৪ ওভারে ১ মেডেনসহ ৫ রানে গেইল, সাকিবসহ ৩ উইকেট। ফরচুন বরিশালের ব্যাটিং লাইন গুঁড়িয়ে দিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিশাল জয়ের অন্যতম রূপকার নাহিদুল ইসলাম। ছবি : মীর ফরিদ
শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজুর রহমানের বলেই আউট হলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। এর আগে একই বোলারের বলে দুইবার বেঁচে যাওয়া ফরচুন বরিশালের বাঁহাতি ওপেনার বলক্ষয়ী ইনিংস খেলতে খেলতে দেখলেন দলের হারের পথ খুলে যেতেও। শহীদ আফ্রিদির সঙ্গে যৌথভাবে বিপিএল ইতিহাসের সেরা মিতব্যয়ী বোলিংয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের দুই ম্যাচে টানা দ্বিতীয় জয়ের পথ খুললেন আসলে নাহিদুল ইসলামই। এই অফস্পিনারের করা নিজেদের ইনিংসের প্রথম ওভারটিই উইকেট-মেডেন।
বিজ্ঞাপন
এর তিনটিই তুলে নেওয়া নাহিদুল তাঁর ৪ ওভারে একটি মেডেনসহ কত রান খরচ করেছেন জানেন? মাত্র ৫ রান! গেইলের বিদায়ের পর জিততে আরো ১১৪ রান লাগত বরিশালের। কিন্তু তারা করতে পারেনি এর অর্ধেকও। আর ৫০ রান যোগ করতেই শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে তিন ম্যাচে তাদের দ্বিতীয় হারটি তাই ৬৩ রানের বিশাল ব্যবধানেরই। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল সন্ধ্যার ম্যাচে যেমন নাহিদুল, তেমনি দুপুরের ম্যাচেও নিজ দলের ভাগ্য নির্ধারণে মূল প্রভাবক আরেক স্পিনার নাজমুল ইসলাম। ১৮ রানে ৪ উইকেট নিয়ে এই বাঁহাতি স্পিনারের ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে সিলেট সানরাইজার্স তারকাবহুল ঢাকাকে ১০০ রানেই গুটিয়ে দেয়। এই রান তাড়ায় ৩ ওভার বাকি থাকতে ৭ উইকেটের সহজ জয় সিলেটেরও।
দুপুরের ম্যাচটি লো স্কোরিং হওয়াটাই এবারের বিপিএলে নিয়ম হয়ে গেছে। নিয়ম হয়ে উঠেছিল সন্ধ্যার ম্যাচে রানবন্যা বয়ে যাওয়ারও। সেটি অনেকটাই বইল কুমিল্লার ব্যাটিংয়ে। যদিও ওপেনার ক্যামেরন ডেলপোর্ট (১৯) থেকে শুরু করে অধিনায়ক ইমরুল কায়েস (১৫) ও মমিনুল হকরা (১৭) দুই অঙ্ক ছুঁয়েও ইনিংস বড় করতে পারলেন না। তাতেও সমস্যা হলো না খুব, কারণ এই ম্যাচে দলটি যেন ‘দশে মিলে করি কাজ’ নীতি মেনেই নেমেছিল। তাই বিপিএল অভিষেকেই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় এক প্রান্ত আগলে রাখলেন অনেকক্ষণ। তাই বলে বরিশালের নাজমুলের মতো ৩৬ রান করতে ৪৭ বল খেলে দলকে আরো চাপে ফেললেন না। ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়েও তা না পাওয়া মাহমুদুল ৩৫ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৮ রান করে গেলেন। শেষে গিয়ে আফগান ব্যাটার করিম জানাতও (১৬ বলে ৩ ছক্কা ও ১ চারে অপরাজিত ২৯) ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে সময়ের দাবি মেটালেন বলে কুমিল্লার স্কোরও হলো জেতার মতোই।
অবশ্য রান তাড়ায় বরিশালের এভাবে ভেঙে পড়াও অপ্রত্যাশিতই ছিল। প্রথম ওভারের শেষ বলে সৈকত আলীকে ফিরিয়ে শুরু করা নাহিদুল নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে ধরেন বড় শিকার সাকিবকে (১)। ব্যাটে ঝড় তোলা করিম জানাত বল হাতেও তৌহিদ হৃদয়কে (১৯) ফেরান। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারানো দল তখন তাকিয়ে ছিল গেইলের ব্যাটের দিকেই। নাহিদুল তাঁকেও ফেরানোর পর বাকি কাজটি সারলেন কুমিল্লার অন্য বোলাররা। এ কারণেই শহীদুল ইসলাম, তানভীর ইসলাম ও করিমদের প্রত্যেকের নামের পাশেও দুটি করে উইকেট। তাঁরা কাজ শেষ করার আগে কুমিল্লা শিবিরে জয়ের খোলা হাওয়া ঢোকানো নাহিদুল সিলেটের বিপক্ষে আগের ম্যাচেও হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। কুমিল্লার টানা দ্বিতীয় জয়েও সেই নাহিদুল ঝলকই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ২০ ওভারে ১৫৮/৭ (মাহমুদুল ৪৮, করিম জানাত ২৯*, ক্যামেরন ১৯, মমিনুল ১৭, ইমরুল ১৫, দু প্লেসি ৬; ব্রাভো ৩/৩০, সাকিব ২/২৫, লিনটট ১/১৮, নাঈম ১/৩১)।
ফরচুন বরিশাল : ১৭.৩ ওভারে ৯৫ (নাজমুল ৩৬, তৌহিদ ১৯, নুরুল ১৭; নাহিদুল ৩/৫, তানভীর ২/১৯, শহীদুল ২/২২, করিম জানাত ২/২৬)।
ফল : কুমিল্লা ৬৩ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : নাহিদুল ইসলাম (কুমিল্লা)।