<p>গত ১৪ মার্চ সুনামগঞ্জ শহরের পিটিআই সড়কের সামনে দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও’ আন্দোলনের সদর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আজাদ মিয়া। রবিবার রাত সাড়ে ৮টায় তিনি সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। এ ঘটনায় খুনিদের বিচার ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন। পুলিশ রবিবার রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রামের উকিল আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।</p> <p>নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে আজাদ মিয়া কয়েক বছর ধরে সুনামগঞ্জ শহরে অবস্থান করতেন। তবে সব সময় তিনি এলাকার কৃষকের স্বার্থে উচ্চকণ্ঠে কথা বলতেন। ২০১৮ সালে দেখার হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ছয়টি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে সরকারের কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগ করেন। আদালত অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল হক, গ্রামের উকিল আলীসহ কয়েকজন তাঁকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন।</p> <p>আজাদ মিয়া গ্রামের বিচার সালিসেও অন্যায়ের বিপক্ষে কথা বলতেন। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের কিছু প্রভাবশালীর সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল। তারা বিভিন্ন সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলাও দায়ের করেছিল বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। এলাকাবাসী জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বাসায় যাওয়ার পথে মুখোশ পরা তিন দুর্বৃত্ত পেছন দিক দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে দ্রুত সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।</p> <p>নিহতের ছোট ভাই নাট্যকার আফরোজ রায়হান বলেন, ‘আমার ভাই হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতেন। কিছুদিন আগেও তিনি এলাকায় কৃষকদের নিয়ে মানববন্ধন করেছেন। এর আগে তিনি ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে দুর্নীতির অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন। এসব কারণে দুর্নীতিবাজ একটি চক্র তাঁর বিরুদ্ধে ছিল। এই চক্রই তাঁকে পরিকল্পিতভাবে খুন করিয়েছে।’</p> <p>নিহতের বড় ভাই আব্দুল আজিজ বলেন, ‘মৃত্যুর আগে আমার ভাই উকিল আলীসহ কয়েকজন ঘাতকের নাম বলে গেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করব।’ তিনি বলেন, ‘আমার ভাই সব সময় কৃষক ও গরিব মানুষের পক্ষে ছিল। সে গ্রামীণ বিচারে গরিবদের পক্ষে থাকত। এ কারণে প্রভাবশালী একটি চক্র তাকে হত্যা করেছে।’</p> <p>হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, ‘আজাদ মিয়া মৃত্যুর ১৫ দিন আগেও এলাকায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কৃষকদের নিয়ে আন্দোলন করেছেন।’ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। খুনিদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে পুলিশ।’</p>