<p>লোহিত সাগর (Red sea) ভারত মহাসাগরের একটি বিশেষ অংশ। বিশ্বের মোট সমুদ্রপথের বাণিজ্যের প্রায় ১০ শতাংশ এই সাগরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশকে পৃথক করেছে সাগরটি। এই সাগরের পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল প্রায় চার লাখ ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার, দৈর্ঘ্য প্রায় ২২৫০ কিলোমিটার এবং ৩৫৫ কিলোমিটার প্রশস্ত, গড় গভীরতা প্রায় ৫০০ মিটার। এর মধ্যভাগে সর্বোচ্চ গভীরতা ৩০৪০ মিটার।</p> <p>লোহিত সাগরে জলে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে, যা বাতাস থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে ট্রিকোডেসামিয়াম রিথ্রিয়াম নামে এক ধরনের অজৈব যৌগ গঠন করে। এর রং লাল হওয়ায় এই সাগরের জল লাল দেখায়। এ ছাড়া আগ্নেয়গিরির অব্যাহত অগ্ন্যুৎপাতের কারণেও সাগরের জল লাল রঙের হতে পারে। এই রং কিছু স্থানে দেখা যায় মাত্র। তাই এ সাগরের নাম লাল সাগর বা লোহিত সাগর।</p> <p>লোহিত সাগরের দুই পারে ছয়টি দেশের অবস্থান। সাগরটির পূর্ব পারে রয়েছে সৌদি আরব ও ইয়েমেন এবং পশ্চিম পাশে মিসর, সুদান, ইরিত্রিয়া ও জিবুতির অবস্থান। লোহিত সাগরের দক্ষিণ দিকে রয়েছে বাব এল মান্দেব প্রণালি ও এডেন উপসাগর। এই প্রণালি ও উপসাগরের মাধ্যমেই লোহিত সাগর ভারত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে সাগরটির উত্তর পাশে রয়েছে সিনাই উপদ্বীপ; সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিম দিকে সুয়েজ উপসাগর ও পূর্ব দিকে আকাবা উপসাগরের অবস্থান।</p> <p>লোহিত সাগরের জলের লবণাক্ততার মাত্রা ৩.৮ শতাংশ। লোহিত সাগরের চারপাশের অঞ্চল মরুভূমি হওয়ায় এই সাগরের জল অতিদ্রুত বাষ্প হয়ে যায়। এর ফলে লোহিত সাগরের জল দিন দিন আরো লবণাক্ত হচ্ছে।</p> <p>বর্তমানে সাগরটির লবণাক্ততা অন্যান্য সাগরের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। তবু এর জীববৈচিত্র্য বেশ সমৃদ্ধ। প্রায় এক হাজার ২০০ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে এই সাগরে। এদের মধ্যে এক হাজার প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণী ও ২০০ প্রজাতির নরম ও শক্ত প্রবালের বাস। সাগরের পানির গড় তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পর্যটকদের জন্যও লোহিত সাগর একটি আকর্ষণীয় স্থান। প্রতিবছর সাগরের তলদেশে স্কুবা ডাইভিংয়ের জন্য অসংখ্য দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।</p> <p>ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p> <p>[আরো বিস্তারিত জানতে পত্রপত্রিকায় লোহিত সাগর সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো।]</p>