<p>আওয়ামী লীগের মধ্যে ‘অনুপ্রবেশ’ নিয়ে সাধারণ মানুষ যা বলছে তার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা বলতে পারি। আওয়ামী লীগ যখন জিতল তখন অনেক দলে অনেকেই যোগ দিতে লাগল। একটি রাজনৈতিক দলে যোগ তো দিতেই পারে, আপত্তির কিছু নেই। আদর্শগত মিল যাদের সঙ্গে আছে তারা তো আসতেই পারে। যারা ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করে না; যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে, যুদ্ধাপরাধের বিচার চায়, তাদের জন্য তো আওয়ামী লীগের দরজা খোলা থাকতে পারে। কিন্তু যারা এসবে বিশ্বাস করে না, আওয়ামীবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত, মৌলবাদী, তাদের ঠেকানো উচিত ছিল। সতর্ক থাকা উচিত ছিল। কারণ তারা আদর্শের টানে নয়, সুবিধা ভোগের জন্য ক্ষমতাসীন দলে আসতে চায়। তাদের আচরণে দলের মধ্যে অনভিপ্রেত অবস্থার সৃষ্টি হয়। তারা কিন্তু কোনো কারণে দলে বিপর্যয় হলে দলের পাশে থাকবে না। এ বিষয়ে অনেকেই সতর্ক করেছেন; কিন্তু নেতারা কর্ণপাত করেননি।</p> <p>প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও অনেকবার সতর্ক করেছেন দলকে। কিন্তু তিনি তো সব কিছু নিজে খতিয়ে দেখতে পারবেন না। এ জন্য দলের সাংগঠনিক সম্পাদকরা আছেন, জেলা-উপজেলা কমিটির নেতারা আছেন। তাঁদের খতিয়ে দেখার কথা। কিন্তু আমরা দেখলাম, অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, চিহ্নিত জামায়াত-বিএনপির নেতারাও আওয়ামী লীগে যোগদান করছেন। তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে। এখন তাঁরা অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে আছেন। নানা অপকর্ম করছেন। তার মানে দলের নেতারা সঠিকভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।</p> <p>এখন ঢালাওভাবে ‘অনুপ্রবেশকারী’ কথাটা বলা ঠিক না। কারণ তাঁরা তো দলের মধ্যেই আছেন বা ছিলেন। এতে একটি অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হবে। আদর্শগতভাবে মিল রয়েছে—এমন রাজনৈতিক দল থেকেও তো নেতারা এসেছেন। এখন উচিত হবে দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে বহিষ্কার করলেই হবে না, তাদের অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করতে হবে। </p> <p>শেখ হাসিনা একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন এবং এই শুদ্ধি অভিযান দলের ভেতর থেকেই শুরু করেছেন। তাঁর প্রজ্ঞার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আমরা বিশ্বাস করি, তিনি দলের ভেতরে একটি বার্তা দিতে সক্ষম হবেন যে ভবিষ্যতে এসব চলবে না।</p> <p>মোট কথা দুর্বৃত্তায়ন ঠেকাতে হবে। সেটা আওয়ামী লীগ নেতা হোক আর অনুপ্রবেশকারী হোক, দলের ভেতরে হোক আর দলের বাইরে হোক।</p> <p>অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন : ইতিহাসবিদ</p> <p> </p>