[সপ্তম শ্রেণির কৃষিশিক্ষা বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ে ‘উকুন’-এর কথা উল্লেখ আছে]
উকুন থির্যাপটেরা (Phthiraptera) বর্গের পাখাহীন বহিঃপরজীবী পোকা। এর তিন হাজারেরও বেশি প্রজাতি আছে। বেশির ভাগ প্রজাতির উকুন সুনির্দিষ্ট প্রাণীর গায়ে এবং অনেক ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট অংশে বাস করে। উকুন আশ্রয়দাতার রক্ত, তেলগ্রন্থির নিঃসৃত তেল, চামড়া ও চামড়ার উপরস্থ ময়লা খেয়ে বাঁচে। পাখির গায়ে সাধারণত দুই থেকে ছয় ধরনের উকুন থাকে। উকুনকে তার আশ্রয়দাতার শরীর থেকে সরিয়ে নিলে সাধারণত বেশি সময় বাঁচে না।
রক্তচোষা উকুনের আক্রমণকে পেডিকুলোসিস বলা হয়। মানুষসহ গরম রক্তবিশিষ্ট যেকোনো স্তন্যপায়ী ও পাখি উকুনে আক্রান্ত হয়। মানবদেহে মাথা, শরীর ও পিউবিক অঞ্চলে তিন প্রজাতির উকুন আক্রমণ করে। মাথার উকুনের বৈজ্ঞানিক নাম Pediculus humanus capitis। পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি উকুনে আক্রান্ত হন। সাধারণত মাথা অপরিষ্কার থাকলে, ভেজা চুল অনেকক্ষণ বাঁধা থাকলে, অন্যের চিরুনি, গামছা ব্যবহার ইত্যাদি কারণে চুলে উকুন হতে পারে।
আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের মাথায় ঘন চুল থাকে বলে খুব কমই উকুন থাকতে পারে। মাথার উকুন সরাসরি স্পর্শের মাধ্যমে একজনের মাথা থেকে আরেকজনের মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। শরীরের উকুনের বৈজ্ঞানিক নাম Pediculus humanus humanus। এরা কাপড়চোপড়ে ডিম পাড়ে। পিউবিক উকুন যৌন-কেশ বা পিউবিক চুলে থাকে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Pthirus pubis। এরা সারা জীবন মানবদেহেই থাকে এবং শুধু রক্ত খেয়ে বাঁচে।
উকুনের ডিমকে নিট বলা হয়; যা থেকে একটি নিম্ফ বা বাচ্চা জন্মে। পরে সেটা পূর্ণ বয়স্ক উকুনে পরিণত হয়।
উকুন প্রতি রাতে এক বা একাধিকবার খাদ্য গ্রহণ করে। সূচের মতো মুখোপাঙ্গ ব্যবহার করে তারা মানুষের মাথার চামড়া ছিদ্র করে রক্ত খেয়ে থাকে। সে সময় তাদের লালা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এতে চুলকানি সৃষ্টি হয়। বেশি চুলকালে আক্রান্ত স্থানে ঘা হতে পারে, যা পরে জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। এ ছাড়া উকুন লাউস-বর্ন-টাইফাস, লাউস-বর্ন-রিল্যাপসিং ফিভার ও ট্রেঞ্চ ফিভার রোগের জন্য দায়ী।
ঘন চিরুনি দিয়ে নিয়মিত মাথা আঁচড়ালে চুলের উকুন কমে। এ ছাড়া মাথায় নিমের তেল বা উকুননাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করলেও বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল
মন্তব্য