<p>[ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের ১০ নম্বর লেসনে সোমেশ্বরী নদীর কথা উল্লেখ আছে]</p> <p>সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসা ৫৮টি নদীর একটি সোমেশ্বরী। নদীটি ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড়ে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় প্রবেশ করেছে। নেত্রকোনার দুর্গাপুরে এসে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। একটি সোজা দক্ষিণে গিয়ে কংস নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে; অন্যটি পূর্ব দিকে উপদাখালী নদীতে পড়েছে।</p> <p>সোমেশ্বরী আগে ‘সমসাঙ্গ’ নামে পরিচিত ছিল। জনশ্রুতি রয়েছে, এই এলাকার রাজা বাইশা গারো খুবই অত্যাচারী ছিল। গরিব ধীবররা পর্যন্ত রেহাই পেত না তার হাত থেকে। ১২৮০ খ্রিস্টাব্দে সোমেশ্বর পাঠক নামের এক সাধুপুরুষ এখানে আসেন। বাইশা গারোর অত্যাচার থেকে  ধীবরদের রক্ষা করেন। প্রতিষ্ঠা করেন সুসং রাজ্য। সেই রাজ্যের প্রথম শাসক সোমেশ্বরের নাম থেকেই নদীর নাম সোমেশ্বরী।</p> <p>নদীটির দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১১৪ মিটার। সোমেশ্বরীর পানি অতি স্বচ্ছ ও ঠাণ্ডা। ঝরনার পানি হওয়ায় এমন বৈশিষ্ট্য। এই পানিতে ছুটে চলে নানা প্রজাতির মাছ। নদীর বালুতে পাওয়া যায় ঝিনুক, নুড়িপাথর ও কয়লা। নদী পারাপার, মাছ ধরা, বালু, কয়লা ও পাথর উত্তোলন নদীপারের মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস।</p> <p>সাধারণত কয়লা উত্তোলন করা হয় বর্ষাকালে। জীবনের তাগিদে কিছু মানুষ সারা বছরই কয়লার খোঁজ করে নদীতীরে। বর্ষায় একজন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪০ কেজি কয়লা সংগ্রহ করতে পারে। বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের জন্য উত্কৃষ্ট মানের বালু দেশব্যাপী ছড়িয়ে যায় এই সোমেশ্বরী নদীতীর থেকেই।</p> <p>এখানকার মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নৌকা। এখানে যে নৌকায় নদী পারাপার করা হয় তা ছোটখাটো একটা ফেরির মতো। মানুষ, পশুসহ দুই চাকার যানও পার হতে পারে।</p> <p>বর্ষায় সোমেশ্বরীর পানিপ্রবাহ থাকে বেশি। শীতে ধারণ করে ভিন্ন রূপ। তখন যৌবন হারিয়ে প্রায় মরা নদীর রূপ নেয় সোমেশ্বরী। এই নদীর ওপারেই ভারতের পাহাড়। পুরো পাহাড়ই সবুজের চাদরে ঢাকা। নদীর দুই পারে ছোট বালুচর। মাঝখানে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও তারও কম। নদীর পানির রং অনেকটা নীল। মূলত আকাশের নীলের সঙ্গে মিলেছে বলে পানির রং এমন। প্রতিবছর অনেক মানুষ ভিড় করে এই নদীর সৌন্দর্য দেখতে।</p> <p style="text-align: right;"><strong> আব্দুর রাজ্জাক</strong></p>