মোসলেহ উদ্দিন
অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেসরকারি ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে গতকাল বৃহস্পতিবার তলব করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্ট্যান্ডিং কমিটি তাঁকে প্রায় এক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সকাল ১০টায় তাঁকে ডাকা হয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ওই কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামানকে ফোন করা হলে তিনি কমিটির সদস্যসচিবের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে কমিটির আরেক সদস্য ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রবিউল হাসানকে ফোন করা হলে তিনি একটি বৈঠকে থাকার কথা জানিয়ে বলেন, এ নিয়ে পরে কথা বলবেন।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এনসিসি ব্যাংকের এমডিকে সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডাকা হয় বলে শুনেছি।’ তাঁর বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। কমিটির লোকজন এটা বলতে পারবেন।’
এনসিসি ব্যাংকের এমডির বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির সুনির্দিষ্ট তথ্য উদ্ঘাটন করে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। গত এপ্রিলের দিকে বিএফআইইউ সংরক্ষিত ক্যাশ ট্রানজেকশন রিপোর্ট (এসটিআর) পর্যালোচনায় দেখতে পায়, এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী লুনা শারমিনের নামে যমুনা ব্যাংকে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবে অস্বাভাবিক অঙ্কের নগদ লেনদেন হয়েছে। সে অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে অনুসন্ধান চালিয়ে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারবাজারে মোসলেহ উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১৪টি ব্যাংক হিসাব, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছয়টি মেয়াদি আমানত, সঞ্চয়পত্রে সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ এবং শেয়ারবাজারে চারটি বিও হিসাব পরিচালিত হওয়ার তথ্য পায় বিএফআইইউ। এতে মোট ৩৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা (মার্কিন ডলার বাদে) অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়।
বিএফআইইউয়ের পর্যালোচনায় বলা হয়, মোসলেহ উদ্দিন কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় নৈতিক স্খলন, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ২(শ)(১) এবং ২(শ)(১৯)-এ বর্ণিত অপরাধ। অর্থাৎ তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিএফআইইউ বলছে, কোনো ব্যাংকের এমডির বিষয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিললে ব্যাংক কম্পানি আইনের ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী এনসিসি ব্যাংকের এমডির বিষয়ে বিএফআইইউয়ের পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরণ করা হয়। এ ছাড়া মানি লন্ডারিং ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুদক ও এনবিআরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
বিএফআইইউয়ের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মোসলেহ উদ্দিনের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তাঁর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়। তিনি যে ব্যাখ্যা দেন, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে অপসারণ করা নিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে তিন মাস আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করা হয়।
মন্তব্য