<p>পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনকে এই আশ্বাস দেন তিনি।</p> <p>গতকাল সোমবার সকালে বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহ উপলক্ষে আগারগাঁওয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করে বিএসইসি। অনুষ্ঠান চলাকালে ফোন করে অর্থমন্ত্রী ড. এম খায়রুল হোসেনকে বলেন, ‘বাজার উন্নয়নে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে। বিনিয়োগকারীর আস্থা ফেরাতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরিকল্পনা করতে হবে।’</p> <p>পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওই অনুষ্ঠানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), মার্চেন্ট ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের সব স্টেকহোল্ডার উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>খায়রুল হোসেন বলেন, “আমি যখন এই অনুষ্ঠানে বসে ছিলাম তখন অর্থমন্ত্রী আমাকে ফোন করেছেন। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাজার উন্নয়নে যা যা করতে হয় আমরা সব ধরনের চেষ্টা করব। আপনি একটি ফাংশনের মধ্যে আছেন, সবাইকে (স্টেকহোল্ডার) জানিয়ে দেন, বাজার ভালো করতে আমরা সব কিছু করব।’ বাজারে ইনডেক্স (সূচক) শুধু পজিটিভ হলেই হবে না, বাজারের টার্নওভার (লেনদেন) যেন অনেক বড় হয়, সবার ভেতরে যেন আস্থার সৃষ্টি হয়, সেই পরিকল্পনা করার কথাও বলেছেন তিনি।”</p> <p>পুঁজিবাজারে সরকারি কম্পানি আনার বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন বলেন, ‘আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে লাভজনক সরকারি কম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। এ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় কাজ করছে। পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি আইসিবিকে দেওয়া ফান্ডে স্বচ্ছতা বাড়ানো, মোবাইল ফোন অপারেটর রবিকে পুঁজিবাজারে আনা, ইক্যুইটিনির্ভরতা কমাতে পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং আগামী বছর নতুন পণ্যের লেনদেন চালু করা হবে।’</p> <p>বিশ্বের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনের (আইওএসসিও) সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৃতীয়বারের মতো এই কর্মসূচি পালন করছে বিএসইসি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ছয় মহাদেশের ৮৪টি দেশ ও পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা আটটি বৈশ্বিক সংগঠন একযোগে এই কর্মসূচি পালন করছে। এবারের এই বিনিয়োগ সপ্তাহে বিনিয়োগকারীর আর্থিক সাক্ষরতা ও সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি জেনেশুনে বা বিচার-বিশ্লেষণ করে মৌলিক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির ক্রমাগত বিকাশে প্রাযুক্তিক নিরাপত্তা বিষয়ের ওপরও জোর দিচ্ছে সংস্থাটি।</p> <p>ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ফান্ডে স্বচ্ছতা বাড়ানো প্রসঙ্গে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আইসিবিকে বন্ড ছেড়ে দুই হাজার কোটি টাকার মূলধন দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের যে টাকা দেওয়ার কথা তার ৫০ শতাংশ দিয়েছে, বাকি ৫০ শতাংশ ডিবেঞ্চারে লোন হিসেবে দিয়েছে। আরো ৭৫০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। সেই ফান্ড বাজারকে সাপোর্ট না দিয়ে, গার্মেন্ট কম্পানিকে দেবেন, সেটা করা যাবে না। বিডিবিএলের মাধ্যমে কিভাবে বাজারকে সচল রাখা যায়, সে ব্যবস্থা আমরা করব।’</p> <p>গ্রামীণফোন ও রবির সঙ্গে বকেয়া নিয়ে জটিলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রবি ও গ্রামীণফোনের যে সমস্যা, তা সমাধান হয়ে যাবে। রবির সঙ্গে বসেছি। তারাও পুঁজিবাজারে আসবে। তারা বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসতে চায়। আমরা বলেছি ফেসভ্যালুতে আসতে হবে। কারণ বাজারে যদি আপনি ফেসভ্যালুতে না আসেন, তাহলে বিনিয়োগকারী কিছুই পাবে না। ওরা এতে রাজি হয়েছে।’</p> <p>বিনিয়োগকারীর লোকসান কমাতে বাজারে নতুন পণ্য আনা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের জুনের আগে পুঁজিবাজারে অনেক নতুন নতুন পণ্য আসবে। বাজারে বিনিয়োগকারীর বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানো হবে। এতে বিনিয়োগকারীর লোকসানের মাত্রা কমবে। বাজারের গভীরতা বাড়বে, স্থিতিশীলতাও বাড়বে।’</p> <p>অভিযোগ নিষ্পত্তিতে অনলাইন মডিউল : পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের সব সমস্যা ও অভিযোগ সম্পর্কে জানা ও সমাধানে অনলাইন মডিউল চালু করেছে বিএসইসি। ‘কাস্টমার কমপ্লেইন্ট অ্যাড্রেস মডিউল’ (সিসিএএম) নামে এই সিস্টেমে বিনিয়োগকারী অভিযোগ জানাতে পারবে। অনলাইনে দেওয়া এই অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করে সমস্যার সমাধান করবে।</p> <p>কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে সিসিএএম মডিউলে বিনিয়োগকারীর বিও হিসাব নম্বর, নাম, ঠিকানা, ই-মেইল ও মোবাইল নম্বর দিয়ে অভিযোগ দাখিল করতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে সেটাও উল্লেখ করতে হবে। স্টক এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ সমাধান করবে। ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্টের বিরুদ্ধে হলে সিডিবিএল অভিযোগ নিষ্পত্তি করবে। অভিযোগ নিষ্পত্তির আবেদন প্রত্যাহারও করা যাবে। এই সেবা নিতে বিনিয়োগকারীকে কোনো ফি দিতে হবে না।</p>