<p>আজ চৈত্রসংক্রান্তি। ১৪২৮ বঙ্গাব্দের শেষ দিনও। আগামীকাল বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখ—নতুন বাংলা বর্ষ ১৪২৯।</p> <p>বাংলা বছরের শেষ দিন হওয়ায় চৈত্র মাসের এ দিনকে বলা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। বাংলার বিশেষ লোকজ উৎসব এই চৈত্রসংক্রান্তি। চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক বাঙালির কাছে চৈত্রসংক্রান্তি এক বৃহত্তর লোক-উৎসবে পরিণত হয়েছে।</p> <p>আগামীকাল সকালে ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে ঢাকাসহ সারা দেশে হবে নানা আয়োজন। রমনার বটমূলে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে ছায়ানট। আর মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চৈত্র থেকে বর্ষার শুরু পর্যন্ত সূর্যের যখন তীব্র উত্তাপ থাকে, তখন বৃষ্টিলাভের আশায় কৃষিজীবীসমাজ অতীতে চৈত্রসংক্রান্তিতে নানা আয়োজন করেছিল।</p> <p>চৈত্রসংক্রান্তি একসময় গ্রামীণ জনপদের অন্যতম প্রধান উৎসবে পরিণত হয়। কালের প্রবাহে একসময় নাগরিক জীবনেও স্থান করে নেয় এই উৎসব। এ উপলক্ষে দেশজুড়ে এখনো চলে নানা ধরনের মেলা, উৎসব। হালখাতার জন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সাজানো, লাঠিখেলা, গান, আবৃত্তি, সঙযাত্রা, রায়বেশে নৃত্য, শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠান।</p> <p>এবারও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চৈত্রসংক্রান্তিতে নানা আয়োজন করা হয়েছে। চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আজ সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠান। এ ছাড়া বিকেল ৪টায় চারুকলা অনুষদ চত্বরে মঙ্গল শোভাযাত্রার পোস্টার তৈরির নকশা প্রণয়ন কর্মশালায় তৈরি পোস্টারের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।</p> <p>আজ সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন যৌথভাবে চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। </p> <p>‘জ্বালো জ্ঞানের মশাল, ভাঙো আঁধার’ প্রতিপাদ্যে উদীচী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের আয়োজনে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চৈত্রসংক্রান্তি উৎসব। এতে থাকবে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।</p> <p>রাত ৮টায় রাজু ভাস্কর্য সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান গেটে চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজন করছে উন্মুক্ত লাইব্রেরি। এতে পালাগান পরিবেশন করবেন সুফি আরিফ দেওয়ান ও রোজিনা দেওয়ান। এ ছাড়া থাকবে গাজির পট। পরিবাগের সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হরবোলার চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজনে থাকবে কবিতা, গান আর আলাপন। নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট সকাল ১০টায় ‘চৈত্রসংক্রান্তি আলপনা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে ইনস্টিটিউটের প্রবেশপথে।</p> <p>রমনার বটমূলে দুই বছর পর আবারও বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে আগামীকাল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) চারুকলা বিভাগও মঙ্গল শোভাযাত্রা করবে এবার।</p> <p>ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা গতকাল ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে কালের কণ্ঠকে বলেন, “এবারও সোয়া ৬টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে। সকালটা শুরু হবে যন্ত্র ও কণ্ঠে সকালের সুর তুলে। তারপর একক, সম্মেলক, পাঠ, আবৃত্তি এবং শেষে ছায়ানটের বক্তব্য বা সভাপতির কথন উপস্থাপন করা হবে। সব শেষে থাকবে জাতীয় সংগীত। প্রতিবছর ১১৫ জনের মতো শিল্পী থাকেন। এবার সব মিলিয়ে ৮০ জনের মতো শিল্পী থাকবেন। কিছুটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠান করার জন্য আমরা শিল্পীসংখ্যা কমিয়েছি। সোয়া ৬টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আমাদের অনুষ্ঠানমালা থাকবে। আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য ‘নব আনন্দে জাগো’। বাংলাদেশের নববর্ষের একটা চেহারা আছে, আমরা ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবার জন্য উৎসব করতে পারি শুধু নববর্ষে। গত দুইবার অনলাইনে করেছি, এবার স্বাস্থ্যবিধির জন্য আমাদের কিছু নিয়ম-শৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো পরিবর্তন নেই।”</p> <p>বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চরুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০২০ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়নি। গতবার হয়েছে সীমিত পরিসরে। এবার ‘নির্মল করো, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’ প্রতিপাদ্যে শোভাযাত্রা করা হবে। গতকাল চরুকলায় গিয়ে দেখা গেছে, শোভাযাত্রার জন্য ঘোড়া, মাছ, পাখি ও টেপাপুতুল দিয়ে চারটি বড় প্রতীক তৈরি করা হয়েছে। চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন বলেছেন, এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে টিএসসি থেকে স্মৃতি চিরন্তন (ফুলার রোড সড়কদ্বীপ) পর্যন্ত। শোভাযাত্রা শুরু হবে সকাল সাড়ে ৯টায়। উত্তরার রবীন্দ্র সরণিতে সকাল ৬টা থেকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বর্ষবরণ উদযাপন পরিষদ।</p> <p>প্রতিবারই নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র চত্বরে হাজারো কণ্ঠের গান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।</p>