সাভারের আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের উপস্থিতিতে সব সময় উৎসবমুখর ছিল। সপ্তাহের ব্যবধানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে। এক সপ্তাহ পর গতকাল শনিবার প্রতিষ্ঠানটি খোলার পর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। চাপা কষ্ট আর উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রিয় ক্যাম্পাসে নিঃশব্দে প্রবেশ করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞাপন
আগেই প্রতিষ্ঠানটি থেকে বহিষ্কার করা হয় বখাটে জিতুকে। হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গতকাল বহিষ্কার করা হয় জিতুর প্রেমিকাকে। আন্দোলন-বিক্ষোভ নানা কর্মসূচির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি খুললেও নেই প্রিয় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার।
গতকাল সকালে হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেননি দারোয়ান আব্দুস সালাম। এই কদিন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আপনজন হয়ে ওঠেন তিনি।
অন্যদিকে ১০ বছর ধরে শত শত শিক্ষার্থীকে সন্তানের মমতায় আগলে রেখেছিলেন শিক্ষক উৎপল কুমার। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে তিনতলা ভবনটির দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষ। তৃতীয় তলা এখনো নির্মাণাধীন। ফটক পেরোলেই ছোট মাঠ। মাঠের ডান পাশে ঘটেছিল সেই বর্বর ঘটনা। শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছিল বখাটে জিতু। ফলে গতকাল শিক্ষার্থীরা যখন মূল ফটক পার হচ্ছিল কেউ যেন ডান পাশে চোখ ফেলতে পারছিল না। ভেতরে ক্লাস চলছে। কিন্তু সেই ক্লাসে প্রাণ ছিল না। স্কুলের মাঠে টহল দিচ্ছিল আশুলিয়া থানা পুলিশের একটি দল। প্রতিষ্ঠানটিজুড়ে ছিল এক ধরনের থমথমে পরিবেশ। শিক্ষার্থীদের কাছে অপরিচিত লাগছিল নিজেদের ক্যাম্পাস।
শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার শিক্ষার্থীদের পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ে পড়াতেন। প্রতিষ্ঠানটির সুশাসনের দায়িত্বও ছিল তার কাঁধে। শৃঙ্খলা কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। গতকাল পৌরনীতি ক্লাসটি হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী ছলছল চোখে বলে, ‘আমরা কখনো ভাবতে পারিনি একজন শিক্ষকের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এত বছর ধরে যিনি আমাদের শৃঙ্খলা শিখিয়েছেন, সেই তাঁকে একজন ছাত্র হত্যা করতে পারে, ভাবতে পারছি না। আমরা স্যারকে কোনোভাবে ভুলতে পারছি না। স্যার আমাদের চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছেন। ’
জিতুর পর প্রেমিকাও বহিষ্কার
আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি আশরাফুল ইসলাম জিতুকে (১৯) স্থায়ী বহিষ্কারের পর এবার এক ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃত এই ছাত্রী জিতুর প্রেমিকা। গতকাল দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘জিতু একজন শিক্ষককে হত্যা করেছে, প্রতিষ্ঠানের সবাই স্বচক্ষে বিষয়টি দেখেছে। শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করায় তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। জানতে পেরেছি তার জবানবন্দিতে সে উল্লেখ করেছে, ওই ছাত্রীর উসকানিতে সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘এই মুহূর্তে মেয়েটি ক্লাসে এলে তার নিরাপত্তার শঙ্কা দেখা দিতে পারে, সঙ্গে অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা তৈরি হতে পারে। বিষয়টি আদালতে গড়াক, যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। তদন্তে যদি ওই ছাত্রীর নাম পাওয়া যায় তাহলে তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে। আর নির্দোষ হলে তার বহিষ্কার আদেশ আমরা তুলে নিব। পরে সে আবার ক্লাস করতে পারবে। ’