<p>টেরাকোটা একটি লাতিন শব্দ। ‘টেরা’ অর্থ মাটি, আর ‘কোটা’ অর্থ পোড়ানো। শাব্দিক অর্থে পোড়ামাটির তৈরি সব ধরনের দ্রব্য টেরাকোটা হলেও আমরা মূলত পোড়ামাটির ফলককেই টেরাকোটা বলি, যার ওপর খোদাই করে বা পেস্ট করে বিভিন্ন রকম অবয়ব বা নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। ভারতবর্ষের সিন্ধু নদীর তীরে খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ হাজার বছর বা তার আগে বিকশিত সিন্ধুসভ্যতায় প্রচুর টেরাকোটার নিদর্শন পাওয়া যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০ অব্দের দিকে বাংলাদেশের ওয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে বিকশিত সভ্যতায়ও এজাতীয় টেরাকোটার নমুনা পাওয়া গেছে।</p> <p>টেরাকোটা তৈরিতে প্রথমে আঠালো মাটির সঙ্গে খড়কুটো, তুষ মিশিয়ে কাদামাটি প্রস্তুত করা হয়। এরপর ফলকে বসিয়ে খোদাই করে বা পেস্ট করে বিভিন্ন অবয়ব বা নকশা তৈরি করে রোদে শুকাতে হয়। কাদামাটি রোদে শুকিয়ে কিছুটা শক্ত হলে আগুনে পোড়ানো হয়। এভাবেই তৈরি হয় এক একটি টেরাকোটা। </p> <p>চতুর্দশ শতাব্দীর প্রাক্কালে ইউরোপ ও কলম্বিয়ান জনগোষ্ঠীর কাছে টেরাকোটা শুধু সিরামিক হিসেবেই পরিচিত ছিল। প্রাচীনকালে এই পদ্ধতিতে নানা ধরনের পাত্র, তাবিজ, ইট তৈরি করা হতো। যখন মহেঞ্জোদারো (খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০-১৫০০) নগর-বসতি আবিষ্কৃত হয়, তখন ওখান থেকে নারীদেহ অঙ্কিত কিছু পোড়ামাটির ফলক খুঁজে পান খননকারীরা। বাংলাদেশের দিনাজপুরে অবস্থিত কান্তজির মন্দিরে টেরাকোটার অসংখ্য নিদর্শন পাওয়া গেছে। ১৮ শতকে নির্মিত একটি অনবদ্য স্থাপনা এই কান্তজিউ মন্দির বা কান্তজির মন্দির। মন্দিরটি বাংলাদেশের টেরাকোটাশিল্পের অনন্য নিদর্শন। এই মন্দিরের বিশেষত্ব, পুরো মন্দিরটি প্রায় ১৫ হাজার টেরাকোটার টালি দিয়ে মোড়ানো। মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় ১৭২২ সালে মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু করেন। মন্দিরের গায়ে লাগানো টেরাকোটায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনি। টেরাকোটা ফলকে বয়ান করা হয়েছে মহাভারত ও রামায়ণের কাহিনি। পাথরের ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো মন্দিরটির উচ্চতা ৫০ ফুটেরও বেশি। মন্দিরটি ইন্দো-পারস্য ভাস্করশৈলীতে নির্মিত। এ মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের পূজা হয়।</p> <p>কান্তজির মন্দির ছাড়াও বাংলাদেশের অনেক মন্দিরের গাত্র অলংকরণের জন্য টেরাকোটা ব্যবহার করা হয়েছে। একটা সময় মন্দিরের দেয়ালে টেরাকোটাকে অপরিহার্য উপাদান হিসেবে ধরা হতো। একইভাবে বেশকিছু মসজিদেও টেরাকোটার নিদর্শন পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে টেরাকোটার কাজ রয়েছে। এর মধ্যে মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, বৌদ্ধস্তূপ, শালবন বিহার, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ অন্যতম।</p> <p><strong>ইন্দ্রজিৎ</strong> <strong>মণ্ডল</strong></p>