<p>চুক্তি অনুযায়ী আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ, সৌদি আরব ও মরক্কোয় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কভিড-১৯ ভ্যাকসিন পাঠাচ্ছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। সেরামের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদর পুনাওয়ালা গতকাল মঙ্গলবার বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান।</p> <p>এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি বলেছে, ভারতে স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োগ শুরুর ১৫ দিনের মধ্যেই রপ্তানি শুরু হবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভ্যাকসিন প্রয়োগের ১৫ দিনের মধ্যে আমরা আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার কিছু প্রতিবেশী দেশে তা রপ্তানি করব। এগুলোর কিছু অংশ উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। বাকিটা দেওয়া হবে ভারত সরকারের কেনা দামেই।’</p> <p>অন্যদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও কোভ্যাক্সিন রপ্তানিতে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবর নাকচ করেছে ভারত। গতকাল নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার কোনো কভিড-১৯ ভ্যাকসিন রপ্তানি নিষিদ্ধ করেনি এবং এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত থাকা উচিত।’</p> <p>অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যখন আমি বলছি—কেন্দ্রীয় সরকার, তখন এখানে এ সম্পর্কিত তিনটি মন্ত্রণালয় আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য উত্সাহকরণ বিভাগ এবং বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর। কোনো কল্পিত প্রেক্ষাপটে তারাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত (নিষেধাজ্ঞা) নিতে পারে, কিন্তু এখানে তাদের কেউই এমন (নিষেধাজ্ঞা) সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ কারণে আমাদের গণমাধ্যমের বন্ধুদের প্রতি অনুরোধ, এ ধরনের অপপ্রচার হলে তা ঠেকানোর চেষ্টা করা উচিত।’</p> <p>ভারতের ওষুধ প্রশাসন গত রবিবার সেরাম ইনস্টিটিউট উত্পাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন দেশে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের অনুমতি দেয়।</p> <p>ভারতের স্বাস্থ্যসচিব গতকাল সেরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেকের যৌথ বিবৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ওই বিবৃতিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ভ্যাকসিন বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য উপকরণ। তারা আরো বলেছে, বিশ্ব যাতে তাদের কভিড-১৯ ভ্যাকসিন পায় সে বিষয়ে তারা তাদের যৌথ অঙ্গীকারের কথা জানাচ্ছে।</p> <p>এ বিষয়টি উল্লেখ করে ভারতের স্বাস্থ্যসচিব বলেন, ‘এর অর্থ হলো কেন্দ্রীয় সরকার বা ভ্যাকসিন উত্পাদনকারীদের কেউই ভ্যাকসিন রপ্তানিতে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলছে না।’</p> <p><strong>সেরাম সিইওর ইউটার্ন </strong>: এক দিনের ব্যবধানেই নিজের বক্তব্য পাল্টালেন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা উত্পাদনকারী ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আধার পুনাওয়ালা। ভ্যাকসিন বা টিকা রপ্তানি ‘নিষেধাজ্ঞার’ বিতর্ক সৃষ্টিকারী পুনাওয়ালা গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, ভ্যাকসিন রপ্তানির অনুমতি আছে সব দেশেই।</p> <p>সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আধার পুনাওয়ালা বলেন, ‘জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ায় আমি দু’টি বিষয় ব্যাখ্যা দিতে চাই। ভ্যাকসিন রপ্তানির অনুমতি সব দেশেই আছে। আর ভারত বায়োটেক নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়েও যৌথ গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।’</p> <p>ওই টুইট বার্তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেকের ভেরিফাইড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আধার পুনাওয়ালা এবং ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষ্ণ ইলার পক্ষে একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল ওই বিবৃতি দেওয়া হলেও তাতে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ‘৫ জানুয়ারি, ২০২০’( সাল ভুল)। সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আধার পুনাওয়ালা গত রবিবার বলেছিলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট আগে ভারতের চাহিদা পূরণের পর বিদেশে রপ্তানি করবে। আর তাদের ভ্যাকসিন (কোভ্যাকসিন) পানির মতোই নিরাপদ।</p> <p>ভারতের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা হলে বাংলাদেশের ক্রয়াদেশ অনুযায়ী ভ্যাকসিন পেতে দেরি হওয়ার আশঙ্কায় এ দেশে উদ্বেগ, শঙ্কা দেখা দেয়। তবে সেদিনই ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে বাংলাদেশ ‘যথাসময়েই’ ভ্যাকসিন পাবে।</p> <p>সেরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেক গতকাল তাদের যৌথ বিবৃতিতে ভারতসহ সারা বিশ্বের জন্য ভ্যাকসিন উত্পাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করার সম্মিলিত অঙ্গীকার করেছে। জীবন ও জীবিকা রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে তারা উল্লেখ করেছে।</p> <p>যৌথ বিবৃতিতে ওই ভ্যাকসিন উত্পাদনকারী দুই প্রতিষ্ঠান জানায়, ‘ভ্যাকসিন বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য পণ্য। ভ্যাকসিন জীবন রক্ষা এবং দ্রুত সময়ে অর্থনৈতিক স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা ত্বরান্বিত করার মাধ্যম। এখন দু’টি কভিড-১৯ ভ্যাকসিন ভারতে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের ছাড়পত্র পেয়েছে এবং জনগোষ্ঠীর মধ্যে যাদের প্রয়োজন তাদের জন্য উচ্চ মানসম্পন্ন, নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন উত্পাদন, সরবরাহ ও বিতরণ করার দিকেই তারা দৃষ্টি দিচ্ছে।’</p> <p>বিবৃতিতে সেরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেক আরো জানায়, ‘আমরা উভয় কম্পানি এই কাজে পুরোপুরি নিয়োহিত আছে। আমরা মনে করি, রাষ্ট্র (ভারত) ও সর্বোপরি বিশ্বে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। আমাদের কম্পানিগুলোর প্রত্যেকেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কভিড-১৯ ভ্যাকসিন উত্পাদন অব্যাহত রাখবে। জনগণ ও রাষ্ট্রগুলোর জন্য ভ্যাকসিনের গুরুত্ব বিষয়ে আমরা পুরোপুরি অবগত। আমরা আমাদের কভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে বিশ্বকে দেওয়ার ব্যাপারে যৌথ অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।’</p> <p><strong>টাকা পাঠাল বাংলাদেশ</strong> : গত সোমবার বাংলাদেশে বিষয়টি নিয়ে হুলুস্থুলের পর ওইদিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশে অক্সফোর্ডের টিকার জরুরি আমদানির অনুমতি দেয় সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সেরামকে ৫শ ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে।</p> <p>স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খোরশেদ আলম কালের কণ্ঠকে গতকাল বিকেলে বলেন, ‘আমরা আজ টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। এই টাকা শুধু সেরামের জন্য টিকা বাবদ। বেক্সিমকোকে আমরা এখন কোনো টাকা দিচ্ছি না। তারা টাকা পাবে দেশে টিকা এসে পৌঁছার পর। আর সেরামকে আরেকধাপ টাকা পাঠানো হবে শিপমেন্টের সময়।’</p> <p><strong>ভারতীয় হাইকমিশনারের প্রতিক্রিয়া</strong>: এদিকে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী গতকাল সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইওর টুইট বার্তা শেয়ার করে নিজের টুইটারে লিখেছেন, ‘কভিড ভ্যাকসিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইওর বক্তব্য আমরা দেখেছি। বাংলাদেশে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা সব সময় আমাদের প্রতিবেশিদের অগ্রাধিকার দেই। এবারও তাই হবে। কোনো ব্যতিক্রম হবে না।’</p> <p> </p> <p> </p>