<p>চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে দিন দিন আরো বেপরোয়া, আরো কৌশলী হয়ে উঠছে অস্ত্র কারবারিরা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের পরও পুরোপুরি ঠেকানো যাচ্ছে না অস্ত্রের ঝনঝনানি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ঢুকছে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক। অস্ত্র পাচারের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে চোরাচালানের বাহকরা ধরা পড়লেও আড়ালে রয়ে যাচ্ছে রাঘব বোয়ালরা।</p> <p>গত এক বছরে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় অভিযান চালিয়ে শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৪০০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ, বিজিবি ও  র‌্যাব। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪০ জনকে। সর্বশেষ গত শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বাখের আলী সীমান্ত এলাকা থেকে ১০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে বিজিবি। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে ছিল ছয়টি পিস্তল, একটি রিভলবার, তিনটি ওয়ান শ্যুটার গান ও ১০টি ম্যাগাজিন। একটি ডিঙি নৌকায় করে ভারত থেকে পদ্মা নদী পেরিয়ে এসব অস্ত্র বাংলাদেশে আনা হয় বলে জানিয়েছে বিজিবি। এর আগে গত ২০ জুন শিবগঞ্জের ছত্রাজিতপুর থেকে একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং দুই রাউন্ড গুলিসহ আব্দুস সালাম নামের একজনকে এবং ১০ জুন রাতে শিবগঞ্জের সোনাপুর এলাকার একটি আমবাগান থেকে একটি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন এবং পাঁচ রাউন্ড গুলিসহ পলাশ নামের একজনকে আটক করে পুলিশ ও র‌্যাব। এ ছাড়া গত ১৮ মে শিবগঞ্জের পিরোজপুর এলাকা থেকে চারটি ওয়ান শ্যুটার গান, একটি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে বিজিবি। তবে এ ঘটনায় কেউ আটক হয়নি। গত ৬ মে শিবগঞ্জের চকপাড়া সীমান্ত থেকে দুটি এয়ারগান ও ৭ মে রাতে শিবগঞ্জের আজমতপুর এলাকা থেকে দুটি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন এবং ছয় রাউন্ড গুলিসহ শরিফুল নামের একজনকে আটক করে বিজিবি।</p> <p>এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শংকরবাটি এলাকার একটি বাড়ি থেকে ২২টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এসব অস্ত্রও শিবগঞ্জ সীমান্ত পেরিয়ে দেশে আনা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।</p> <p>অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার চরবাগডাঙ্গা, উজিরপুর, দুর্লভপুর, মনাকষা, বিনোদপুর ও শাহাবাজপুর ইউনিয়নের একাধিক রাঘব বোয়ালের নেতৃত্বে চলছে অস্ত্র ব্যবসা। প্রভাবশালী এ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক বিশ্বস্ত বাহকের মাধ্যমে অস্ত্রের চালান পৌঁছে দেয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ২০১৬ সালে রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারিতে সংগঠিত জঙ্গি হামলায় ব্যবহূত অস্ত্রগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়েই ভারত থেকে দেশে আনা হয়েছিল।</p> <p>শিবগঞ্জের সীমান্তপথগুলো দিয়ে সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের চালান আসে। ভারত থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্য পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে এসব এলাকা। বাংলাদেশে সরবরাহের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় ছোট ছোট অস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। এসব কারখানায় লেদ মেশিনে তৈরি করা হচ্ছে অস্ত্র। পরে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে কিংবা চোরাচালান করা গরুর মাধ্যমে এসব আগ্নেয়াস্ত্র চলে আসছে বাংলাদেশে।</p> <p>এসব অস্ত্র বহন করে নেওয়ার সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ধরা পড়ছে জেলার অধিবাসীরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত থেকে একটি অস্ত্রের চালান ঢাকায় পৌঁছে দিতে পারলে এর বাহকরা পায় পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর সামান্য এই টাকার জন্য ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্র পৌঁছে দেওয়ার কাজে জড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত এলাকার কিছু মানুষ।</p> <p>যোগাযোগ করা হলে বিজিবি সদর দপ্তরের অনুমতি ছাড়া এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিজিবি কর্মকর্তারা।</p> <p>তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‌্যাব ক্যাম্পের কম্পানি কমান্ডার মো. আজমল হোসেন জানান, অস্ত্র ব্যবসা ঠেকাতে র‌্যাব সব সময় কাজ করছে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।</p> <p>চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সপার (সদর সার্কেল) মো. ইকবাল হোসাইন জানান, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এসব অভিযানে অস্ত্রসহ ব্যবসায়ীদের আটক করা হচ্ছে।</p>