<p>জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সামরিক শাসনামলে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন প্রত্যক্ষ করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেত গতকাল বুধবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিচার চাইতেও বাধা দেওয়া হয়েছে।’</p> <p>প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিমের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা বাসস এ তথ্য জানায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন।</p> <p>প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করতে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকার ‘ইনডেমনিটি’ (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেছিল। জোর করে নির্বাসন থেকে নিজের দেশে ফেরার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই অধ্যাদেশের কারণে বিচার চাইতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তৎকালীন সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিল।</p> <p>মিশেল বাশেলেত বলেন, তাঁর পরিবারকেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, যখন তাঁর দেশে (চিলি) অত্যাচারী সরকার ক্ষমতায় ছিল।</p> <p>জাতিসংঘের হাইকমিশনার বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে ‘গভীরভাবে আলোড়িত’ হয়েছেন।</p> <p><strong>রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে হবে</strong></p> <p>বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বাংলাদেশে সাময়িকভাবে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। আর তাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।’</p> <p>বাশেলেতকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার অস্বীকার করেনি যে রোহিঙ্গারা তাদের নাগরিক নয়। অন্যদিকে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরিয়েও নিচ্ছে না।</p> <p>মিশেল বাশেলেত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি এবং কাজের সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ কক্সবাজারে সম্ভব নয়। এগুলো নোয়াখালীর ভাসানচরে নেওয়া যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা এরই মধ্যে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। তারা মৌলিক সুবিধা পাচ্ছে।</p> <p>প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতিসংঘের হাইকমিশনার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক সমস্যা ও ইস্যুতে আলোচনা করেন।</p> <p><strong>বাংলাদেশের মাটি কারো সন্ত্রাসের জন্য নয়</strong></p> <p>জাতিসংঘের হাইকমিশনার বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জাতিসংঘ আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে এবং ওই আইন বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন। সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কাউকে সন্ত্রাসবাদের জন্য তার মাটি ব্যবহার করতে দেবে না।</p> <p><strong>সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা</strong></p> <p>প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে অবদান রাখছে। আমরা কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের জন্য কৃষির ওপর জোর দিচ্ছি।’</p> <p>মিশেল বাশেলেত বৈষম্য দূর করার জন্য বাংলাদেশের এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও কাজের প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। উভয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেন।</p> <p><img alt="" src="http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Print Version Online/print /2022/08.August/18-08-2022/121/ffffffff.jpg" /><br /> প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল গণভবনে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেত।     ছবি : পিআইডি</p>