বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার প্রকৃতিগত পার্থক্যের বিষয়টি মাথায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের একেক এলাকা একেক রকম। এটাও মাথায় রাখতে হবে। যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশকে আরো ভালো করে চিনতে হবে, জানতে হবে।
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী গতকাল রবিবার সকালে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের প্রথম সভায় দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সরকার এই বদ্বীপের জনগণকে নিরাপদ করতে এবং জনগণকে উন্নত জীবন দিতে ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ গ্রহণ করেছে। দেশের অর্জিত বিশাল সমুদ্র এলাকা ডেল্টা প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
যেকোনো সেতু নির্মাণে নদীর চরিত্র বিবেচনায় পরিকল্পনা করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী যমুনা সেতুর সঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যমুনা সেতু নির্মাণের সময় যমুনা নদীর প্রশস্ততা বিবেচনায় না এনে নদীর ওপর মাত্র চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ করা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত, যা পদ্মা সেতুতে করা হয়নি। ফলে সেতুটি দীর্ঘ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি পদ্মা সেতু ছোট করতে দিইনি। আমরা নদীর সঙ্গে বাফার জোন রেখে সেতু নির্মাণ করেছি। সুতরাং সেতুটি (দেশের) দীর্ঘতম সেতু হয়ে উঠেছে। ’
তিনি বলেন, ‘দেশের প্রতিটি বর্ষা মৌসুমে যমুনা, পদ্মাসহ নদীর প্রবাহ ও তলদেশের মাটির চরিত্র পরিবর্তন হয়। যেহেতু এখানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের মতো নয়, তাই এই পার্থক্য মাথায় রেখে সঠিকভাবে পরিকল্পনা নিতে হবে। তিনি বলেন, ব-দ্বীপটিকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা উন্নত জীবন দেওয়া আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার। ’
দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সমুদ্রে থাকা বিশাল মৎস্য ও খনিজ সম্পদ কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে এ জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করারও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আজকের যে বিশাল সমুদ্র আমরা পেয়েছি ‘ডেল্টা প্ল্যানে’র সঙ্গে একে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কাজে লাগাতে হবে। এই ক্ষেত্রে আমরা ‘ব্লু ইকোনমি’ ঘোষণা দিয়েছি। অর্থাৎ সমুদ্রসম্পদকে আমাদের দেশের উন্নয়নের কাজে লাগাতে হবে। সে ক্ষেত্রে সীমিত আকারে হলেও কিছু গবেষণাধর্মী কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে এবং বাংলাদেশের কক্সবাজারে তাঁর সরকার একটি মেরিন রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ”
মৎস্য ও খনিজ সম্পদ আহরণসহ সমুদ্র গবেষণা বাড়ানো এবং বঙ্গোপসাগরকে দূষণমুক্ত রাখার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের নদ-নদীগুলোকেও দূষণ থেকে রক্ষা করার নির্দেশ দেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো দায় নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশগুলোর কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটলেও এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের ওপর। ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১০০ সাল পর্যন্ত এই পরিকল্পনার প্রয়োজনে সময় সময় কিছু পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের ডেল্টা প্ল্যান করার লক্ষ্যটা হলো, আমাদের ভবিষ্যৎ করণীয় সুনির্দিষ্ট করা। সেটা আমরা করে ফেলেছি। ২০২০ সালের মধ্যে আমাদের রূপকল্প বাস্তবায়ন করে ২০২১ সালে এসে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করেছি। পরিকল্পনা আরেকটা নিয়েছি, সেটা হলো ‘২১ থেকে ‘৪১ পর্যন্ত আমাদের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা হচ্ছে একটা কাঠামো। এই কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। তারই পাশাপাশি ২১০০ সালের বাংলাদেশের কথা মাথায় রেখেই আমাদের এই ডেল্টা প্ল্যান। ”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বদ্বীপটিকে রক্ষা করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা উন্নত জীবন দেওয়াটাই আমাদের জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন। আসলে পরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নিতে পারলে যেকোনো কঠিন কাজ সমাধান করা যায় এবং সে রকম পদক্ষেপই আমি নিই। ’