<p>দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের বয়স এক দশকের বেশি। এই সময়ে বাজারে বিভিন্ন ব্যাংকের এমএফএস সার্ভিস এলেও প্রতিযোগিতার বাজার তৈরি হয়নি। সেই একচেটিয়াত্ব ভাঙতে সক্ষম হয়েছে ডাক বিভাগের নবীন প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’। যার ফলে গ্রাহকরা পাচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের সুবিধা এবং বছরে হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করার সুযোগ।</p> <p>‘নগদ’ সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরের হিসাবে ‘নগদ’-এর গ্রাহকরা হাজার কোটি টাকার ওপরে সাশ্রয় করেছেন। অঙ্কটি হতে পারে এক হাজার সাত কোটি টাকা। ‘নগদ’-এর গ্রাহকরা কম খরচে ক্যাশ আউট, চার্জ ফ্রি সেন্ড মানি ও বিল পে করে সাশ্রয় করেছেন। এ ছাড়া সঞ্চয় থেকে অতিরিক্ত মুনাফা ও কেনাকাটায় সাশ্রয়ের সুবিধাও পেয়েছেন গ্রাহকরা। সম্প্রতি এমন একটি হিসাব দিয়েছে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসটি।</p> <p>‘নগদ’-এর উদ্ভাবন বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াতে অন্যতম সহায়তা করেছে। দেশে প্রথম ই-কেওয়াইসি চালু করা এবং পরে যেকোনো মোবাইল ফোন থেকে *১৬৭# ডায়াল করে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারা গ্রাহককে দিয়েছে বাড়তি স্বস্তি। ফলে গ্রাহকের আর কষ্ট করে ছবি তোলা, জাতীয় পরিচয়পত্র কপি করা এবং যাতায়াত খরচ করতে হচ্ছে না। এই প্রথাগত অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে গ্রাহকের যাতায়াত খরচ, ছবি তোলার মতো পদ্ধতি হিসাব করলেও গত এক বছরে গ্রাহকের সাশ্রয় হয়েছে ৪৩২ কোটি টাকা।</p> <p>সব মিলে ‘নগদ’-এর গ্রাহক যেমন একদিকে বেড়েছে, তেমনি প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক গড়ে লেনদেন ৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।</p> <p>এমএফএস বাজারে প্রথম প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করেছে ‘নগদ’। ‘নগদ’-এ প্রতি হাজারে ক্যাশ আউট চার্জ ৯ টাকা ৯৯ পয়সা, ভ্যাট-ট্যাক্সসহ যা ১১ টাকা ৪৯ পয়সা। ‘নগদ’ আসার আগে থেকেই অন্য এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি হাজারে ক্যাশ আউট চার্জ সাড়ে ১৮ টাকা নিচ্ছিল। যদিও খুচরা দেড় টাকার হিসাব মেলানো কষ্টকর হওয়ায় গ্রাহকরা ২০ টাকায় ক্যাশ আউট করেন। ফলে অতিরিক্ত দেড় টাকাও গ্রাহকের পকেট থেকে বেরিয়ে যায়। তবে অফিশিয়াল রেট ধরলেও প্রতি হাজারে গ্রাহকের সাশ্রয় ৭ টাকার বেশি। অতিরিক্ত দেড় টাকা হিসাব করলে সাড়ে ৮ টাকারও বেশি দাঁড়ায়। তবে ৭ টাকা ধরে হিসাব করলে গত এক বছরে ‘নগদ’-এর গ্রাহকদের অন্তত ২৭৭ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।</p> <p>ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নগদ যদি প্রতি হাজারে ক্যাশ আউট চার্জ ৭-৮ টাকা কম নিতে পারে তাহলে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তবে চার্জ কমাতে গিয়ে আবার সার্ভিসের কোয়ালিটি খারাপ করলে হবে না। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের চার্জ কি হবে সেটি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। যেভাবে মোবাইলের কল চার্জের ক্ষেত্রে করে দিয়েছে।’</p> <p>কম খরচের কারণে ‘নগদ’-এর প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। ঢাকার খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, এখন সব ধরনের লেনদেন ‘নগদ’-এ করা যায়। ইউটিলিটি বিল ফ্রি। সেন্ড মানিতেও টাকা লাগে না। এখন জীবন অনেক সহজ হয়েছে ‘নগদ’-এর কল্যাণে।</p> <p>নিজেদের সেবার বিষয়ে ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, টাকার অঙ্কে লাভের চেয়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো এবং মানুষের জীবনকে সহজ করার চিন্তাই তাদের বেশি। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেছি। চেয়েছি সহজেই মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মধ্যে আনতে। যেটি আমরা করতে সক্ষমও হয়েছি। যার কারণে দেশের মানুষ দেখেছে মাত্র দুই বছরে দেশের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল জগতে ‘নগদ’ কতটা পরিবর্তন এনেছে।’</p> <p>সামনের দিনে আরো উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নত সেবাদানের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যের কথাও জানান তরুণ উদ্যোক্তা তানভীর এ মিশুক।</p> <p>বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাজারে অন্যান্য এমএফএস প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে (পিটুপি) সেন্ড মানিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত খরচ নেয়, সেখানে ‘নগদ’ শুরু থেকেই সেন্ড মানি সম্পূর্ণ ফ্রি। গত এক বছরে জনপ্রিয় এই অপারেটরটি গ্রাহকের অন্তত ৫২ কোটি টাকা বাঁচিয়েছে।</p> <p>গ্রাহকের জীবন সহজ করতে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ইন্টারনেট, পানি বিলসহ সকল প্রকার বিল পেমেন্ট প্রথমবারের মতো চার্জ ফ্রি করছে ‘নগদ’। অন্য এমএফএসগুলোও যেখানে মোট বিলের ওপর দেড় থেকে ২ শতাংশ হারে বা বিল প্রতি ৫০ টাকা করে অতিরিক্ত চার্জ নিচ্ছিল সেই প্রথা ভেঙে দেয় ডাক বিভাগের অপারেটরটি। যেখানে গ্রাহকের ২৮ থেকে ৩০ কোটি টাকার সাশ্রয় হয়েছে।</p> <p>‘নগদ’ বলছে, মার্চেন্ট পেমেন্ট বা কেনাকাটায়ও তারা গ্রাহক সাশ্রয় নিশ্চিত করেছে। চাইলে যেকোনো নগদ গ্রাহক যেকোনো জায়গায় তার ওয়ালেটের মাধ্যমে পণ্য কিনতে পারেন। দেশে এখন ২২ হাজারের ওপর মার্চেন্টে ‘নগদ’-এর মাধ্যমে কেনাকাটা করা যায়। এখানেও ‘নগদ’ ব্যবহার করে গ্রাহকের সাশ্রয় ২০৪ কোটি টাকার বেশি।</p> <p>ব্যাংক বা অন্য যেকোনো এমএফএস মিলিয়ে সঞ্চয়ে সবচেয়ে বেশি মুনাফা দেয় ‘নগদ’। সাড়ে ৬ শতাংশ হারে পেয়ে গ্রাহকরা অন্য যে কারো চেয়ে আড়াই থেকে ৩ শতাংশ বেশি মুনাফা পাচ্ছেন। এই অতিরিক্ত মুনাফা থেকে ‘নগদ’ গ্রাহকরা এক বছরে ১৪ কোটি টাকার বেশি আয় পেয়েছেন। যা তাদের স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছে।</p> <p> </p>