<p>সেগুন (Teak) পর্ণমোচী বা পাতাঝরা উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম<em> Tectona grandis. </em>এই বৃক্ষ ২০-৩০ মিটার উঁচু হয়। পরিণত বয়সের গাছের গুঁড়ির ব্যাস হয় ১-১.২৫ মিটার।</p> <p>এদের কাণ্ডের গোড়ায় থাকে আধমূল। পাতা আকারে বড়; দৈর্ঘ্যে ৪০-৫৫ সেন্টিমিটার লম্বা, চওড়া প্রায় ২৪-২৫ সেন্টিমিটার এবং বোঁটা ২-৫ সেন্টিমিটার। দেখতে উপবৃত্তাকার থেকে ডিম্বাকার। প্রতিটি পাতার পেছন দিকে ছোট আঁশ থাকে বলে পাতাগুলো খসখসে হয়। সেগুনগাছে ছোট ছোট সুগন্ধি ফুল ফোটে। এই ফুলের রং সাদা, নক্ষত্র আকারের, বৃন্তযুক্ত এবং লম্বায় ২৫-৪০ সেন্টিমিটার হয়। ফুলগুলো ৩০ সেন্টিমিটার ছড়ানো গুচ্ছের মধ্যে জুন থেকে আগস্ট মাসে ফুটে থাকে। এদের ফল শক্ত, কিছুটা গোলাকার, ব্যাস প্রায় ১ সেমি ও অমসৃণ। প্রতিটি ফলে দু-একটি বীজ থাকে। ফল পরিপক্ব হয়ে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে গাছ থেকে ঝরে পড়ে।</p> <p>সেগুনগাছের আদি নিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষত ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্তমানে এই গাছ পাওয়া যায় ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আফ্রিকা ও ক্যারিবিয়ার দেশগুলো। পৃথিবীর মোট সেগুন কাঠের জোগানের এক-তৃতীয়াংশই আসে মিয়ানমার থেকে।</p> <p>১৮৭১ সালে প্রথম চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে এই গাছ বপন করা হয়। পরে ১৮৭৩ সাল থেকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট বনাঞ্চলে সেগুন লাগানো শুরু হয়। বর্তমানে দেশের প্রায় সর্বত্রই উন্নত মানের কাঠের বৃক্ষ হিসেবে এটি রোপণ করা হচ্ছে।</p> <p>দারুবৃক্ষের মধ্যে সেগুন সর্বোত্তম। প্রথম কাটা কাঠ সোনালি হলুদ বর্ণের, ক্রমে তা গাঢ় রং ধারণ করে। কাঠ খুবই শক্ত, দৃঢ়, ভারী, টেকসই এবং উত্তম পলিশযোগ্য। আসবাব তৈরিতে সেগুন কাঠের ব্যবহার বেশি। এ ছাড়া জাহাজ নির্মাণ, বাড়ির দরজা-জানালা, রেলের বগি, বাদ্যযন্ত্র, জাহাজের মাস্তুল ইত্যাদি তৈরিতেও এই কাঠ ব্যবহার করা হয়। কচি পাতা এবং মূলের বাকল থেকে লাল রং তৈরি হয়।</p> <p>বাংলাদেশে প্রাপ্ত বছরে মোট কাঠের মধ্যে একটি বড় অংশ আসে সেগুনগাছ থেকে।</p> <p>ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p> <p>[আরো বিস্তারিত জানতে বাংলাপিডিয়া ও পত্রপত্রিকায় সেগুনগাছ সম্পর্কিত লেখাগুলো পড়তে পারো।]</p>