<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নানা কৌশলে সাধারণ মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কারণে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে বিশেষ নামে পরিচিতি পেয়েছেন সালমান ফজলুর রহমান বা সালমান এফ রহমান। ওষুধশিল্পের পরিচিত নাম বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প খাতের উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বেক্সিমকো ও সালমান এফ রহমানের নানা অপকীর্তি। এই এক ব্যক্তির সিন্ডিকেটেই তছনছ হয়ে গেছে দেশের ব্যাংক খাত ও শেয়ারবাজার। তথ্য বলছে, দেশের ইতিহাসে দুটি বড় শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতা সালমান এফ রহমান। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুসন্ধানে জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে সালমান এফ রহমানের নজিরবিহীন আর্থিক অনিয়ম, বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা লোপাটসহ শেয়ারবাজার জালিয়াতি অব্যাহত ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এসব তথ্য প্রকাশ্যে আসতে পারেনি। ব্যাংক ও শেয়ারবাজার থেকে জালিয়াতি, কারসাজি, প্লেসমেন্ট শেয়ার ও প্রতারণার মাধ্যমে সালমান এফ রহমান যে পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন, তা কয়েক লাখ কোটি টাকা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="সালমানে কাহিল ব্যাংক-পুঁজিবাজার" height="235" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/08.July/16-08-2024/5777.jpg" style="float:left" width="333" />প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, শেয়ারবাজারের সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের যোগসাজশে ব্যাংক ও শেয়ারবাজার থেকে এই টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচারের অভিযোগও রয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৯৬ ও ২০১০ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির নায়ক সালমান এফ রহমান শেয়ারবাজারকে তছনছ করে দেন। দেশের বর্তমানের পুরো ব্যাংক খাতকে দেউলিয়ার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ায় বড় অবদান রেখেছেন তিনি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার পাশাপাশি পণ্য রপ্তানি করে দেশে টাকা না আনার বিস্তর অভিযোগও রয়েছে তাঁর মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুসন্ধানে দেখা যায়, সালমান এফ রহমান প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি সাতটি ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। এসব ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে মানা হয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো আইন। বেশির ভাগ ঋণের পর্যাপ্ত জামানতও নেই। আবার বছরের পর বছর ঋণের অর্থ পরিশোধ না করেই বারবার করেছেন পুনঃ তফসিল। তাঁর এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড জানার পরও চুপ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্টো ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছেন রপ্তানিতে বিশেষ ভূমিকার জন্য অ্যাওয়ার্ড। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২১ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সালমান এফ রহমান ও বেক্সিমকো গ্রুপ। তবে এত দিন তাঁর নামে জনতা ব্যাংকে ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকা দেখানো হচ্ছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে তাঁর ২৯টি প্রতিষ্ঠানে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে ২১ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার ঋণের তথ্য বেরিয়ে আসে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ব্যাংকটিতে সালমান এফ রহমানের দুই প্রতিষ্ঠানে ২৩ হাজার ৭০ কোটি টাকার ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের ২০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। ফান্ডেড ২০ হাজার ২০৮ কোটি এবং নন-ফান্ডেড ৫৪৪ কোটি টাকা। বেক্সিমকো লিমিটেডে ফান্ডেড এক হাজার ৯৯৪ কোটি এবং নন-ফান্ডেড ৩২৪ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, একক গ্রাহককে মূলধনের ২৫ শতাংশের (ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড) বেশি ঋণ দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে জনতা ব্যাংক একটি গ্রুপকেই ব্যাংকের মূলধনের ৯৪৯.৭৮ শতাংশ ঋণ সুবিধা দিয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে সালমান এফ রহমান নিজের মালিকানাধীন আইএফআইসি ব্যাংক থেকে শ্রীপুর টাউনশিপ প্রতিষ্ঠানের নামে নন-ফান্ডেড এক হাজার ২০ কোটি টাকা, সানস্টার বিজনেসের নামে ৬১৫ কোটি টাকা, ফারেস্ট বিজনেসের নামে ৬১৪ কোটি টাকা, কসমস কমোডিটিস লিমিটেডের নামে ৬১২ কোটি টাকা, অ্যাপোলো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ৪৫৫ কোটি টাকা, আল্ট্রন ট্রেডিং লিমিটেডের নামে ৪৪৯ কোটি টাকা, নর্থস্টোন কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নামে ৪২১ কোটি টাকা, আলফা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের নামে ৫৬৯ কোটি টাকা এবং অ্যাবসলিউট কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের নামে ৪৬৩ কোটি টাকা ঋণ নেন। এর বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই বেনামি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক থেকেও সালমান এফ রহমান নামে-বেনামে বিপুল অর্থ ঋণ নিয়েছেন। ব্যাংকটি থেকে এসব ঋণ নিয়েছেন বহু বছর আগে। কিন্তু কোনো অর্থ পরিশোধ না করেই নিয়মিত থেকে যাচ্ছেন। ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ব্লুম সাকসেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের অনুকূলে ফান্ডেড ৮৩৬ কোটি টাকা, বেক্সিমকো গ্রুপের অনুকূলে ফান্ডেড ৮২৩ কোটি টাকা, বেক্সিমকো এলপিজি ইউনিট ১ ও ২-এর অনুকূলে ফান্ডেড ২৩৪ কোটি টাকা ও নন-ফান্ডেড ৫৯ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তথ্য অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো লিমিটেডের নামে ফান্ডেড ৬৬৩ কোটি টাকা, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের নামে ফান্ডেড ৩৭৫ কোটি টাকা এবং বেক্সিমকো কমিউনিকেশন লিমিটেডের নামে ফান্ডেড ৩০০ কোটি টাকা ও নন-ফান্ডেড ৭১ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন। রূপালী ব্যাংক থেকে বেক্সিমকো লিমিটেডের নামে ৯৬৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকে রয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের এক হাজার ৮৩৮ কোটি টাকার ঋণ। এর মধ্যে পুনর্গঠিত ঋণ এক হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। এসব ঋণ পরিশোধ না করার পরও নিয়মিত রয়েছে। অথচ পুনর্গঠিত ঋণের দুই কিস্তি পরিশোধ না করলেই ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়ার কথা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য আরো বলছে, এবি ব্যাংকে সালমান এফ রহমানের চার প্রতিষ্ঠানের ঋণ রয়েছে। সব ঋণই পুনর্গঠিত। এ ব্যাংকের ঋণও বছরের পর বছর পরিশোধ করা হয়নি। ঋণগুলো ২০১৫ সালে পুনর্গঠিত করা হয়। বর্তমানে চারটি প্রতিষ্ঠানের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেডের ১২০ কোটি টাকা। একই প্রতিষ্ঠানের আরো ৫৫ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলের ৮৩ কোটি টাকা এবং নিউ ঢাক্কা ইন্ডাস্ট্রিজের ৩৪৫ কোটি টাকা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কম্পানির একীভূতকরণ, সুকুক ও বন্ড ইস্যু এবং প্লেসমেন্ট শেয়ারের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া গত ১৫ বছরে সুবিধাভোগী অনেক শেয়ার ব্যবসায়ী ও কম্পানির উদ্যোক্তা পুঁজিবাজার কারসাজির মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ১৯৯৬ ও ২০১০ সাল ছাড়াও বিভিন্ন সময় বড় দরপতনে সালমান এফ রহমানের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এর মধ্যে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের শেয়ারবাজারে ধস-পরবর্তী তদন্ত রিপোর্টে তাঁর নাম উঠে এসেছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তথ্য বলছে, ১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির নায়ক সালমান এফ রহমান। তাঁর ইশারায় শেয়ারবাজারে দর ওঠানামা করায় ওই সময়ই সর্বসাধারণের কাছে তাঁর বিশেষ নাম ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার চার মাসের মধ্যে সালমান এফ রহমান কূটকৌশলে শেয়ার কেলেঙ্কারির জন্ম দেন। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বেক্সিমকো গ্রুপ। ওই ঘটনায় ১৫টি প্রতিষ্ঠান ও ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু ওই ঘটনার অন্যতম অংশীদার বেক্সিমকো ও শাইনপুকুরের বিরুদ্ধে মামলার কোনো অভিযোগই গঠন করা সম্ভব হয়নি। মামলার পরের দিনই প্রতিষ্ঠান দুটির চেয়ারম্যান এ এস এফ রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। উচ্চ আদালত থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা যাবে না বলে জানানো হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও মো. সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ২০১৫ সালের ১৬ মার্চ মামলা দুটি বাতিলের আদেশ দেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির তদন্ত কমিটি কারসাজিতে সালমান এফ রহমানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পায়, যার প্রতিবেদন ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে ১৯৯৬ সালের পর ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় শেয়ারবাজারে আবারও বড় ধরনের ধস নামে। শেয়ারবাজার কারসাজি নিয়ে ২০১১ সালে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত রিপোর্টেও সালমান এফ রহমানের নাম আসে। ওই সময় প্রভাব খাটিয়ে বেক্সিমকো ফার্মার প্রেফারেন্স শেয়ার পাস করিয়ে নেন তিনি। এই শেয়ারের মাধ্যমে প্রিমিয়ামসহ ৪১০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। একই সময়ে শাইনপুকুর সিরামিকের মাধ্যমে ২৮৬ কোটি এবং বেক্সিমকো টেক্সটাইলের মাধ্যমে ৬৩৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া জিএমজি এয়ারলাইনসের প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে ৩০০ কোটি টাকা নেন তিনি। পরে ওই কম্পানি উধাও হয়ে যায়। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের আর টাকা ফেরত দেননি তিনি। একইভাবে জিএমজি এয়ারলাইনসের নামে সোনালী ব্যাংক থেকে ২২৮ কোটি টাকা ঋণ নেন তিনি। ২০১১ সালে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে আইএফআইসি মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে এক হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। ২০১৩ সালে আইএফআইসি ব্যাংকের টাকায় নেপালের লোকসানি প্রতিষ্ঠানের ১০ টাকার শেয়ার ৭৫ টাকায় কেনেন তিনি। এই প্রক্রিয়ায় সেখানে ১২৫ কোটি টাকা পাচার করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র বলছে, ২০২১ সালে বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক আল ইসতিসনা শরিয়াভিত্তিক বন্ডের নামে শেয়ারবাজার থেকে তিন হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত অর্থে বেক্সিমকো লিমিটেডের সাবসিডিয়ারি তিস্তা সোলার লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিটেডের নির্মাণকাজ ও বেক্সিমকোর বস্ত্র খাতের ব্যবসা সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা এবং পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে এই অর্থ ব্যবহার করার ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালের ৪ জুলাই বেক্সিমকোর সুকুক শেয়ারে রূপান্তরে বিএসইসির শর্ত শিথিল করে দেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বলা হয়, বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক আল ইসতিনার শেয়ার রূপান্তরে বিএসইসির আগাম অনুমোদন নিতে হবে না।