<p>ধর্ষণের ঘটনাকে সামাজিক অপরাধ হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারকরা এই অপরাধ দমনে রাষ্ট্রের পাশাপাশি মানুষের বিবেক, ন্যায়, নীতিবোধ জাগ্রত করার পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষার ওপর জোর দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, এ ছাড়া আইন করে এই অপরাধ দমন সম্ভব নয়। সরকারের নীতিনির্ধারকরা দাবি করছেন, ধর্ষক ও নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে সরকার তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিচ্ছে না।</p> <p>সম্প্রতি একের পর এক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের লোমহর্ষক ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ-আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠার বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা আন্দোলনের দিকে সজাগ-সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন।</p> <p>আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নারীর প্রতি অবমাননা এবং সহিংসতার বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে গত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘নোয়াখালীর ঘটনাসহ প্রতিটি ঘটনায় অভিযুক্তদের তাত্ক্ষণিক গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। এসব ঘৃণ্য অপরাধীর কোনো দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। দলীয় পরিচয় তাদের রক্ষার ঢাল হতে পারে না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আন্দোলনের আগেই সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। এসব অপরাধ ও ঘৃণ্য অপকর্মের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থান সব সময়ই স্পষ্ট ও কঠোর। এসব ঘৃণ্য অপরাধীর রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দুর্নীতি, অনিয়ম ও যেকোনো অপরাধের মূলোৎপাটনে সরকারের পিছুটান নেই। প্রতিটি ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে; বিচার হচ্ছে, কোনো অপরাধীই রক্ষা পাবে না।’</p> <p>আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ধর্ষণ একটি অপরাধ। এটি সামাজিক ব্যাধি। আর ধর্ষকদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তারা মানসিকভাবে বিকৃত। তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ে চিহ্নিত করা ঠিক হবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই অপরাধীদের ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কাউকে ক্ষমা করা হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, দল যেহেতু ক্ষমতায় তাই এখন সবাই আওয়ামী লীগ করে। অপরাধ করে পার পাওয়ার জন্য এই পরিচয়ে পরিচিত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের স্পষ্ট অবস্থান—কোনো অপরাধীর ঠাঁই আওয়ামী লীগে নেই।</p> <p>আবদুর রহমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই ধরনের আন্দোলন করার নৈতিক অধিকার তাদের নেই। কারণ তারা মহামারি করোনাভাইরাসের মোকাবেলায় এগিয়ে আসেনি। সরকার ও আওয়ামী লীগ এককভাবে এই মহামারির সময় মানুষের পাশে ছিল। তা ছাড়া ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাবছেন। এ বিষয়ে তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন। এর পরও কেন আন্দোলন?’</p> <p>আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অপরাধীদের বিরুদ্ধে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।’ তিনিও বলেন, ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি, নৈতিক অবক্ষয়। এ জন্য সব কিছুর আগে পরিবার থেকে সামাজিক নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে। তা না হলে শুধু আইন পরিবর্তন করে এ অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব নয়।’ তিনি জানান, একটি জাতীয় দৈনিকে পাঁচ শতাধিক ধর্ষণের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযুক্তদের মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয়জনের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে বলা হচ্ছে। এখানে মাদরাসার শিক্ষক এমনকি গির্জার ফাদারও রয়েছেন। তাই কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় এই অপরাধীদের দেখা ঠিক হবে না। অপরাধী অপরাধীই। যারা অপরাধী তাদের তাত্ক্ষণিক আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। বিচার হচ্ছে।</p> <p>ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, যারা ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তাদের লক্ষ্য অপরাধী নয়, সরকার। এটা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন। তাদের উদ্দেশ্য দেশকে অস্থিতিশীল ও সরকারকে বিব্রত করা। আর কারা এ আন্দোলন করছে, যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের ২০০১-০৫ মেয়াদের সরকারের আমলে ১০ হাজার নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ার অপরাধে তারা সারা দেশে নারী নির্যাতন করলেও এর বিচার করেনি তৎকালীন সরকার। তবে সামাজিক এই অপরাধ দমনে আগামী মন্ত্রিসভার বৈঠকেই সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে আইন সংশোধন করা হবে।</p>