নোয়াখালী পৌরসভার ভোট আজ রবিবার। ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নোয়াখালী জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা গতকাল শনিবার দিনভর এজেন্ট ও নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে বহিরাগতদের আনাগোনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
জানতে চাইলে নোয়াখালী পৌরসভার বর্তমান মেয়র এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী শহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, ‘আমরাও চাই অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সরকারি দল হিসেবে আমরা কোনো সুযোগ-সুবিধা নিইনি। সব প্রার্থী সমানভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কালো টাকা ছড়ানো হচ্ছে এবং বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। ’
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী লুত্ফুল হায়দার লেনিন বলেন, ‘আমি প্রতিটি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছি। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে, সর্বত্র থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ইভিএমে প্রথম ভোট হচ্ছে। এটিতে কোনো ধরনের ম্যানিপুলেট (কারচুপি) করা হয় কি না, তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ’
নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী শহিদুল ইসলাম কিরন বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো আছে। আশা করছি, বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ ভোটকেন্দ্রে এসে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ’
সম্প্রতি নোয়াখালীতে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করায় এবং নির্বাচনগুলো দলীয় প্রভাবমুক্ত হওয়ায়, প্রতিটি ভোট পুরুষের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক নারী ভোটার উপস্থিত ছিলেন। ভোটে বিএনপি অংশ না নিলেও বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির সমর্থক ও নেতারা স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নিয়েছেন। এর ধারাবাহিকতায় আজকের ভোটও তেমনি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে বলে স্থানীয় ভোটাররা মনে করেন।
পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া দুই নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ মোট সাত প্রার্থী নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন। ৯টি কাউন্সিলর পদে সর্বাধিক ৬৩ জন এবং তিনটি নারী কাউন্সিলর পদে ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গতকাল নোয়াখালী জিলা স্কুল মাঠে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ অফিসার ও ফোর্সের ব্রিফিংকালে জেলা পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডের ৩৪টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হবে। সাত থেকে আট স্তরে নিরাপত্তা থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশের একটি স্ট্রাইকিং টিম ও মোবাইল টিম থাকবে। ভোটারদের কেন্দ্রে তাঁদের পরিচয়পত্র নিয়ে আসতে হবে। ভোটকেন্দ্রের আশপাশে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য কাউকে জমায়েত হতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া তিনটি কেন্দ্র নিয়ে একটি স্ট্যান্ডিং ফোর্স ও একটি ডিবি টিম কাজ করবে। এ ছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব, বিজিবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার টিম থাকবে। জেলা শহরে ঢোকার ৯টি পয়েন্টে তল্লাশি দল গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে।
নোয়াখালীর জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা ও পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রবিউল আলম বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়ম হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নেবে। ’
নাটোর, ঝিকরগাছা ও বাঁশখালীতে উৎসবমুখর পরিবেশ
আজ ১৬ জানুয়ারি দেশের পাঁচটি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভার ভোটারদের প্রায় দুই দশকের অপেক্ষার অবসান ঘটছে। এদিকে নাটোর ও বাগাতিপাড়ায় নানা অভিযোগের পরও প্রথমবার ইভিএমে ভোটে পৌরসভাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। এদিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর নির্বাচনোন্মুখ মানুষের প্রশ্নের সমাধান মিলবে নির্বাচনের পরেই।
নাটোর : নাটোর ও বাগাতিপাড়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগের মধ্য দিয়েই পৌরসভা নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুক্রবার দিবাগত রাতে শেষ হয়েছে। নাটোরে মেয়র পদে ছয়জন, কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া বাগাতিপাড়ায় মেয়র পদে চারজন, কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুই পৌরসভায় মোট ভোটার ৭২ হাজার ৭১ জন।
বাঁশখালী : চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভার এবারের নির্বাচন আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াই, নাকি অন্য কিছু—এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নির্বাচনোন্মুখ মানুষের মনে। কেননা প্রতীক বরাদ্দের আগে আওয়ামী লীগের নৌকা পাওয়ার আশায় এখানে লড়াই করেন আওয়ামী লীগের আটজন নেতা। সবাইকে টপকে এস এম তোফাইল বিন হোসাইন নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা কেউ আর প্রার্থী হননি। এবার মেয়র পদে লড়ছেন দুজন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৫ জন। মোট ভোটার ২৬ হাজার ৯৮০ জন।
ঝিকরগাছা : ভোটারদের দীর্ঘ প্রায় ২০ বছরের অপেক্ষার পালা শেষে আজ নির্বাচন। এবার লড়াই হবে মোস্তফা আনোয়ার পাশার নৌকা প্রতীকের সঙ্গে ইমরান হাসান সামাদ নিপুণের কম্পিউটার প্রতীকের। তবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৯টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। নির্বাচনের মাঠ শান্তিপূর্ণ রাখতে র্যাবের তিনটি টিম, বিজিবির দুই প্লাটুন ও আনসার বাহিনীর এক প্লাটুন সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকবেন। মোট ভোটার ২৫ হাজার ৯২৭ জন।