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০২৩ সালের মার্চে নতুন কম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের (এসটিএল) নামে এক হাজার কোটি টাকার </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইএফআইসি আমার বন্ড</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ইস্যু করা হয়। পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সুদ পরিশোধের আর্থিক সক্ষমতা মূল্যায়ন না করেই নতুন প্রকল্পের জন্য এই বৃহৎ বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে। আমার বন্ডের গ্যারান্টি দিয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক। অর্থাৎ নতুন কম্পানিটি কোনো অর্থ পরিশোধ করতে না পারলেও সেই টাকা দিতে হবে আইএফআইসি ব্যাংককে। পরে চলতি বছরের মার্চে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক আগে বেক্সিমকোকে এসটিএলে বিনিয়োগের জন্য বন্ড ইস্যু করে দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমতি দেন। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন না পাওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে দিয়ে সালমান এফ রহমান তাঁর নতুন রিয়েল এস্টেট কম্পানির জন্য মোট তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি আজাদ আহসান বাচ্চু বলেন, পুঁজিবাজার আওয়ামী লীগ সরকারের গিফট কার্ড হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাদের যখন মনে হতো তখন সালমান এফ রহমানের মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলে নিত। ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের শেয়ার কারসাজির নায়ক সালমান এফ রহমান হলেও তাঁকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা বানিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেয়ারবাজারে কারসাজির সঙ্গে বিভিন্ন সময় যাঁরা জড়িত ছিলেন স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি। সালমান এফ রহমান ইনসাইডার ট্রেডিং, বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিএসইসির সাবেক দুই চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে বাজার থেকে এই অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করলেই আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হতো। সর্বশেষ গত জুন মাসে আমাদের ১১ বিনিয়োগকারীকে আসামি করে মামলা দেওয়া হয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যাংকিং খাত ও শেয়ারবাজারে কারসাজি ও জাল-জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে সালমান এফ রহমানের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তিনি নিউ মার্কেট থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে আছেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সালমান এফ রহমানের বন্ডের ক্ষেত্রে বাড়তি সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং  বিএসইসি সঠিক নিয়ম পরিপালন না করার কারণ জানতে চাইলে বিএসইসি মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার আমার নেই। বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান পদায়ন হলে তিনি উত্তর দিতে পারবেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৯৬ সালের দুটি শেয়ার কেলেঙ্কারির মামলায় সালমান এফ রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও বিএসইসির পক্ষ থেকে আপিল করা হয়নি কেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁর পক্ষ থেকে কোনো সদুত্তর মেলেনি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে ব্যাংকিং খাত ও শেয়ারবাজারে এ ধরনের প্রতারণা ও জালিয়াতির দৃষ্টান্ত নেই। ব্যাংকিং খাতে ঋণখেলাপির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে সালমান এফ রহমান এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান। তিনি ঋণখেলাপিদের পাইওনিয়ার। তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও খেলাপি হয়েছে, দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। হাতিয়ে নিয়েছে ব্যাংকের টাকা, আমানতসংকটে রয়েছে অনেক ব্যাংক। একইভাবে শেয়ারবাজারের কারসাজির পাইওনিয়ারও তিনি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ব্যাংক কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে তা-ও ঠিক করে দিতেন তিনি। দৃশ্যমান অনিয়ম দেখার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকার তাঁর কর্তৃত্ববাদ টিকিয়ে রাখতে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বাধ্য হয়েছে মন্তব্য করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সালমান এফ রহমান নিজেকে দ্বিতীয় শক্তিশালী ব্যক্তির পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, যার কারণে সব নীতি কাঠামো তাঁর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তিনি তা নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহার করেছেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ প্রসঙ্গে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে ফোন করলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>