<div> আগের চার দিন চাপে থাকা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত যে ফল নিয়ে বেরিয়ে এলো সেটাকে মুশফিকুর রহিম এক কথায় বলেছেন, ‘ডমিনেটিং’!</div> <div> আসলেই তাই। শুরু থেকে প্রতিপক্ষের প্রভাবে নতজানু বাংলাদেশ পাল্টা প্রভাব বিস্তার করল একেবারে শেষ দিনে এসে। অথচ প্রথম দিনের শেষে ছিল শ্রীলঙ্কাকে আরেকবার রান-পাহাড়ে চড়তে না দেওয়ার চাপ। ঢাকা টেস্টে ব্যাটসম্যানদের ভুলের পুনরাবৃত্তি ঠেকানোর চাপ ছিল দ্বিতীয় দিনের শেষে। তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে ব্যাটসম্যান আর আম্পায়ারের ভুলে লঙ্কানদের প্রথম ইনিংসের সঙ্গে ব্যবধান যথাসম্ভব কমানোর স্বপ্নে ধাক্কা এবং সেই সূত্রে চাপ আরো বেশি। আর চতুর্থ দিনের শেষে টেস্ট বাঁচানোর সামর্থ্য প্রমাণের চাপ।</div> <div> ছোট্ট কাঁধে সেই চাপ নিয়ে সামর্থ্য প্রমাণে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী হলেন মমিনুল হক; এখানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগের টেস্টেই ১৮১ রানের ইনিংস খেলার সুবাদে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম যাঁর ‘লাকি গ্রাউন্ড’ও। তো এই মাঠ তাঁর গায়ে ভাগ্যের পরশও বোলাল কখনো কখনো। ক্যাচ উঠল কিন্তু আউট হলেন না। ব্যাটের কানা দিয়ে কয়েকবারই বল বিপজ্জনকভাবে এখানে সেখানে গেল কিন্তু ড্রেসিংরুমের পথ ধরতে হলো না। ম্যাচ বাঁচানোর সাহস বুকে লালন করে ব্যাটিং করে যাওয়ায়ই হয়তো তিনি ভাগ্যদেবীর আশীর্বাদধন্য।</div> <div> আর ম্যাচ বাঁচানোর পথে কখনো মমিনুলের সঙ্গী ইমরুল কায়েস। কখনো আবার সাকিব আল হাসান। তাঁদের নিয়ে বাংলাদেশকে এমন জায়গায় পৌঁছে দিলেন যে চট্টগ্রাম টেস্টের পঞ্চম দিনের শেষ পর্যন্তও যেতে হলো না। এর আগেই ‘সন্ধি প্রস্তাব’ শ্রীলঙ্কার তরফ থেকে! সারা দিনে ৯০ ওভার খেলা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিজের তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির পর মমিনুলের স্বভাবসুলভ নিরুত্তাপ সেলিব্রেশন শেষ হতে না হতেই লঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের ড্র মেনে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার প্রস্তাব! অথচ তখনো প্রায় এক ঘণ্টা এবং ১৪ ওভার খেলা বাকি। ৪৬৭ রানের টার্গেট পেয়ে ম্যাচ বাঁচাতে নামা বাংলাদেশের চেহারাও তখন সিরিজের আগের তিনটি ইনিংসের চেয়ে একেবারেই আলাদা, ৩ উইকেটে ২৭১ রান।</div> <div> দিনের শেষটা এ রকম হওয়ার পূর্বাভাস সকালেই মিলেছে বলেও ধরতে পারেন। এই সিরিজে উইকেটে যাঁর আয়ু কেবলই কমে এসেছে, সেই তামিম ইকবাল এদিন অন্য রকম। ঢাকা টেস্টের দুই ইনিংসে তাঁর স্থায়িত্ব যেখানে ছিল ২৮ ও ১৮ বলের, এখানে এসে প্রথম ইনিংসে তা মাত্র ৪ বলের। সেই তামিম কাল শামসুর রহমানের সঙ্গে দিব্যি প্রথম ঘণ্টা পার করে দিলেন! খেলে ফেললেন শতাধিক বলও। ম্যাচের শেষে যে প্রচেষ্টা প্রশংসিত হয়েছে অধিনায়ক মুশফিকের কাছেও। তবে লঙ্কান অধিনায়ক পার্টটাইম বোলার কিথুরুয়ান ভিথানাগেকে নিয়ে আসার পর ভুগতেও হচ্ছিল তামিমের মতো বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে। এ লেগস্পিনার বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের অফস্টাম্পের সামান্য বাইরের ‘রাফ’ ব্যবহার করে টার্ন পাচ্ছিলেন। পেয়েছেন অফস্পিনার দিলরুয়ান পেরেরাও। এ দুজন মিলে পানি পানের প্রথম বিরতির পর কিছুটা সংশয়ে ফেলেন বাংলাদেশকে। কারণ ৫ ওভারের মধ্যে বিদায় নেন তামিম ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান শামসুর। ভিথানাগের টার্ন করে ভেতরে ঢোকা বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হন তামিম (৩১)। মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির ১০ মিনিট আগে পেরেরার শিকার শামসুর (৪৫)। তিনিও তামিমের মতোই ড্রাইভ খেলতে গিয়ে বোল্ড! তবে পর পর দুজনের বিদায়টা দুর্ঘটনায় রূপ নেয়নি ৪ রানে সেই পেরেরার বলে সিলি মিড অফে ক্যাচ দিয়েও কৌশল সিলভার সৌজন্যে মমিনুল বেঁচে যাওয়ায়!</div> <div> এরপর আর পেছন ফিরে তাকানো নয়। ইমরুলকে সঙ্গে নিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতির পর পার করে দেন আরো এক ঘণ্টা। যোগ হয় ৭১ রান। এরপর আবার পানি পানের বিরতি পেরোতেই ইমরুল (২৫)। পেরেরার বল ব্যাকফুটে খেলতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনেন, ফল এলবিডাব্লিউ। তবে এরপর লঙ্কানদের হতাশা উপহার দিয়ে গেছে মমিনুল আর সাকিবের (৪৩*) ১২০ রানের অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটি। নুয়ান প্রদীপের বল স্কয়ার লেগে ঠেলে মমিনুল (১০০*) প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টায় নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতেই যে হতাশা আর বাড়াতে চাননি ম্যাথুজ!</div> <p> গত চার টেস্টে মমিনুলের তৃতীয় সেঞ্চুরির সেলিব্রেশন শেষ হতে না হতেই তাই উল্টো নতজানু শ্রীলঙ্কা। তাদের পক্ষ থেকে ড্র মেনে নেওয়ার প্রস্তাব তো এটাই প্রমাণ করে যে চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনটা ‘ডমিনেট’ করেছে বাংলাদেশই!  </p>