<p>শৈবাল (Algae) জলজ সুকেন্দ্রিক এককোষী বা বহুকোষী জীব। এরা মূলত ক্লোরোফিল বহনকারী সরল প্রকৃতির স্বভোজী অতি প্রাচীন একটি দল উদ্ভিদ। শেওলা নামেও পরিচিত। আজ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি বছর আগে সমুদ্রের পানিতে এর উদ্ভব। সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে শর্করাজাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে এরা। দু-একটি ব্যতিক্রম প্রজাতি ছাড়া এদের দেহ মূল, কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত নয়। রঙের বৈচিত্র্যও অনন্য। বেশির ভাগই আণুবীক্ষণিক, কিছু আছে বিশাল আকারের। দৈর্ঘ্য ০.৫ মাইক্রো মিটার থেকে ৫০-৬০ মিটার পর্যন্ত হয়।</p> <p>শৈবাল বাতাসের নাইট্রোজেন গ্যাস সংবন্ধন করতে সক্ষম। এরা সবাত শ্বসন পদ্ধতিতে খাদ্যবস্তুর জারণ ঘটায়। পৃথিবীতে বহু প্রকারের শৈবাল জন্মে। শৈবালের হাজার হাজার প্রজাতির মধ্যে আকার, আকৃতি ও গঠনে প্রচুর পার্থক্য রয়েছে। এসব পার্থক্য থাকলেও সব শৈবালের কতিপয় মৌলিক বৈশিষ্ট্য একই রকম।</p> <p>শৈবাল কোষের গঠন অনেকটা উচ্চ শ্রেণির উদ্ভিদকোষের মতোই। কোষের বাইরে সেলুলোজ নির্মিত জড় কোষপ্রাচীর থাকে। শৈবালের কোষে কোষঝিল্লি, সাইটোপ্লাজম, সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস, বৃহৎ ক্লোরোপ্লাস্ট, মাইটোকন্ড্রিয়া, পাইরিনয়েড, রাইবোসোম ইত্যাদি অঙ্গাণু ও সঞ্চিত খাদ্য থাকে। কোনো কোনো শৈবালের দেহ নলাকার, শাখান্বিত, প্রস্থ প্রাচীরবিহীন এবং কোষে বহু নিউক্লিয়াস যুক্ত থাকে। এরূপ শৈবালদেহকে সিনোসাইটিক (coenocytic) শৈবাল বলে; যেমন—Vaucheria। এদের দেহে ভাস্কুলার টিস্যু নেই। বর্তমানে এদের দেখা যায় সর্বত্র। এরা প্রধানত জলজ; স্বাদু পানি যেমন—পুকুর, ডোবা, হ্রদ, ধানক্ষেত, নদী, বিল, হাওর ইত্যাদি এবং স্বল্পলবণাক্ত পানি যেমন—সুন্দরবনের লবণাক্ত মোহনা ও সমুদ্রে এদের প্রচুর পরিমাণে জন্মাতে দেখা যায়। মাটির ওপরে বা নিচে অথবা অন্য স্থানে, যেমন—গাছের গুঁড়ি, দালানের প্রাচীর, শিলা ও পাথর, টিন, ধাতু-খুঁটি ইত্যাদি স্থানেও শৈবাল জন্মে।</p> <p>শৈবাল মাছের খাদ্য, যা পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া সমুদ্রের বিপুল পরিমাণ শৈবাল সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে পরিবেশে অক্সিজেন ত্যাগ করে। এতে পরিবেশদূষণ রোধ হয়। তবে পুকুর বা জলাধারে শৈবালের অতিমাত্রায় বৃদ্ধিতে পানি দূষিত হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়।</p>