<p>উটপাখি এক প্রকার বৃহৎ পাখি। এরা উড়তে পারে না। তবে ভূমিতে পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত ও দীর্ঘ সময় দৌড়াতে পারে। এদের দৌড়ের গতি ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটারের মতো। উটের মতো দেখতে বলে এই পাখির নাম উটপাখি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Struthio camelus. এরা স্ট্রুথিও গণের স্ট্রুথিওনিডি পরিবারের অন্তর্গত। আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির দক্ষিণের তৃণভূমির প্রায় ৯৯ লাখ ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এদের আবাস। উটপাখির গড় উচ্চতা প্রায় তিন মিটার, দেহের ওজন ১৫০ কেজিরও বেশি হতে পারে। এদের আছে বিশাল দুটি পাখা। পুরোটা মেলে ধরলে এর দৈর্ঘ্য হয় প্রায় সাত ফুট। পুরুষ উটপাখির পাখার রং কালো হয়, এর সঙ্গে থাকে সাদা লেজ। স্ত্রী উটপাখির পাখার রং ধূসর বাদামি।</p> <p>উটপাখির প্রধান খাদ্য বিভিন্ন শস্যদানা। এরা পোকা-মাকড়ও খেয়ে থাকে। এদের দাঁত নেই। তাই খাওয়ার সময় এরা কিছু পাথর খেয়ে নেয়। এই পাথর এদের পাকস্থলীতে খাদ্যদানা হজম করতে পেষার কাজটি করে। একটি পূর্ণাঙ্গ উটপাখি এক কেজি পাথর খেয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে। উটপাখির আকৃতির মতোই এর ডিমও অনেক বড়। একেকটা ডিমের ওজন হয়ে থাকে ১.৫ কেজি, যা অন্য কোনো পাখি বা প্রাণীর ডিমের চেয়ে বড়। এই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে সময় লাগে ৩৫ থেকে ৪০ দিন। দেখতে অনেক বড়সড় হলেও উটপাখি মোটেও হিংস্র স্বভাবের না।</p> <p>বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশের চিড়িয়াখানায় উটপাখি দেখতে পাওয়া যায়। ভীষণ জোরে ছুটতে পারার ক্ষমতার জন্য এদের দৌড় প্রতিযোগিতাও হয়। এই প্রতিযোগিতা দর্শনার্থীদের কাছে হয়ে ওঠে দারুণ আনন্দময়।</p> <p>উটপাখির মাংস বেশ পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। চামড়া, গোশত, ডিম ও পালকের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, ইসরায়েল, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বেড়ে চলছে উটপাখির খামার। বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে উটপাখির পালন। ১০ থেকে ১২ মাসের একটি উটপাখির ওজন হয় ৯০ কেজি পর্যন্ত। সাধারণত এরা আড়াই থেকে তিন বছর বয়সে ডিম দেওয়া শুরু করে। একটি উটপাখি বছরে প্রায় ৫০ থেকে ৭০টি ডিম দেয়, যা থেকে কমপক্ষে ৫০টি বাচ্চা পাওয়া সম্ভব। উটপাখি ৫০ থেকে ৭০ বছর উৎপাদনক্ষম থাকে এবং এরা ৮০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।</p> <p><strong>ইন্দ্রজিৎ</strong> <strong>মণ্ডল</strong></p>