<p>রাজধানীসহ দেশে ফিটনেসহীন গাড়ি বাড়ছেই। সারা দেশে রাস্তায় চলাচল করা যাত্রীবাহী বাসের ৩৩ শতাংশের ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই বলে গতকাল বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। অন্যদিকে ৫৬ শতাংশ বাসের গতি নিয়ন্ত্রক সার্টিফিকেট নেই বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। </p> <p>বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী থেকে ২০ বছরের পুরনো বাস উচ্ছেদের ঘোষণা বারবার দেওয়া হলেও সেগুলোই চলাচল করছে। তদুপরি অননুমোদিত লেগুনাসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি বাসের বিকল্প হিসেবে যাত্রী টানছে। তাই সারা দেশেই ফিটনেসহীন বিভিন্ন শ্রেণির গাড়ি বাড়ছে।</p> <p>পরিবহন মালিকরা বলছেন, সরকার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ দিলে পুরনো গাড়ি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে রাজধানী থেকে ফিটনেসহীন বাস তুলে দেওয়া সম্ভব হবে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কে এনায়েত উল্ল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পুরনো বাস প্রতিস্থাপন করে নতুন বাস আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়টি আমরা বারবারই বাস্তবায়নের জন্য বলে আসছি। তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে ঘোষণার মধ্যে থাকায় পুরনো বাস উচ্ছেদ হচ্ছে না।’</p> <p>বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, পুরনো ও ফিটনেসহীন বাস এত বেড়েছে যে এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালালে বাস মালিকরা অঘোষিত ধর্মঘটে চলে যায়। অভিযানও থেমে যায়। আবার অভিযান সব সংস্থার সমন্বয়েও হয় না। ফলে পার পেয়ে যায় ফিটনেসহীন বাসের মালিক-চালকরা।</p> <p>পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজধানীতে সাড়ে চার হাজার নতুন বাস নামানো হবে। পুরনো বাস ধীরে ধীরে তুলে দেওয়া হবে। এ জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। তবে ফিটনেস পরীক্ষার জন্য আধুনিক ব্যবস্থা চালু করা জরুরি। না হলে সনদ পাওয়া গাড়িও চলাচলের উপযুক্ত কি না সন্দেহ রয়ে যায়। কোনো গাড়ি সড়কে চলাচলের উপযোগী কি না তা খতিয়ে দেখার নাম ফিটনেস পরীক্ষা। কোনো গাড়ি চলাচলের উপযোগী কি না, তা জানা যায় ৬০টি বিষয় পর্যবেক্ষণ করে। এখন মাত্র ছয়-সাতটি বিষয় চোখে দেখে গাড়ির ফিটনেস সনদ দেওয়া হচ্ছে। সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে গেলে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লেগে যায়। তাই শুধু গাড়ির বডি, চেসিস নম্বর, ইঞ্জিনের অবস্থা, হেডলাইট ও লুকিং গ্লাস আছে কি না তা দেখা হয়। স্টিয়ারিং ও পাওয়ার সিস্টেমের মতো অনেক বিষয়ই খতিয়ে দেখা হয় না।</p> <p>সালেহ উদ্দিন জানান, এ পরীক্ষার জন্য সরকার ঢাকাসহ চারটি বিভাগে পাঁচটি যানবাহন পরীক্ষণ কেন্দ্র (ভিআইসি) চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুই যুগ আগে। তার মধ্যে রাজধানীর মিরপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে তা চালু হয়েছে। বাকিগুলো চালু হয়নি।</p> <p>বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, মোটরযান পরিদর্শকরাই মূলত এই ফিটনেস পরীক্ষা করেন। তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খালি চোখে গাড়ি দেখে ফিটনেস সনদ দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, গাড়ি চলাচলের জন্য গাড়ির ইঞ্জিন ভালো থাকতে হয়। গাড়ি চালাতে দরকার হয় লুকিং গ্লাস। রাতে নিরাপদে চলাচলের জন্য সামনের ও পেছনের বাতি নির্দেশনা অনুসারে জ্বালিয়ে রাখতে হয়। বাস, মিনিবাস, প্রাইভেট কার, ট্টাক, লরির মতো গাড়ির ভেতর ও বাইরের বিভিন্ন বিষয় ঠিকঠাক আছে কি না তা দেখা হয় ফিটনেস পরীক্ষায়। মোটরসাইকেল ছাড়া সব ধরনের গাড়ির এই পরীক্ষা করাতে হয় বছরে একবার। বিআরটিএ কার্যালয়ে এ জন্য গাড়ি নিয়ে যেতে হয়। গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে দরকার পড়ে ফিটনেস পরীক্ষার মূল সনদ, আয়কর বা ট্যাক্স টোকেনের রসিদ, রুট পারমিটসহ অন্যান্য ফি জমা দেওয়ার রসিদের ফটোকপি। দিতে হয় ফিটনেস ফি। সব শেষে নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফিটনেস নবায়নের আবেদন করে পরিদর্শনের জন্য মোটরযানটি সংশ্লিষ্ট অফিসে হাজির করতে হয়।</p> <p>জানা যায়, তখনকার যোগাযোগ মন্ত্রণালয় (বর্তমানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) ১৯৯৪ সালে যান্ত্রিক উপায়ে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করতে প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। পরে ওই প্রকল্পের কাজ আর এগোয়নি। ২০০৪ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচটি সেমি-অটোমেটিক যানবাহন পরীক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে বিআরটিএ মিরপুর কার্যালয়ে তা চালু করা হয়।</p>