<p>চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ছয় দিনে টানা বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৭২৭ মিলিমিটার। এ কয়েক দিন পানিবন্দি ছিল নগরবাসী। তাই গতকাল বুধবার বৃষ্টি থামলে পানি নেমে যেতে শুরু করে। তখন নগরীবাসীর ঢল নামে সড়কে। অসংখ্য গাড়ি ও মানুষের হুড়াহুড়িতে দেখা দেয় নতুন দুর্ভোগ।</p> <p>পানি নেমে যাওয়ার পর দেখা গেছে, মহানগরীর অন্তত ৮০ শতাংশ সড়কে বড় ধরনের গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাক বাসগুলো গর্তে পড়ে উঠতে পারলেও ছোট যানবাহনগুলো আটকে পড়ছে। আশপাশের লোকজন ডেকে গর্ত থেকে গাড়ি তুলতে দেখা গেছে নগরীর বিভিন্ন সড়কে।</p> <p>অবশ্য নগরীর একাংশে গতকাল দুপুরে গাড়ি-যাত্রীদের হুড়াহুড়ি অবস্থা থাকলেও অন্য অংশে তখনো ছিল জলজট। জোয়ারের কারণে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, হালিশহর ও সিডিএ আবাসিক এলাকা তখন তলিয়ে ছিল।</p> <p>গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে কাজের প্রয়োজনে বের হওয়া যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের বহু চিত্র দেখা গেছে। সকালের দিকে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে তখনও জোয়ার আসেনি। সড়কের গর্তগুলো দেখে নগরবাসী বিস্ময় প্রকাশ করেছে।</p> <p>ভাঙাচোরা সড়ক দেখে ছোট পুল পুলিশ লাইনে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যেতে প্রাইভেট কার রেখে রিকশায় যাচ্ছিলেন চট্টগ্রামের প্রবীণ ব্যবসায়ী হাজি মোহাম্মদুর রহমান। প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টা করেও তিনি যাওয়ার মতো অবস্থা না পেয়ে আবার নিজের কার্যালয়ে ফিরে আসেন।</p> <p>এ বিষয়ে মোহাম্মদুর রহমান বলেন, ‘একটি জরুরি কাজে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যেতে চেয়েছিলাম। বড় গর্ত দেখে নিজের প্রাইভেট কারে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিই শুরুতেই। পরে উঠি রিকশায়। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি রিকশার চাকা পড়ছে বড় বড় গর্তে। রিকশা উল্টে যাওয়ার অবস্থা। তখন দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার ভয়ে রিকশা ঘুরিয়ে নিজের কার্যালয়ে চলে আসি।’</p> <p>নগরীর বহদ্দারহাট-শুলকবহর এলাকা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলাকায় একে তো উড়াল সেতু নির্মাণের কাজ চলছে; এর ওপর নিচে মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট ষোলশহরসহ আশপাশের এলাকার সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মুরাদপুর-অক্সিজেন রোড, বহদ্দারহাট-কাপ্তাই রাস্তার মাথা সড়ক যেন ‘চাষ দেওয়া জমি’।</p> <p>মুরাদপুরে সকালে দেখা গেল, একটি প্রাইভেট কারকে গর্ত থেকে তুলতে ট্রাফিক পুলিশের অনুরোধে কয়েকজন পথিক ঠেলছে। গাড়ির আরোহী এক নারী নেমে দাঁড়িয়েছেন। কয়েক মিনিট চেষ্টার পর প্রাইভেট কারটি গর্ত থেকে উঠল। পরে গাড়ির আরোহী ওই নারী চালককে আর গাড়ি নিয়ে বের না হওয়ার নির্দেশ দিলেন।</p> <p>ওই গর্তের অদূরে সড়কের মোড়ে দেখা গেল, সিটি করপোরেশনের কর্মীরা বড় ধরনের একটি গর্ত ভরাটের কাজ করছে। গর্তে ইটের টুকরা ফেলা হচ্ছে। বালু আর বিটুমিন দিয়ে আপাতত মেরামতের চেষ্টায় ব্যস্ত তারা।</p> <p>বহদ্দারহাট-শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত এক কিলোমিটার, বাকলিয়া, রাহাত্তারপুল ও কালা মিয়া বাজার সড়কে বড় ধরনের গর্ত দেখা গেছে। সেখানেও গাড়ি চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছিল। এমনকি শাহ আমানত সেতু থেকে নবনির্মিত চার লেন সড়ক ধরে ফিশারি ঘাট হয়ে কোতোয়ালি থানা মোড়ে আসা সড়কটিতেও দেখা গেছে বড় গর্ত।</p> <p>কয়েক দিন ঘরবন্দি থাকার পর গতকাল রোদ দেখে যারা কাজের প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়েছিল কিংবা উপজেলা পর্যায় থেকে মহানগরীতে বিভিন্ন কাজে এসেছিল, তাদের তীব্র যানজটের মুখোমুখি হতে হয়েছে নগরীতে।</p> <p>এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) মোহাম্মদ সুজায়েত ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কয়েক দিন বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার পর রোদ দেখে একসঙ্গে অনেক মানুষ ঘর থেকে বের হয়েছে। এ কারণে সড়কে গাড়ির চাপ আছে।’ তিনি বলেন, জলাবদ্ধতায় সড়ক ক্ষতি হওয়ার কারণেই গাড়ির ধীরগতি হয়ে গেছে। ট্রাফিক পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।</p> <p>মহানগরীর সড়ক সংস্কার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে পাঁচটি দল বিভক্ত হয়ে সড়কের সংস্কারকাজ করছে। ১৫ দিনের ক্রাশ প্রগ্রামের আওতায় সড়কের সংস্কারকাজ চলছে।’ তিনি বলেন, ‘মহাসড়কের সংস্কারে বড় ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।’</p>