<p>  <p><strong>কুলি-মজুর</strong></p> </p> <p><strong>কাজী নজরুল ইসলাম</strong></p> <p><strong>উদ্দীপক :</strong> বাদশাহ বাবুর একদিন পর্যটকের ছদ্মবেশে দিল্লির রাজপথে ভ্রমণ করছিলেন। সে সময় একটা পাগলা হাতি রাজপথে চলে আসে। ভয়ে পথচারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় রাজপথে একটি শিশুকে ফেলে যায়। হাতির পায়ের চাপে শিশুটির মৃত্যু হতে পারে জেনেও নিজেদের প্রাণের ভয়ে কেউ শিশুটিকে উদ্ধার করে না। তখন বাদশাহ বাবুর নিজের জীবন বাজি রেখে শিশুটিকে উদ্ধার করেন। পথচারীদের মধ্যে একজন শিশুটিকে মেথরের ছেলে বলে চিনতে পারে। তাই পর্যটকবেশী বাবুরকে অনুরোধ করে শিশুটিকে ফেলে দিয়ে গোসল করে নিতে।</p> <p>ক) ‘নব উত্থান’ — শব্দের অর্থ কী?</p> <p>উত্তর : ‘নব উত্থান’ শব্দের অর্থ হলো কোনো ভালো কাজের জন্য নতুন করে উদ্যোগী হওয়া।</p> <p>খ) কুলি-মজুরদের দধীচি মুনির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে কেন? ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : কুলি-মজুরের মতো শ্রমজীবী মানুষের হাতেই মানবসভ্যতা গড়ে উঠেছে বলে তাদের দধীচি মুনির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।</p> <p>‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন যে, মানবসভ্যতার প্রকৃত রূপকার কুলি-মজুরের মতো লক্ষকোটি শ্রমজীবী মানুষ। তাদের শ্রমের ওপর ভর করে যাঁরা ধনী হয়েছেন, তাঁরাই সব সুবিধাভোগী আর সভ্যতার বিনির্মাতা কুলি-মজুরের মতো মানুষ আজ অবহেলিত। কবি তাই দুঃখ করে ত্যাগী দধীচির সঙ্গে ত্যাগী কুলি-মজুরের তুলনা করেছেন। দধীচি মুনি অসুরদের বধের জন্য যেমন তাঁর দেহের হাড় উৎসর্গ করেছিলেন, তেমনি এই শ্রমজীবী মানুষেরাও শ্রম দিয়ে মানবসভ্যতা নির্মাণ করেছেন।</p> <p>গ) উদ্দীপকের পথচারীর মানসিকতা ‘কুলি-মজুর’ কবিতার কার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : উদ্দীপকের পথচারীর মানসিকতা ‘কুলি-মজুর’ কবিতার ধনিক শ্রেণির প্রতিনিধি বাবু সাহেবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।</p> <p>‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কবি বলেছেন যে, যুগ যুগ ধরে কুলি-মজুরের মতো লক্ষকোটি শ্রমজীবী মানুষের হাতে গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতা। এদেরই অক্লান্ত শ্রমে ও ঘামে রাজপথে মোটর, রেলপথে রেলগাড়ি ও সাগরে জাহাজ চলছে। গড়ে উঠেছে দালানকোঠা, কলকারখানা। এদের শোষণ করে ধনিক শ্রেণি হয়েছে বিত্ত-সম্পদের মালিক; কিন্তু যুগ যুগ ধরে সমাজে এই কুলি-মজুররাই সবচেয়ে বঞ্চিত ও উপেক্ষিত।</p> <p>আর তাই তাদেরই প্রতিনিধিকে শুধু ‘কুলি’ হওয়ার কারণে এক বাবুসাহেব তাকে রেলগাড়ি থেকে ঠেলে নিচে ফেলে দেন।</p> <p>উদ্দীপকের বাদশাহ্; বাবুুর নিজের জীবন বাজি রেখে পাগলা হাতির কবল থেকে এক শিশুকে উদ্ধার করলে মেথরের ছেলে বলে এক পথচারী শিশুটিকে ফেলে দিয়ে বাবুরকে গোসল করতে বলে। উদ্দীপকের পথচারীর এই মানসিকতা ‘কুলি-মজুর’ কবিতার ধনিক শ্রেণির প্রতিনিধি বাবুসাহেবের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।</p> <p>ঘ) বাবুরের আচরণে ‘কুলি-মজুর’ কবিতার মূলভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে’—মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।</p> <p>উত্তর : শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগানোই ‘কুলি-মজুর’ কবিতার মূলভাব, যা বাদশাহ বাবুরের আচরণে প্রতিফলিত।</p> <p>‘কুলি-মজুর’ কবিতায় কবি মানবসভ্যতার যথার্থ রূপকার শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের পক্ষে কলম ধরেছেন। অতীত কাল থেকেই এই শ্রমজীবী মানুষের অবদানে মানবসভ্যতা অগ্রসর হয়েছে। অথচ প্রতিদানে তাঁরা পেয়েছেন খুবই অল্প। ধনিক শ্রেণি এদের শোষণ করেই হয়েছে বিত্ত-সম্পদের মালিক। ধনিক শ্রেণির প্রতিনিধি বাবুসাহেবের মতো স্বার্থান্ধ মানুষ এদের শ্রমের বিনিময়ে পাওয়া বিত্ত-সম্পদের সবটুকুই ভোগ করছে অথচ তারা এদের মানুষ হিসেবে গণ্য করতেও নারাজ। তবে সেই শুভদিন আসার আর দেরি নেই, যেদিন ধনিক শ্রেণিকে শ্রমজীবী মানুষকে দীর্ঘদিন ধরে ঠকানোর ঋণ শোধ করতে হবে।</p> <p>উদ্দীপকের বাদশাহ্ বাবুর নিজের জীবন বিপন্ন করে পাগলা হাতির কবল থেকে পথশিশুটিকে উদ্ধার করে মানুষের প্রতি তার মমতা ও ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছেন।</p> <p>উপর্যুক্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বাদশাহ বাবুরের শিশুটির প্রতি মমতা প্রদর্শন মূলত ‘কুলি-মজুর’ কবিতার মূলভাব অর্থাৎ শ্রমজীবী মানুষের প্রতি কবির যে শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা তারই প্রকাশ ঘটেছে।</p>