ্দিনকে নিয়ে এনসিপি নেতার বক্তব্যে উত্তাল কক্সবাজার
বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার ও চকরিয়া প্রতিনিধি

কক্সবাজার জেলা শহরের শহীদ দৌলত ময়দানে এনসিপির জুলাই পদযাত্রার পথসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য, সাবেক মন্ত্রী এবং কক্সবাজারের সন্তান সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর এক আপত্তিকর বক্তব্যে ফুঁসে উঠেছে কক্সবাজার। পাটওয়ারীর বক্তব্যের পরপরই শহরজুড়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। অবরোধ করা হয় সড়ক।
আকস্মিক এমন পরিস্থিতিতে উত্তেজিত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কবল থেকে রেহাই পেতে সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানের পাহারায় পর্যটন শহর ছেড়ে বান্দরবানের পথে চকরিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয় এনসিপির পদযাত্রা।
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে কক্সবাজার জেলা শহরের শহীদ দৌলত ময়দানের মঞ্চে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদের নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত গডফাদার ছিল শামীম ওসমান। এখন শুনছি, কক্সবাজারের নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছে। ঘের দখল করছে, মানুষের জায়গাজমি দখল করছে। আবার সে নাকি সংস্কার বোঝে না।
এমন বক্তব্য প্রদানের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। তখনই বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘর থেকে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। এনসিপির নেতারা সমাবেশস্থল ত্যাগ করার পরপরই ক্ষুব্ধ বিএনপির নেতাকর্মীরা এনসিপির সমাবেশস্থলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।
ওদিকে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ সব উপজেলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে এনসিপি নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। কক্সবাজার জেলা শহরে বিকেল থেকে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, জাসাস, মহিলা দলসহ প্রায় সব সংগঠন একের পর এক প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল চলছিল।
এনসিপি আগেই কক্সবাজার থেকে পাঁচ জেলার উদ্দেশে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। এ ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কক্সবাজার শহরের দৌলত ময়দানমুখী পদযাত্রা শুরুর কথা থাকলেও তাদের কর্মসূচি শুরু হয় দুপুর ১টার পর। পথসভার মঞ্চে এনসিপি সভাপতি নাহিদ ইসলাম বলেন, পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষভাবে নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিটি তৈরি করাসহ এই দুটি সংস্কারে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে জুলাই সনদ তৈরি সম্ভব।

ফিরে দেখা ২০ জুলাই ’২৪
কারফিউয়ের মধ্যেও সংঘর্ষ, নিহত ৩৭
নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নজিরবিহীন সহিংসতা ও প্রাণহানির জেরে আগের দিন ১৯ জুলাই রাত ১২টায় দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়। প্রথম দফায় এই কারফিউ ২০ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে। এরপর দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে ফের কারফিউ শুরু হয়ে পরদিন বিকেল ৩টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়।
এর মধ্যে থমথমে পরিবেশ আরো বাড়তে থাকে।
২০ জুলাই তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখে সরকার।
রাজধানীতে সহিংসতা ঠেকাতে এদিনও র্যাবের হেলিকপ্টার টহল অব্যাহত ছিল। বঙ্গভবন, গণভবন, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, থানা, সারা দেশের কারাগারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তিদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল দেখা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছ থেকে কারফিউ পাস নিয়ে জরুরি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা বাইরে বের হন।
কারফিউয়ের মধ্যে রাজধানীর অলিগলিতে মানুষের আনাগোনা থাকলেও এদিন বেশির ভাগ প্রধান সড়ক ছিল প্রায় জনশূন্য। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকি ছিল। তবে এদিনও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, বনশ্রী, রামপুরা, মালিবাগ, মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় সংঘর্ষ বেশি হয়।
সকাল থেকে রাজধানীর বাড্ডা, বনশ্রী, উত্তর ও মধ্য বাড্ডা এলাকায় অবস্থান নেয় কয়েক শ মানুষ। এর মধ্যে বনশ্রীতে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান ছিল বেশি। বিক্ষোভকারীরা সড়কে লোহার ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ ও আহত হন।
সংঘর্ষের মধ্যে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বিভিন্ন দোকানের মালপত্র লুট হওয়ার খবরও পাওয়া যায় এদিন। মেরুল বাড্ডার হাতিরঝিল এলাকায় দোকানের লুট করা মালপত্র নিয়ে বিরোধে এক কিশোরের ছুরিকাঘাতে আরেক কিশোর নিহত হয়। এ ছাড়া আরেক কিশোর ছুরিকাঘাতে আহত হয়।
এদিন নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ভবনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। এতে ওই ভবনে থাকা হাইওয়ে পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক মানুষ আটকা পড়ে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ গিয়ে হেলিকপ্টারের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে। হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়াও ওই ভবনে থাকা হাসপাতাল, ব্যাংক, চায়নিজ রেস্টুরেন্টসহ অর্ধশতাধিক দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এদিন দুপুরে কারফিউ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রাষ্ট্র ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্যই কারফিউ বলবৎ করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে কারফিউ শিথিল করা হবে।
আগের দিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মন্ত্রিসভার তিন সদস্যের বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকার এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের সব দাবি নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছে, যা আদালতে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ উপস্থাপন করবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং রায়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিষয়টির একটি গ্রহণযোগ্য মীমাংসা হবে।’
রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক
দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এদিন রাতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠক করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকের পরই অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউয়ের ঘোষণা আসে।
দুই দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা
২০ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নির্বাহী আদেশে ২১ ও ২২ জুলাই সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ওই দুই দিন স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি, পোশাক কারখানাসহ সব কলকারখানা বন্ধ থাকবে বলেও জানানো হয় মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে। তবে জরুরি পরিষেবা কাজে নিয়োজিত কর্মীরা ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন। সুপ্রিম কোর্টও বিচারিক আদালতগুলোতে দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করে।