<div> তিন দিনের সফরে গতকাল বুধবার রাতে ঢাকায় এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। রাত পৌনে ১১টায় এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ একটি ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাঁকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গত মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই সুষমার প্রথম একক বিদেশ সফর। তাঁর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংও রয়েছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারত যে গুরুত্ব দেয়, এই সফরের মধ্য দিয়ে এরই প্রতিফলন ঘটেছে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন সুষমা স্বরাজ। এতে ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর, স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নসহ অমীমাংসিত ইস্যুগুলো দ্রুত সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হতে পারে। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশ থেকে কথিত অনুপ্রবেশ মোকাবিলায় ঢাকার সহযোগিতা প্রত্যাশা করতে পারে।</div> <div> এদিকে ঢাকা সফরের আগে গতকাল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন সুষমা স্বরাজ। পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি, তিস্তা চুক্তি ও অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে সুষমা আলোচনা করবেন বলে মমতাকে জানিয়েছেন। মমতা-সুষমা টেলিফোন আলাপ নিয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিডিনিউজ জানায়, স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলেছেন সুষমা স্বরাজ। প্রায় ৩৫ মিনিট তাঁরা কথা বলেছেন।</div> <div> সফরসূচি অনুযায়ী, সুষমা স্বরাজ আজ সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাবেন। সেখানে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য তিনি যাবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ভারত সফরে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণপত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করবেন সুষমা স্বরাজ। আজ দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিকেলে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সুষমা স্বরাজের সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সুষমা স্বরাজ আজ সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর তিনি ঢাকায় রূপসী বাংলা হোটেলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে বক্তব্য দেবেন।</div> <div> আগামীকাল শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ও ড. মসিউর রহমান সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গেও তাঁর বৈঠকের কথা রয়েছে। আগামীকাল সকাল সাড়ে ১১টায় নয়াদিল্লির উদ্দেশে তাঁর ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।</div> <div> বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামীকাল খালেদা জিয়ার সঙ্গে সুষমা স্বরাজের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।</div> <div> ভারতীয় সূত্রগুলো জানায়, সুষমা স্বরাজ তাঁর শুভেচ্ছা সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি একে আরো এগিয়ে নেওয়ার বার্তা নিয়ে এসেছেন। সফরকালে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান ইস্যুগুলো জানার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি তিস্তার পানিবণ্টন ও স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মতো অমীমাংসিত ইস্যুগুলো সমাধানে মোদি সরকারের আন্তরিকতার কথা জানাতে পারেন তিনি।</div> <div> পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আশা করেন, সুষমা স্বরাজের এ সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।</div> <div> সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রপ্তানিবিষয়ক একটি চুক্তির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে ১০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করে মাসে এক কোটি ২০ লাখ টাকা আয় করবে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের মধ্যে এই সংযোগ স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া সংযোগ স্থাপিত হওয়ার দুই বছরের মধ্যে ভারতে ১০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ রপ্তানির আশা করছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় তিস্তা নদীর পানিবণ্টন, স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুমোদন, ভারতীয় ঋণ, বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা, সীমান্তে হত্যা বন্ধ, চার দেশীয় অর্থনৈতিক করিডর বিসিআইএম, ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ঢাকা-কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসে ক্রমাগত যাত্রীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় মৈত্রী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো নিয়েও এ বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে আগামী ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস থেকে নতুন মৈত্রী ট্রেনের চলাচল শুরু হবে।</div> <div> সূত্র জানায়, সুষমার সফরে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে জরুরি খাদ্যশস্য পাঠানোর সুযোগ ও তেঁতুলিয়া করিডর খুলে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ভারত তার প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশের ভেতর চার কিলোমিটারের ওই করিডর পেলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দূরত্ব ৮৫ কিলোমিটার কমবে।</div> <div> অন্যদিকে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে তার ভূখণ্ড ব্যবহার করে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে জরুরি খাদ্য নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ভারতকে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নেতৃত্বে আজকের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মূল্যায়ন ও অতীতে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হতে পারে।</div> <div> এদিকে গতকাল নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ ব্রিফিংয়ে সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের প্রসঙ্গ স্থান পেয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। বাংলাদেশ সফরের জন্য তিনি তাঁর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে যোগাযোগ করেছেন।</div> <div> স্থলসীমান্ত চুক্তি ইস্যুতে মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন বলেছেন, এটি এখন ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্য সভায় আছে। সেখানেই এটি নিয়ে আলোচনা হবে।</div> <div> বাংলাদেশ থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে জাল ভারতীয় মুদ্রা যাচ্ছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে ঢাকার বৈঠকে আলোচনা হবে কি না জানতে চান এক সাংবাদিক। জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ সব ইস্যু নিয়েই আলোচনা হবে বলে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি। আমরা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো তুলতে আগ্রহী। তারা (বাংলাদেশ পক্ষ) তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো তুলবে। কারণ বন্ধুত্ব হলো আন্তরিকতা ও পরস্পরের উদ্বেগগুলো প্রশমনে উদ্যোগ নেওয়া।’</div>