পদ্য
সাহসী জননী বাংলা
কামাল চৌধুরী
১. বিদেশি সেনার কামানে-বুলেটে বিদ্ধ
নারী-পুরুষ আর যুবক-জোয়ান বৃদ্ধ
শত্রুসেনারা হত্যার অভিযানে
মুক্তিবাহিনী প্রতিরোধ উত্থানে
২. হয় ধান নয় প্রাণ/এ শব্দে সারা দেশ দিশেহারা
একবার মরে ভুলে গেছে আজ/মৃত্যুর ভয় তারা
এবার লোকের ঘরে ঘরে যাবে/সোনালি নয়কো রক্ত রঙিন ধান
ক) ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতাটি কামাল চৌধুরীর কোন গ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে?
উত্তর : ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতাটি কামাল চৌধুরীরর ‘কবিতা সংগ্রহ’ গ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে।
খ) ‘অসুর নৃত্য—ঠাঠা হাসি ফিরিয়ে দিয়েছি’—বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘অসুর নৃত্য—ঠাঠা হাসি ফিরিয়ে দিয়েছি’—বলতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দানবীয় ধ্বংসলীলা প্রতিহত করাকে বোঝানো হয়েছে।
কবি কামাল চৌধুরী তাঁর ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বলেছেন যে, ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ রাত থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিরা এ দেশের মানুষের ওপর দানবীয় আক্রমণ চালিয়েছে। হিন্দু পুরাণ মতে, অসুর হলো দেবতাদের শত্রু আর অসুর নৃত্য হলো দানবদের নৃত্য। পাকিস্তানি হানাদাররা বাংলাদেশে অসুরের মতো তাণ্ডবলীলা, ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছিল। কিন্তু বাংলা মায়ের সাহসী সন্তানরা মাত্র নয় মাসে শত্রুর সেই আসুরিক আচরণ, বিকট উল্লাস আর নৃশংসতার জবাব দিয়েছে।
গ) উদ্দীপক (১)-এ ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার কোন দিকটি উন্মোচিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : উদ্দীপকে ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার পাকিস্তানিদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে।
‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বলা হয়েছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ রাত থেকে এ দেশের মানুষের ওপর দানবীয় আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বাঙালির রক্তে তাদের হাত রঞ্জিত করেছিল। তারা ভেবেছিল অনার্য খর্বদেহী, ভীরু, ভেতো বাঙালিকে সহজেই অস্ত্রে ঘায়েল করা যাবে। কিন্তু তাদের সেই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে বাঙালি জাতি শত্রুর বিরুদ্ধে মহা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৫২ সালে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে এই বাঙালি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের সেই সুমহান প্রেরণায় আবার ’৭১ সালেও তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। বাংলা মায়ের সাহসী সন্তান ’৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধারা রূপকথার রাজকুমারদের মতো দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য দীর্ঘদিন রাত জেগে গ্রামে-গঞ্জে, বুড়িগঙ্গা-পদ্মা নদীতীরে পাকিস্তানি শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
উদ্দীপকেও বলা হয়েছে, সশস্ত্র শত্রুসেনারা এ দেশের নারী-শিশু-তরুণ-বৃদ্ধ সবাইকে নির্বিচারে যখন হত্যার অভিযানে মেতে উঠেছিল, তখন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। উদ্দীপকের এই দিকটি ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতার উপর্যুক্ত বক্তব্যে উন্মোচিত হয়েছে।
ঘ) ‘উদ্দীপক ১ ও ২-এ ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বাঙালির সংগ্রামী চেতনার সম্পূর্ণ পরিচয় মূর্ত হয়েছে’—তোমার মন্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর : বাঙালি জাতি তাদের শৌর্যের মহিমায় স্বাধীনতাকে যে জয় করে নেয়, উদ্দীপক ১ ও ২-এ ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বাঙালির সেই সংগ্রামী চেতনার সম্পূর্ণ পরিচয়ই মূর্ত হয়েছে।
‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বলা হয়েছে, বাঙালিরা ভীরু, দুর্বল বা কাপুরুষ নয়; বরং বীরের জাতি। বাঙালির বীরত্ব আর শৌর্যের ইতিহাস সুদীর্ঘ, সেই ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের সুমহান প্রেরণার পথ ধরে বাঙালি জাতি এগিয়ে এসেছে মুক্তির পথে, স্বাধীনতার পথে। ’৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য যেমন যুদ্ধ করে নির্ঘুম রাত্রি কাটিয়েছেন, তেমনি বাঙালি কবিরাও তাঁদের কবিতার মাধ্যমে প্রতিরোধ ও মুক্তির কথা বলেছেন। মাত্র নয় মাসেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার পাকিস্তানিদের আসুরিক আচরণ, বিকট উল্লাস থামিয়ে তাদের সম্পূর্ণভাবে পরাভূত করতে সক্ষম হয়। দীর্ঘ নয় মাস এ দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ পাকিস্তানিদের আক্রমণের ফলে ভিটামাটি ছাড়া হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে বাধ্য হন। কিন্তু সেই অবস্থায়ই তাঁরা গড়ে তোলেন প্রবল প্রতিরোধ। একসময় শত্রুকে পরাজিত করে মাথা উঁচু করে তাঁরা স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
উদ্দীপক ১ ও ২-এও পাকিস্তানিদের নৃশংসতার বিপরীতে বাঙালির সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
উপর্যুক্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, উদ্দীপক ১ ও ২-এ ‘সাহসী জননী বাংলা’ কবিতায় বাঙালির সংগ্রামী চেতনার সম্পূর্ণ পরিচয় মূর্ত হয়েছে।
মন্তব্য