<p>২০০৮ সালের কথা। দুই জোড়া সাদা বক বাসা বাঁধে আবদুল মান্নান হাওলাদারের বাড়ির মেহগনিগাছে। এক যুগের ব্যবধানে হলুদ ঠোঁট আর কালো পায়ের সাদা সেই দুই জোড়া বকের বংশ বিস্তার হতে হতে এখন সহস্রাধিক। একপর্যায়ে ওই বাড়িটিই পরিচিত হয়ে ওঠে বকবাড়ি নামে। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন সাউথখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ তাফালবাড়ী গ্রামে এই বকবাড়ি।</p> <p>বিষয়টি কিছুটা রহস্যঘেরা। যে গ্রামে বকের নিবাস, সেখান থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব তিন কিলোমিটার। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, এত কাছে বিশাল সুন্দরবন থাকতে বকেরা কেন এখানে নিবাস গড়েছে?</p> <p>বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ আজিজের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে সাদা বক দেখা যায়। এরা একেকটি এলাকায় কলোনি বানিয়ে বসবাস করতে পছন্দ করে। কিন্তু সারা বছর এরা এক এলাকায় থাকে না। বছরের কিছু সময় অন্য এলাকায় চলে যায়। বর্ষা শুরুর আগে প্রজননের সময় হলে আবার ফিরে আসে আগের এলাকায়। নতুন বাসা বাঁধে। পুরনো বাসায়ও ডিম পাড়ে। বাচ্চা বড় হলে চলে যায়। দক্ষিণাঞ্চলে ঝড়-ঝঞ্ঝা বেশি হয়। ফলে সুন্দরবন কাছে হলেও নিরাপদ এলাকাই বেছে নেয় এরা।’</p> <p>সম্প্রতি কথা হয় বকবাড়ির মালিক আবদুল মান্নান হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিডরের পরের বছর ২০০৮ সালের মে মাসে দুই জোড়া সাদা বক আমার বাড়ির একটি হেমগনিগাছে এসে বাসা বাঁধে। এরপর প্রতিবছর বাড়তে থাকে বকের সংখ্যা। বাড়তে বাড়তে এখন এক হাজারের বেশি হয়েছে। আমার বাড়ির ৪০ থেকে ৫০টি মেহগনিসহ বিভিন্ন গাছে কয়েক শ বাসা বানিয়ে তারা বসবাস করছে।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিবছর বৈশাখ মাসে আসা শুরু করে এসব বক। বাচ্চা ফুটিয়ে বড় করতে থাকে আশ্বিন-কার্তিক মাস পর্যন্ত। বাকি পাঁচ-ছয় মাস কোথায় চলে যায়, জানি না। এ বছর দুই থেকে আড়াই শ বাচ্চা ফুটিয়েছে। বাচ্চাগুলো এখন বড় হয়ে গেছে। এক ডাল থেকে অন্য ডালে উড়ে যেতে পারে। প্রতিদিন ভোরে বকগুলো খাবারের খোঁজে বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। সুন্দরবনের যেসব চরে জেলেরা চরগড়া জাল পাতে, সেখানে ছোট ছোট মাছ শিকারেও যায়। বিকেল ৪টা-৫টার দিকে দল বেঁধে এই বকেরা আবার ফিরে আসে বাসায়।’ </p> <p>অনেকটা আপ্লুত আবদুল মান্নান বলেন, ‘বকগুলো আমার বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ায় আমি খুব খুশি। বকবাড়ি নামে আমার বাড়িকে এখন অনেকে চেনেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ দেখতে আসেন।’ </p> <p>অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, ‘প্রকৃতির এই বিষয়গুলো পর্যটনের অন্যতম অংশ। যেসব এলাকায় ব্যাপক পাখির বসবাস, সেসব এলাকাকে কেন্দ্র করে পর্যটন স্থান গড়ে উঠতে পারে। এগুলো সংরক্ষণে সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিলে রাষ্ট্রের জন্য লাভ।’ </p> <p>বন অধিদপ্তরের সুফল প্রকল্পের উপপরিচালক মদিনুল আহসান বলেন, ‘যেসব এলাকা নিরাপদ এবং খাবারের সহজ উৎস রয়েছে, সেসব এলাকায় বক ও অন্য পাখিরা কলোনি গড়ে তোলে। সুন্দরবন কাছে হলেও বকেরা নিরাপদ স্থান হিসেবে লোকালয়ের এসব স্থান বেছে নেয়। এই বকদের সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’</p> <p>শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ‘এই বকগুলো যেন নিরাপদে থাকতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’</p> <p> </p> <p> </p>