<p>সব সরকারি অফিস খুললেও কাজের কাজ হচ্ছে না। বিশেষ করে বিভিন্ন দপ্তরের আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার কাজ ধীরগতিতে চলছে। এ কারণে চলতি অর্থবছর শেষ হয়ে যাওয়ার পথে থাকলেও অনেক ফাইল আটকে আছে। প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা।</p> <p>সচিবালয়সহ সরকারি-বেসরকারি একাধিক অফিস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে অফিসে না যাওয়ার ভান ধরছেন অনেকে। এ কারণে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে কাজে গতি নেই, দেখা যাচ্ছে সমন্বয়হীনতা।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি আটকে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি এবং যাঁরা উপস্থিত থাকেন তাঁদের মধ্যে সমন্বয় না থাকার কারণে এমন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।</p> <p>উল্লেখ্য, পুরনো অর্থবছরের শেষ মাস এবং নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশের কারণে জুন মাস গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের গুরুত্বকে সামনে রেখে ঝুঁকির মধ্যে অফিস খুলেছে সরকার। এই সময়ে বিশেষ প্রয়োজনের কাজগুলোও যদি না হয় তাহলে অফিস খুলে কী লাভ হলো—এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের।</p> <p>করোনার কারণে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর অফিসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক না হলেও সীমিত সংখ্যক লোকবল দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে। কিন্তু বাস্তবে এর ফল মিলছে না। ঢিমেতালে চলছে ফাইল চালাচালি, এতে শ্লথ হয়ে পড়ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।</p> <p>গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা বেশির ভাগ কর্মকর্তা অফিস না করায় জমে থাকা বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন, আমদানি-রপ্তানি, বিভিন্ন প্রকল্প ও বাণিজ্যিক নথির কাজ ঠিকমতো এগোচ্ছে না। সচিবালয়সহ বেশির ভাগ সরকারি অফিসের এমন চিত্র বলে জানা গেছে। কোনো কোনো দপ্তরে প্রধান কর্মকর্তা থাকলে মধ্যম সারির কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় না। যেখানে মধ্যম সারির কর্মকর্তা আছেন সেখানে শীর্ষ কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় না। এতে করোনাকালেও দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিকে গতিশীল রাখতে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে যে চেষ্টার কথা বলা হচ্ছে তার বাস্তব চিত্র নেই অফিসগুলোতে।</p> <p>বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে অনেকে নানা ধরনের কানাঘুষা করছেন। কেউ কেউ সন্দেহ করেন, মাঠ প্রশাসনের বাইরে অন্যান্য দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশির ভাগই অফিস করছেন না বললেই চলে। তাহলে তাঁরা এত বেশি আক্রান্ত হবেন কেন? কারো কারো সন্দেহ যে করোনায় আক্রান্তের ক্ষেত্রে সরকার ঘোষিত আর্থিক সুবিধা লাভ এবং অফিস ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নিতে কেউ কেউ মিথ্যা করোনা সনদ সংগ্রহ করছেন।</p> <p>এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে কাজ সারার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে ই-ফাইলিং কাজে তেমন গতি নেই।</p> <p>মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক সময়ে অফিস চলাকালীন অফিসে থেকেই ই-ফাইলিংয়ে কাজ করতে নানা ঝক্কি পোহাতে হয়। এখন করোনাকালে বাসায় থেকে ই-ফাইলিংয়ের কাজ করতে যে ধরনের সাপোর্ট থাকা দরকার তা অনেক কর্মকর্তার বাসায় নেই। আবার অনেক কর্মকর্তা এখনো ই-ফাইলিংয়ের কাজে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেননি। যেসব কর্মকর্তা ই-ফাইলিংয়ের কাজ করেন তাঁদের অনেকে অফিসে থাকলে একে অন্যের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু বাসায় থেকে তাঁরা সেই সহযোগিতা পান না। ফলে ই-ফাইলিংয়ের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত গতি নেই।</p> <p>এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সময় বেঁধে বা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা দিয়ে সরকারি অফিসে বাধ্যবাধকতা দেওয়া হচ্ছে না। এটা বিশেষ একটা সময়। এখন জরুরি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রয়োজন ততজন নিয়েই কাজ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনের কোনো কাজ ফেলে রাখা যাবে না।’</p>