<p>মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও লেখক। তিনি ১৯০৩ সালের ১ এপ্রিল নোয়াখালী জেলার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ আবদুল মজিদ এবং মাতার নাম ফাতেমা খাতুন। তাঁর পিতা পেশায় একজন সাবরেজিস্ট্রার ছিলেন, তাই চাকরি সূত্রে তিনি নানা জায়গায় বদলি হতেন। ফলে মোতাহের হোসেন মায়ের কাছে নানাবাড়ি কুমিল্লায় থাকতেন। তিনি অল্প বয়সেই পিতৃহারা হন।</p> <p>মোতাহের হোসেন চৌধুরী শিক্ষাজীবনের বেশির ভাগ সময় কুমিল্লায়ই কাটান। তিনি কুমিল্লা ইউসুফ হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করেন। এরপর ইউসুফ হাই স্কুলে একজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু করেন। ১৯৪৩ সালে তিনি প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে বাংলায় এমএ পাস করেন।</p> <p>১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে লেকচারার পদে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর চট্টগ্রাম কলেজে যোগদান করে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন।</p> <p>মোতাহের হোসেন চৌধুরী কিশোর বয়স থেকেই সাহিত্যের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি প্রথম দিকে কবিতা লিখতেন। বাঙালি মুসলমান সমাজের অগ্রগতির আন্দোলন হিসেবে পরিচিত ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের’ সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি এই আন্দোলনে কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদির প্রমুখের সহযোগী ছিলেন।</p> <p>মুক্তবুদ্ধিচর্চার প্রবক্তা, উদার মানবতাবাদী ও মননশীল প্রবন্ধকার হিসেবে মোতাহের হোসেন চৌধুরীর বিশেষ খ্যাতি আছে। তিনি ঢাকার মুসলিম সাহিত্য সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন এবং এর সভা ও সম্মেলনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। তাঁর রচিত ‘আমাদের দৈন্য’, ‘আদেশপন্থী ও অনুপ্রেরণাপন্থী’ ও ‘মুসলমান সাহিত্যিকদের চিন্তাধারা’ প্রবন্ধ যথাক্রমে সাহিত্য সমাজের পঞ্চম (১৯৩১), ষষ্ঠ (১৯৩২) ও অষ্টম (১৯৩৪) বার্ষিক সম্মেলনে পঠিত হয়।</p> <p>মোতাহের হোসেনের প্রবন্ধের গদ্যশৈলীতে প্রমথ চৌধুরীর এবং মননে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব লক্ষ করা যায়। তিনি তাঁর রচনায় সংস্কৃতি, ধর্ম, মানবতাবোধ ও মানুষের জীবনাচরণের মৌলিক বিষয়গুলো সংজ্ঞায়িত ও উন্মোচিত করতে চেয়েছেন এবং বিচিত্র ও সুন্দরভাবে বাঁচার মধ্যে মহত্তম জীবনের সন্ধান করেছেন। ‘সংস্কৃতি কথা’ (১৯৫৮) তাঁর প্রথম প্রবন্ধ গ্রন্থ। দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘সুখ’ (১৯৬৫) বার্ট্রান্ড রাসেলের Conquest of Happiness গ্রন্থের এবং তৃতীয় গ্রন্থ ‘সভ্যতা’ (১৯৬৫) ক্লাইভ বেল-এর Civilization গ্রন্থের ভাবানুবাদ। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে তাঁর মৃত্যু হয়।</p> <p>♦ ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>