<p>রাজধানী ঢাকার ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ এলাকা এরই মধ্যে উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতি ঢাকা শহরের আবহাওয়াকে বিপজ্জনক করে তুলেছে। এতে ঢাকায় প্রতিবছর প্রায় ৬২ হাজার (৬০০ কোটি ডলার) কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, যা ঢাকার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮ শতাংশ। ব্যবস্থা না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ এটি ১০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। ক্ষতির পরিমাণ ছাড়াবে এক হাজার ২০০ কোটি ডলার।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রিজিলিয়ান্স সেন্টারের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ‘হট সিটিজ, চিল্ড ইকোনমিস : ইমপ্যাক্টস অব এক্সট্রিম হিট অন গ্লোবাল সিটিজ’ শিরোনামে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে ঢাকাসহ বিশ্বের ১২টি শহরে চরম তাপের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলবে। ঢাকার তাপ তার নগরকেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত। এর মধ্যে কিছু অনানুষ্ঠানিক বসতি এলাকা রয়েছে। এসব এলাকায় জনঘনত্ব বেশি ও সবুজ পরিসরের অভাব রয়েছে। ঢাকায় এ ধরনের এলাকা বাড়ছে। শহরের এই এলাকাগুলোর তাপমাত্রা পাশের গ্রামাঞ্চলের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে তৈরি পোশাক, পরিবহন ও পাইকারি খুচরা ব্যবসা।</p> <p>বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার আকার ছিল প্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা। এই খাতে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক ও ব্যাবসায়িক অবদান রাখছে রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার। অন্যদিকে দেশের তৈরি পোশাক খাতের একটি বড় অংশ রাজধানী ও রাজধানীর আশপাশ ঘিরেই গড়ে উঠেছে। এ খাতে প্রায় ৪০ লাখের বেশি মানুষ নিয়োজিত রয়েছে। পরিবহন খাতের অর্থনৈতিক অবদান ছাড়িয়েছে দুই লাখ কোটি টাকা। এর বড় একটি অংশই রাজধানীকেন্দ্রিক। ফলে শ্রমনির্ভর এসব খাতে উচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সরাসরি প্রভাব পড়ছে।</p> <p>রাজধানীতে বেশি তাপমাত্রা রয়েছে, এমন এলাকার মধ্যে ঢাকার কামরাঙ্গীর চর উল্লেখযোগ্য। এখানকার ঘরবাড়িগুলোর ছাদ টিন দিয়ে তৈরি। ফলে এই এলাকার তাপমাত্রা কাছাকাছি এলাকার তুলনায় ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এলাকাটিতে ঘরের ভেতরে আরো বেশি তাপ অনুভূত হয়। উচ্চ তাপের কারণে অন্য যেকোনো শহরের তুলনায় ঢাকার মানুষের শ্রম উৎপাদনশীলতা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাপমাত্রা কমাতে উদ্যোগ না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ এই ক্ষতি ১০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। সব মিলিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ ক্ষতি হতে পারে এক হাজার ২০০ কোটি ডলার। রাজধানীর কিছু ভবনের ছাদে এক ধরনের রং ব্যবহার করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা ও নিম্নমানের বসতির ভেতরের তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমেছে। যানবাহনে সবুজ ছাদের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য গবেষকরা পরামর্শ দিচ্ছেন।</p> <p>এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ হাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম বড় প্রভাব হলো উচ্চ দাবদাহ ও আর্দ্রতা। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে মানুষ সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। দাবদাহের কারণে শরীর থেকে সোডিয়াম ও পটাসিয়াম বের হয়ে যায়। ফলে উচ্চ তাপমাত্রা নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। দাবদাহে আর্থিক ক্ষতি নির্ণয়ের পাশাপাশি রাজধানীর দাবদাহের হটস্পটগুলো দ্রুত চিহ্নিত করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।</p> <p>ঢাকা ছাড়া বাকি ১১টি শহর হলো গ্রিসের এথেন্স, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, অর্জেন্টিনার বুয়েন্স এইরেস, সিয়েরা লিওনের ফ্রিটাউন, যুক্তরাজ্যের লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ও মিয়ামি, মেক্সিকোর মন্টেরেই, ভারতের নয়াদিল্লি, চিলির সান্তিয়াগো ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনি। ১২টি শহরে ২০২০ সালে গড় ক্ষতির পরিমাণ চার হাজার ৪০০ কোটি ডলার। তাপমাত্রা কমাতে ব্যবস্থা না নিলে ২০৫০ সাল নাগাদ এই ক্ষতির পরিমাণ আট হাজার ৪০০ কোটি ডলার হতে পারে।</p> <p>রাজধানীতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শ্রমনিবিড়তা বেশি রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীতে তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা কম। ফলে ঢাকা উচ্চ তাপের প্রভাবের জন্য অস্বাভাবিক ঝুঁকিপূর্ণ। অনিয়ন্ত্রিত উষ্ণায়নের কারণে তৈরি পোশাক, পরিবহন ও খুচরা ব্যবসা খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকা শহরে প্রায় চার লাখ হকার রয়েছেন। শ্রমিক হিসেবে তাঁদের দক্ষতা কম। বেশির ভাগ হকারের কোনো স্থায়ী দোকান নেই। তাঁরা মূলত ফুটপাতে উন্মুক্ত স্থানে নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করেন। তাপপ্রবাহ চলার সময় ৯ শতাংশ হকারের ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ আয় কমে যায়। প্রায় ৫ শতাংশ হকার ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ আয় হারান।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>