কোরবানির পশু আসছে : রাজধানীর হাটগুলোতে কয়েক দিন ধরেই কোরবানির পশু উঠছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে সড়ক ও নৌপথে আনা হচ্ছে পশুগুলো। তবে এখনো বিক্রি হচ্ছে কম। পুরান ঢাকার পোস্তগোলা শ্মশানঘাট অস্থায়ী হাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি : মঞ্জুরুল করিম
দেশে বেশ কয়েক বছর ধরেই পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। কোরবানির পশুর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বেচাকেনাও হয় অনলাইনে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গতবার অনলাইনে বেশ সাড়া ছিল। তবে এবার এখন পর্যন্ত সেই সাড়া তুলনামূলক কম।
বিজ্ঞাপন
ঈদের আর কয়েক দিন বাকি। মানুষ কোরবানির পশুর খোঁজখবর শুরু করে দিয়েছে। একটি অংশ অবশ্য বেশ আগে থেকেই খামারে গিয়ে পশু কিনে সেখানেই রেখে দেয়। ঈদের দু-এক দিন আগে সেই পশু বাড়ি নিয়ে কোরবানি দেয়। আর যারা অনলাইনে কেনে, তারাও আগে আগেই কিনে ফেলে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতবার অনলাইনে দুই হাজার ৭০০ কোটি টাকার পশু বিক্রি হয়। এবার তা কমে যেতে পারে। কিছু কিছু অনলাইন প্রতিষ্ঠান বিশেষ সেবাও দিচ্ছে। ‘বেঙ্গল মিট’, ‘সাদেক এগ্রো’সহ কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এ বছরও পশু কোরবানি করে মাংস বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে।
গত দুই বছর করোনার কারণে অনলাইনের পশুর হাটবাজার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট, সোশ্যাল মিডিয়া ও সরকারি উদ্যোগে ‘ডিজিটাল হাট’ তৈরি হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছরের মতো এবারও ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করা হবে কোরবানির পশু বেচাকেনার অনলাইন প্ল্যাটফরম ‘ডিজিটাল হাট’ (www.digitalhaat.gov.bd)। আজ রবিবার এই হাটের উদ্বোধন করা হবে।
‘ডিজিটাল হাটের’ দায়িত্বরত আইসিটি বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, গতবারের তুলনায় এবার অনলাইনে কিছুটা কম পশু বিক্রি হবে। তবে যারা অনলাইনে কিনে অভ্যস্ত, তারা এবারও ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে কিনবে। ’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ও ‘সাদেক এগ্রো’র মালিক ইমরান হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত দুই বছরের তুলনায় এবার করোনার বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল বলে মানুষ উৎসবমুখী। নিজেরাই হাটে গিয়ে গরু দেখে কিনতে চাচ্ছে, যার ফলে অনলাইনে পশুর চাহিদা অনেক কম। ’ তিনি আরো বলেন, গত বছর তাঁর প্রতিষ্ঠান থেকে এই সময়ে অনলাইনে যত পশু বিক্রি করা হয়েছিল, এবার তার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। ইমরান হোসেন বলেন, ‘ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বেশ কিছু অনলাইন প্ল্যাটফরমে প্রতারণার কারণে মানুষের মধ্যে ই-কমার্সের প্রতি আস্থা কিছুটা কমে গেছে। অনলাইনে পশু কেনা কমে যাওয়ার এটাও একটা কারণ।
বেশ কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফরমের সঙ্গে কথা বলে গতবারের তুলনায় কম বিক্রির চিত্র পাওয়া যায়। তাদের একজন অনলাইন প্ল্যাটফরম ডিজাইন এগ্রো পার্কের মালিক রাজিউল হাসান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গতবার ঈদের এক সপ্তাহ আগে অনলাইনে ৫০টি গরু বিক্রি হয়েছিল। এ বছর এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪টি গরু বিক্রি করতে পেরেছি। ’ তিনি আরো বলেন, ‘যারা অনলাইন থেকে পশু কেনে, তারা মূলত ঈদের ১০ থেকে ১২ দিন আগেই কেনে বা বুকিং দিয়ে রাখে। অনলাইন থেকে কেউ ঈদের পাঁচ-ছয় দিন আগে গরু কেনে না। যারা ঈদের তিন থেকে পাঁচ দিন আগে গরু কেনে তারা মূলত সরাসরি হাটের অপেক্ষায় থাকে। ’
‘এ বছর অনলাইনে একদমই সাড়া পাচ্ছি না’, এভাবেই বললেন নাবিল এগ্রোর সুপারভাইজার হোসেন উদ্দিন অনি। কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে অনলাইনে অন্তত ৫০টি গরু বিক্রি করেছিলাম, এ বছর মাত্র চার-পাঁচটি গরু বিক্রি করেছি। ’
বেঙ্গল মিটের কোরবানি প্রজেক্টের সমন্বয়কারী নূর মোহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনার সময় চলাচলে বিধি-নিষেধ থাকায় গত দুই বছর কোরবানির ঈদে মানুষ গ্রামে যেতে পারেনি, যার ফলে অনলাইনে পশু বিক্রি বেড়েছিল। এবার কোনো বিধি-নিষেধ না থাকায় অনেকেই গ্রামে চলে যাচ্ছে। তাই অনলাইনে বিক্রি কম বলে মনে হচ্ছে। ’ তিনি বলেন, ‘মূলত ঈদের চার-পাঁচ দিন আগে আমরা অনলাইনে গরু বিক্রি বন্ধ করে দিই। কারণ অনলাইন বিক্রিতে অনেক প্রসেসিংয়ের বিষয় থাকে। যার ফলে এত অল্প সময়ের মধ্যে সেই কাজগুলো করা সম্ভব হয় না। ’
গত বছর অনলাইন থেকে গরু কিনে কোরবানি দিয়েছেন রাজধানীর রামপুরা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা সুজা আলী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছর করোনা পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল, তাই হাটে না গিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফরম থেকে গরু কিনেছিলাম। এবার হাটে গিয়েই দেখেশুনে পছন্দ করে গরু কিনে আনার ইচ্ছা আছে। ’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এ বছর এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। গত বছর এক কোটি ১৯ লাখ গবাদি পশু প্রস্তুত ছিল, তার মধ্যে প্রায় ৯১ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। এ বছর কোরবানিতে পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার। সে হিসাবে এ বছর চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩৮৯টি গবাদি পশু বেশি রয়েছে।