<p>নরসিংদীর রায়পুরায় পুরনো বিরোধের জের ধরে একটি বাড়িতে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে এক পরিবারের তিন বোনসহ চারজন অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের লোচনপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।</p> <p>অগ্নিদগ্ধদের প্রথমে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে তারা সেখানে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।</p> <p>অগ্নিদগ্ধরা হলো উপজেলার লোচনপুর গ্রামের মৃত সামসুল মিয়ার মেয়ে প্রীতি (১১), সুইটি (১৩), মুক্তামণি (১৬) এবং তাদের ফুফু খাতুন নেছা (৬৫)। দগ্ধ তিন বোনের মধ্যে মুক্তা এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। সুইটি অষ্টম শ্রেণিতে এবং প্রীতি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। এদের মধ্যে মুক্তামণির শরীরের ১০ শতাংশ, সুইটির ১৫ শতাংশ, প্রীতির ১৫ শতাংশ এবং খাতুন নেছার শরীরের ১২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই কমবেশি শ্বাসনালি পুড়েছে। এ কারণে কেউই আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক পার্থ শঙ্কর পাল।</p> <p>বার্ন ইউনিটে আহত তিন শিশুর বড় বোন রত্না আক্তার গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে জানান, প্রতিবেশী সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের সম্পত্তি গ্রাস করার চেষ্টা করছে। দুই মাস আগে তাঁদের হত্যার হুমকি দিয়ে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। গত পরশু দিন পুলিশের সহযোগিতায় তাঁরা বাড়িতে ফিরে আসেন। রাতে সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। সন্ত্রাসীরা ভোরের দিকে বাইরে থেকে ঘরের দরজায় তালা মেরে প্রথমে বোমা ফাটায় এবং পরে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। প্রতিবেশীরা তাঁদের চিৎকারে এগিয়ে এসে উদ্ধার করে। না হয় কেউ বাঁচতেন না।</p> <p>খাতুন নেছার ছেলে আওয়াল মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিবেশী ইদ্রিস, রবিন, শিপনসহ আরো কয়েকজন মিলে এ আগুন দেয়। এরা সবাই আমাদের প্রতিবেশী।’</p> <p>পুুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে লোচনপুর গ্রামের শিপন, কাজল, দুলালদের সঙ্গে একই এলাকার সামসুল মিয়ার পরিবারের লোকজনের বিরোধ চলে আসছিল। এরই মধ্যে গত বছর ডিসেম্বরে সামসুল মিয়া মারা গেলে দুই পক্ষের বিরোধ আরো বাড়ে। এ ঘটনার জের ধরে গত ৬ ফেব্রুয়ারি দুলাল মিয়াকে হত্যা করা হয়। দুলাল হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলায় সামসুল মিয়ার দুই ছেলে সোহাগ মিয়া ও বিপ্লব মিয়াকে আসামি করা হয়। দুলাল হত্যাকাণ্ডের পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে দুলাল মিয়ার পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা মিলে সামসুল মিয়ার বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর ও ঘরের মালপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর সামসুল মিয়ার পরিবারের লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পায় বিপ্লব মিয়া। এরপর গত সোমবার বিকেলে নিজ বাড়িতে আসে বিপ্লব মিয়ার তিন বোন ও এক ফুফু। এরই মধ্যে মঙ্গলবার ভোরে তারা অগ্নিদগ্ধ হয়। খবর পেয়ে গতকাল দুপুরে পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিকুর ইসলাম, রায়পুরা থানার ওসি মহসিনুল কাদির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। </p> <p>প্রতিবেশী রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘ভোর অনুমান ৫টার দিকে কান্নাকাটির শব্দ শুনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি ঘরে আগুন লেগেছে। তবে কিভাবে আগুন লেগেছে বলতে পারব না।’</p> <p>রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. আবু সাইদ বলেন, ‘সকাল ৬টায় চারজন দগ্ধ রোগী হাসপাতালে আসে। তাদের প্রত্যেকের হাত ও শ্বাসনালিসহ শরীরের প্রায় ১০-১৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত তাদের ঢাকা মেডিক্যালে স্থানান্তর করেছি।’</p> <p>ওসি মহসিনুল কাদির বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ড নাকি পেট্রলবোমা সে সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট কিছু বোঝা যাচ্ছে না। আহতদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিপ্লব মিয়া এলাকায় ডাকাত হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।’</p> <p>এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো পক্ষ অভিযোগ দায়ের করেনি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মামুন ও রবিন নামে দুজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।</p> <p> </p>