বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলোতে গবাদি পশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন খামারি, গৃহস্থ ও চাষিরা। ফসলি জমির পাশাপাশি চারণভূমি প্লাবিত হওয়ায় এবং অনেকের চাষ করা ঘাস বন্যায় নষ্ট হওয়ায় পশুখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। পশুখাদ্যের দামও বেড়ে গেছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
বিজ্ঞাপন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, এ বছর কোরবানির চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত পশু প্রস্তুত আছে। এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯। কোরবানির জন্য কোনো সংকট বা আশঙ্কার কারণ নেই। রাজধানী ঢাকার ফার্মগেটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার এক আন্ত মন্ত্রণালয় সভায় তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যার কারণে গবাদি পশু কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোরবানির সময় যাতে ওই অঞ্চলে দেশের অন্য অঞ্চল থেকে পশু যেতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলো হলো কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ।
বগুড়ার বন্যাকবলিত তিন উপজেলা সারিয়াকান্দি, ধুনট ও সোনাতলায় গোখাদ্যের চরম সংকটে পড়েছেন খামারি ও গৃহস্থরা। কোরবানির হাটও জমেনি।
বগুড়ার অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাসুদুর রহমান জানান, পানি কমতে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহ থেকে কোরবানির হাট জমবে। দাম নিয়ে তেমন কোনো সমস্যায় পড়বেন না খামারি-গৃহস্থরা।
বন্যায় গোচারণ ভূমি এবং আবাদি জমিতে লাগানো নেপিয়ার ঘাস তলিয়ে যাওয়ায় সিরাজগঞ্জ জেলায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার জানান, সরকারি হিসাবে সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলায় খামারি ও কৃষকরা ৯ লাখ গরু, সাড়ে তিন লাখ ছাগল ও দুই লাখ ভেড়া ও মহিষ প্রতিপালন করছেন। কোরবানির জন্য এক লাখ ৭০ হাজার ২৮৬টি গরু, দুই হাজার ৮৯৫টি মহিষ, এত লাখ ৯২ হাজার ৪৬৬টি ছাগল ও ২৫ হাজার ৫২০টি ভেড়া প্রস্তুত হয়েছে, যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলায় বিক্রি হবে।
মৌলভীবাজার জেলায় চলমান বন্যায় সাতটি উপজেলার মধ্যে পাঁচটিতে প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন, রাজনগরের চারটি, বড়লেখার ১০টি, জুড়ির চারটি ও কুলাউড়ার ৯টি ইউনিয়নে প্রাণিসম্পদের এক কোটি ছয় লাখ ৬০ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, গতকাল পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় জেলায় এত হাজার ১২০টির বেশি মুরগি মারা গেছে। আর বন্যাকবলিত গরু ২৫ হাজার ৫৪৪টি, মহিষ দুই হাজার ৬০৩টি, ছাগল ৯ হাজার ৭৪০টি, ভেড়া দুই হাজার ১০৪টি।
শেরপুরে চলতি বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে গরু কিংবা গবাদি পশুর তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে কিছু চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় খাবারের সংকটে ভুগতে হচ্ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হিসাব মতে, চলতি বন্যায় কোনো গবাদি পশুর মৃত্যু ঘটেনি। তবে ৮০ টন দানাদার খাবার, ৫০ টন খড় ও ১৯০ টন ঘাস বিনষ্ট হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অর্ধলক্ষাধিক টাকা।
জামালপুরে গত কয়েক দিনের বন্যায় জেলার সাত উপজেলায় গবাদি পশু, বিশেষ করে খামারি পর্যায়ে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বন্যায় বিশেষ করে কোরবানি ঈদ সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণের সঙ্গে যুক্ত খামারিরা বেশ শঙ্কায় ছিলেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে সাতটি উপজেলায় গরু মোটাতাজাকরণের বাণিজ্যিকভাবে ১৭৬টি খামার এবং প্রান্তিক চাষি পর্যায়ে পাঁচ হাজার ৫২৬টি খামার গড়ে উঠেছে। বিস্তীর্ণ নিচু এলাকা প্লাবিত হলেও কোনো খামারে পানি ওঠেনি। ফলে খামারিদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা। ]