<p>পিরামিড (Pyramid) পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের একটি। প্রাচীন মিসর শাসন করতেন ফারাও রাজারা। তাঁদের কবরের ওপর নির্মিত সমাধি মন্দিরগুলোই পিরামিড হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পিরামিডের ডিজাইন এমনভাবে করা হয়, যেন এর বেশি ওজন ভূমির কাছে থাকে। ফলে এর আয়তনকেন্দ্র শীর্ষ থেকে লম্ব দূরত্বের এক-চতুর্থাংশে অবস্থিত। এর ভূমি যেকোনো আকারের বহুভুজ ও পার্শ্বতলগুলো যেকোনো আকারের ত্রিভুজ হয়ে থাকে। একটি পিরামিডের কমপক্ষে তিনটি ত্রিভুজাকার পার্শ্বতল থাকে, অর্থাৎ পিরামিডের ভূমিসহ কমপক্ষে চারটি তল থাকে।</p> <p>মিসরীয় পিরামিড তৈরি করা হয়েছিল বিশাল আকৃতির পাথরখণ্ড দিয়ে। পাথরখণ্ডের একেকটির ওজন ছিল প্রায় ৬০ টন। আর দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ থেকে ৪০ ফুট। এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছিল দূর-দূরান্তের পাহাড় থেকে। পাথরের সঙ্গে পাথর জোড়া দিয়ে এমনভাবে পিরামিড তৈরি করা হতো, একটি পাথর থেকে আরেকটি পাথরের মাঝের অংশে একচুলও ফাঁকা থাকত না।</p> <p>২০০৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মিসরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৩৮টি পিরামিড পাওয়া গেছে। এই পিরামিডগুলোর বেশির ভাগই মিসরের রাজধানী কায়রোর কাছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড়টির নাম ‘গিজার পিরামিড’ বা ‘খুফুর পিরামিড’। এটি তৈরি হয়েছিল খ্রিস্টাব্দের প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। এর উচ্চতা প্রায় ৪৮১ ফুট এবং তা ৭৫৫ বর্গফুট জমির ওপর স্থাপিত। এটি তৈরি করতে সময় লেগেছিল ২০ বছর এবং শ্রমিক খেটেছিল এক লাখ।</p> <p>প্রাচীনকালে মিসরীয়রা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পরও তাদের আত্মা বেঁচে থাকে। তাই ফারাও রাজারা আত্মার আরাম-আয়েশের জন্য পিরামিড তৈরির কাজ শুরু করেন। এসব সমাধিক্ষেত্র আসলে মৃতের আত্মার ঘর। মিসরীয়রা মনে করত, লাশ বা মৃতদেহ টিকে থাকার ওপরই নির্ভর করে আত্মার বেঁচে থাকা বা ফিরে আসা। এ কারণেই মৃতদেহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মমি করত তারা।</p> <p>আত্মার বেঁচে থাকার জন্য চাই প্রয়োজনীয় নানা জিনিস। তাই নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র, বিশেষ করে খাবারদাবার মৃতদেহের সঙ্গে দিয়ে দিত তারা। কবরে সমাহিত ব্যক্তিটি কত বিপুল পরিমাণ বিত্তের মালিক আর ক্ষমতাবান ছিল, তা জাহিরের উদ্দেশ্যেও নির্মাণ করা হতো পিরামিড। তাই ফারাওদের মৃতদেহের সঙ্গে কবরস্থ করা হতো বিপুল ধনসম্পদ। সমাজের বিত্তশালীদের কবরেও মূল্যবান সামগ্রী দেওয়া হতো। এমনকি নিম্ন শ্রেণির মানুষের কবরেও অন্তত কিছু খাবার রেখে দেওয়া হতো। সমাধিস্তম্ভ প্রধানের দায়িত্ব ছিল দস্যুদের হাত থেকে মৃতদেহ আর তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র রক্ষা করা।</p> <p>♦ ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p> <p> </p> <p> </p>