<p>যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা কম্পানির উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের তিন কোটি ডোজ টিকা কিনতে চুক্তি করেছে সরকার। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে এনে এই টিকা সরকারকে সরবরাহ করবে দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। দুই ডোজ করে এই টিকা দেড় কোটি মানুষকে দেওয়া হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অক্সফোর্ডের এই টিকা অনুমোদন দেওয়ার পরপরই বাংলাদেশে আসবে।</p> <p>গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ত্রিপক্ষীয় এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বেক্সিমকো ফার্মা ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে এই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।</p> <p>সরকারিভাবে আনা এ টিকার ডোজপ্রতি দাম পড়বে পাঁচ-ছয় মার্কিন ডলার।</p> <p>এর বাইরে বেক্সিমকো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি বাজারেও টিকা ছাড়বে। তবে বাজারে টিকার দাম কী হবে সেটা এখনো ঠিক হয়নি।</p> <p>করোনাভাইরাসের টিকার জন্য আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভেক্স গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এবার প্রথম কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টিকা কেনার জন্য চুক্তি করল সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন জাতীয় টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে অক্সফোর্ডের টিকা পৌঁছে যাবে মানুষের কাছে।</p> <p>তবে প্রথম সুযোগ পাবেন চিকিৎসাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিকরা, যাঁরা করোনা মোকাবেলায় সামনে থেকে কাজ করছেন।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2020/11.November/06-11-2020/Kalerkantho_20-11-06-26.jpg" style="float:left; height:308px; margin:8px; width:180px" />চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অক্সফোর্ডের টিকা এখন পরীক্ষামূলক প্রয়োগের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ বছরই সেটা পাওয়া যেতে পারে। এ বছর না পাওয়া গেলেও আসছে জানুয়ারিতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।</p> <p>সম্ভাব্য এ টিকার পরীক্ষা ও উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। এই টিকা উৎপাদন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরবরাহের জন্য অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে অংশীদারি চুক্তি রয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউটের। আর ভারত থেকে টিকা এনে বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য গত আগস্টে সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।</p> <p>অক্সফোর্ডের টিকা কেনার জন্য সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মোস্তফা কামাল, সেরাম ইনস্টিটিউটের পক্ষে সন্দীপ মুলে ও বেক্সিমকোর পক্ষে রাব্বুর রেজা।</p> <p>চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন, ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূরসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার টিকা আমদানির বিষয়ে দেশের মানুষ অনেক দিন ধরেই অপেক্ষা করছে। এই চুক্তির ফলে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটছে। এ ক্ষেত্রে দেশের বেক্সিমকো ফার্মা বড় ভূমিকা রেখেছে। বেক্সিমকো ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সরকারের সেতুবন্ধ তৈরি করে দিয়েছে। সেরাম ইনস্টিটিউট বেক্সিমকো ফার্মার কাছে টিকা দিলে তারা সরকারের কাছে সেটা হস্তান্তর করবে। অপেক্ষা শুধু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন। ওই অনুমোদন পেলেই আর দেরি হবে না টিকা আনতে।</p> <p>মন্ত্রী জানান, প্রথম লটে সরকার তিন কোটি ডোজ টিকা আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই টিকা দুই ডোজ করে দেড় কোটি মানুষকে দেওয়া হবে। প্রতি মাসে দেওয়া হবে ৫০ লাখ মানুষকে। একজনকে প্রথম ডোজ দেওয়ার ২৮ দিন পর দেওয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ।</p> <p>সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘শুধু অক্সফোর্ডই নয়, অন্য টিকার দিকেও নজর রয়েছে। এ ছাড়া কোভেক্সের মাধ্যমে আমরা টিকা পাব।’</p> <p>বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আমরা প্রথমে মনে করছিলাম করোনা দুই-তিন মাসে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন দেখছি এটা আদৌ কবে শেষ হবে সেটার কোনো ঠিক নেই। এখন আমাদের ভ্যাকসিনেই (টিকা) বেশি ভরসা। আমাদের দেশে সবার আগে ভ্যাকসিন চাই, আবার নিরাপদ ভ্যাকসিন চাই। সব কিছু ভেবে আমরা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জন্য সেরামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা মনে করি এখন পর্যন্ত যে কয়টা টিকা ভালো বলে আন্দাজ করা হচ্ছে তার মধ্যে বেশি কার্যকর হবে এই টিকা।’</p> <p>বাংলাদেশে ভারতের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের ভালো বন্ধু। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অংশীদারির মাধ্যমে টিকা সংগ্রহের চুক্তি করছে। এ জন্য আমি গর্বিত।’</p>