<p>বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।</p> <p>গতকাল শুক্রবার বিকেলে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির ৫০ নেতা উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেয়র জাহাঙ্গীর ‘অমার্জনীয় অপরাধ’ করেছেন। তিনি জাতির জনক ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তা সংবিধান লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। তাঁকে ক্ষমা করা যাবে না। দল থেকে বহিষ্কারের পর সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকতে পারবেন কি না, সে বিষয়টি আইনি পথে ফায়সালা হবে।</p> <p>বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, জাহাঙ্গীর আলমের প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা শুরু করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। তিনি জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কারের পক্ষে বক্তব্য দেন। পরে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি, বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম, আনোয়ার হোসেন, সাহাবুদ্দিন ফরাজীও তাঁদের বক্তব্যে জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন।</p> <p>বৈঠক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁকে পাঠানো কারণ দর্শানোর চিঠি এবং জাহাঙ্গীরের জবাব পড়ে শোনাতে বলেন। চিঠি দুটি পড়ে শোনান আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ। এ সময় সভায় উপস্থিত বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা সমস্বরে জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন।</p> <p>আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমরা দল থেকে জাহাঙ্গীরকে বাদ দিলাম। এখন আইনের পথে অন্য বিষয়গুলোর ফায়সালা হবে।’</p> <p>গত অক্টোবরে জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গোপনে ধারণ করা ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করছেন। এর পরই তাঁর শাস্তির দাবিতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।</p> <p>জাহাঙ্গীর আলম তখন কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অতি উৎসাহী হয়ে তাঁর বক্তব্য সম্পাদনা করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। তিনি গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার।</p> <p>গত ৩ অক্টোবর দলীয় স্বার্থপরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানের চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলমকে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়। চিঠির জবাব দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান জাহাঙ্গীর।</p> <p>আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, জাহাঙ্গীর আলমের জবাব আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য মনে করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।</p> <p><strong>সভাপতিমণ্ডলীতে যোগ হলেন তিন নেতা</strong></p> <p>আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলটির সভাপতিমণ্ডলীর তিনটি শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের দুই সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও কামরুল ইসলামকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে। এবারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে না থাকলেও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে। চার জাতীয় নেতার অন্যতম এইচ এম কামারুজ্জামানের ছেলে লিটন বর্তমানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র।</p> <p>কভিড আক্রান্ত হয়ে গত এক বছরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন ও আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে পদ তিনটি শূন্য হয়।</p> <p><strong>অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে</strong></p> <p>সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে সচেতন হতে এবং অপপ্রচারের জবাব দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।</p> <p>শেখ হাসিনা বলেন, এত উন্নয়নের পরও কিছু মানুষ দেশে-বিদেশে অপপ্রচার করছে। এদের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে, অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে।</p> <p>শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু মানুষ মিটিং করছে কী করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো যায়। জনগণের শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি। আমরা জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি।’</p> <p>আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপিকে কোন আশায় মানুষ ভোট দেবে? পলাতক আসামি যে দল চালায়, জনগণ তাদের কী আশায় ভোট দেবে? এরা দেশের গরিবের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। বিদেশে বসে আরাম-আয়েশে আছে। তাদের এই আয়ের উৎস কী?’</p> <p>প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া এবং আরেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের পুরস্কৃত করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া, এরশাদ ও জিয়াউর রহমান কিভাবে এই খুনিদের মদদ দিয়েছেন, আমার মনে হয় এই কথাটা জাতির জানা উচিত।’</p> <p><strong>ইউপিতে বিদ্রোহীদের মদদদাতারাও পদ হারাবেন</strong></p> <p>সভায় চলমান স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাঁদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ইউপিতে বিদ্রোহী ও তাঁদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিদ্রোহীদের মদদদাতাদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেন। মদদদাতারা মন্ত্রী, এমপি হলেও দল থেকে বাদ দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন শেখ হাসিনা।</p> <p><strong>নতুন দলকে যেন বাধা দেওয়া না হয়</strong></p> <p>শেখ হাসিনা সভার শুরুতে নতুন দলকে কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি কালকেও আইজিপিকে বলেছি, যারা নতুন পার্টি করতে চাচ্ছে তাদের পার্টি করতে দেওয়া উচিত এবং তারা দল করুক, তারা কাজ করুক। কারণ বাংলাদেশে দরকার আছে। যে যত দল করতে চায় করতে পারে।’</p> <p>শেখ হাসিনা বলেন, এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান। কাজেই এখানে যেন কোনো বাধা দেওয়া না হয়।</p> <p> </p>