<p>ময়না Sturnidae (স্টার্নিডি) গোত্রের অন্তর্গত একদল পাখি। কথা বলা পাখি হিসেবে এরা বিশেষভাবে পরিচিত। বেশির ভাগ প্রজাতির ময়নার আবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশে পাতি ময়না বেশি দেখা যায়। পাতি ময়নার বৈজ্ঞানিক নাম Gracula religiosa।</p> <p>পাতি ময়না মাঝারি কালো রঙের পাখি। এর দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৯ সেমি, ডানা ১৭ সেমি, ঠোঁট ৩ সেমি, পা ৩.৫ সেমি, লেজ ৮ সেমি ও ওজন ২১০ গ্রাম। সাধারণ অবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক পাখিকে পুরোপুরি চকচকে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ দেখায়। প্রজননের সময় মাথা আর ঘাড়ে হালকা বেগুনি আভা দেখা যায়। চোখ কালচে বাদামি। ঠোঁট শক্ত ও হলুদ, ঠোঁটের আগা কমলা রঙের। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ঠোঁট তুলনামূলক অনুজ্জ্বল হলদে কমলা।</p> <p>ময়নার কণ্ঠ তীক্ষ। সে কারণে ঘন অরণ্যে এদের শনাক্ত করা খুবই সহজ। ভোরে ও সন্ধ্যায় এদের ডাক বেশি শোনা যায়। বুনো ময়না প্রায় তিন থেকে তেরো রকম ভাবে ডাকতে পারে। সম্ভবত ময়না শিশু অবস্থায় আশপাশের ময়নার কাছ থেকে এসব ডাক শেখে। এক দলের ময়নার ডাক অন্য দল থেকে ভিন্ন। বন্দি অবস্থায় এরা মানুষের কথা ছাড়াও বাচ্চার কান্না, থালাবাসনের শব্দ, কলিংবেলের শব্দ, বিড়ালের ডাক ইত্যাদি অবিকল অনুকরণ করতে পারে। তারা তীক্ষ ও পরিষ্কার গলায় মানুষের মতো শিস দিতেও সক্ষম।</p> <p>পাতি ময়না সাধারণত আর্দ্র পাতাঝরা, চিরসবুজ বন ও চা বাগানে বিচরণ করে। পাহাড়ি এলাকার ঘন বন এদের পছন্দের জায়গা। এরা দলবদ্ধ অবস্থায় পাঁচ-ছয়টি পাখির পারিবারিক দলে থাকে।  খাদ্যতালিকায় রয়েছে রসালো ফল যেমন—কলা, পেঁপে, আম, আনারস, কমলা, বটের ফল, চেরি ফল ইত্যাদি। এ ছাড়া এরা বিভিন্ন পোকা-মাকড়ও খেয়ে থাকে।</p> <p>স্ত্রী-পুরুষ ময়না  সারা জীবনের জন্য জোড়া বাঁধে। সঙ্গী মারা না যাওয়া পর্যন্ত এদের জোড় অটুট থাকে। বর্ষাকাল এদের প্রজননকাল। এপ্রিল-জুলাই মাসে ডিম পাড়ে। ময়নার ডিম নীল। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৪-১৫ দিন। ছানারা উড়তে শিখলেই মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায়।</p> <p>এই পাখির সাদা বর্ণের এক প্রজাতিকে বলে বালি ময়না। আমাদের দেশে বালি ময়না দেখা যায় না। প্রধানত ইন্দোনেশিয়ার বালিতে এদের বেশি পাওয়া যায়। বালি ময়নার বৈজ্ঞানিক নাম Leucopsar rothschildi।</p> <p>বেশির ভাগ প্রজাতির ময়নার আয়ুষ্কাল ১৫ থেকে ২০ বছর।                      </p> <p>   ► ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল</p>